বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

I like you calm

তার নীরবতাই আমার পছন্দ , যেন মনে হয় আজ সে আসে নি ,
বহুদূরের আমাকে সে শুনতে পায় , আমার কণ্ঠ তাকে স্পর্শ করে না ।
মনে হয় ঘুম তার চোখের পাতায় উড়ে এসে বসেছে :
কোন চুম্বন তার ঠোঁট দুটো কে বেঁধে দিয়েছে ।
এ সবকিছুই আমার আমি দিয়ে পূর্ণ ,
আমার পূর্ণতা থেকে তার আসা ।
সে আমার গভীরে প্রজাপতির স্বপ্নের মতন ,
কোন বিরহ ধ্বনির মতন ।
তার নিশ্চুপ কথাই আমার পছন্দ , যেন সে কোন দূরে ,
আমার মৌনতায় প্রজাপতিদের শব্দের মতন ।
বহুদূরের আমাকে সে শুনতে পায় , আমার কণ্ঠ তার কাছে পৌঁছায় না ।
তাহলে আমাকে বরং নীরব হতে দাও , নিশ্চুপ হতে দাও তার নীরবতায় ।
আমাকে তার নীরবতার সাথে ভাগ করে থাকতে দাও ,
আলোর স্বচ্ছতায় , চক্রের পুণ্যতায় ।
সে রাতের মতন , নীরব , জমাট
তার নীরবতা দূরের নক্ষত্রের মতনই , ধ্রুব
তার নীরবতাই আমার পছন্দ , যেন মনে হয় সে আজ আসে নি :
বহুদূরে , বহুদুঃখে যেন সে আর নেই ।
এমুহূর্ত খানিতে একটুকু কথা , একটুকু হাসি ,
শিহরিত হই আমি তবু ভেবে যে : এমন টা হবার ছিল না ।

মূল কবিতাঃ Me Gustas Cuando Callas ( Pablo Neruda )

বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১৬

গল্পের ফেরিওলা

তিনটি শহরে আমি নারী বন্দনা গেয়েছি ,
কিন্তু ও সব যেন ঘুরেফিরে একই রকম ;
তাই এখন আমি রৌদ্রের গান গাইবো ।

ঠোঁটে করে নিয়ে শব্দের সাথে খেলা হয় তোমার ,
স্বপ্ন , শব্দ - যেন কোন রত্নের মতন ,
প্রাচীন কোন দেবতার অদ্ভুত উচ্চারিত মন্ত্র ,
রাত, কাক কিংবা কোন প্রলুব্ধি নয় ;
আমার এ গানের প্রাণ বরং অন্য কিছুতে ।

সেইসব নারীদের চোখ , স্বপ্ন , ঠোঁট ;
কিন্তু রাত ফুরোবার সাথে সাথে
তাদের কোন স্মৃতিই আমার পথে সঙ্গী হয় না ।
তাদের শরীরে , আমাদের মিলন বিস্মৃতিতে
একটিবারের জন্যে হলেও টুকরো স্মৃতিগুলো
বাতাসে ভেসে আসে , দীর্ঘশ্বাসে বলে , " তুমি ,
তোমার ভাঁজ পড়া চোখ ,
উচ্চকিত হাসি ,
অমন সাহস ( বিদ্রুপিত ) ,
তোমার মতন আরও অনেকের মধ্যে কঠিন তুমি , ঠুনকো তুমি ,
রৌদ্রে বীণা হাতে সেই পুরোনো পথে হেঁটে বেড়ানো তুমি , রইতে ?
রইতে তুমি এইখানে ? "

বছরের কোন ক্বদাচিত দিনে গল্পের ফেরিওলাকে নিয়ে
তাদের নিজেদের মধ্যে কথা হয় :

" গল্পের ফেরিওলা ? " " ও সেই বাগদিয়া বাসী ,
সেই গানওলার কথা বলছ ? "
" হ্যাঁ সেইই , একদিন আমাদের এই পথে গিয়েছিল , "
" ও সেই রসিক যুবকটি "
" কিন্তু আসলে তো সে এইসব ভবঘুরেদেরই একজন , "
" ওগুলো সত্যিই তার নিজের লেখা গান ?
নাকি অন্য কারুর যেগুলো সে প্রায়ই গেয়ে থাকে ? "
" কিন্তু তাই বলে সে সত্যিই তোমাদের শহরেও এসেছিলো , বলছ ? "

" জানি না , ঈশ্বরের ইচ্ছা , হয়ত বা ,
কিন্তু তোমাকে যা বলছি ওর গোপন কথা সেসব যদি প্রকাশ করো
তবে তুমিও ওর মতনই নিঃস্ব হবে - বলে রাখলাম । "

তিনটি শহরে আমি নারী বন্দনা গেয়েছি ।
কিন্তু সেইসব প্রশংসা কথা ঘুরেফিরে একই ।
তাই আমি আজ রৌদ্রের গান গাইবো ।
... উহ ? ... সেই নারীদের প্রায় সবারই চোখ ছিল ধূসর ,
যেন একই রকম , আমি তাই রৌদ্রের গান গাইবো ।

হে সূর্য পুরুষ , পথের-গানে , হাসিতে ,
মেঘে আর বৃষ্টিতে আমার পথ ভরে উঠুক ।
রৌদ্র-কাননে যাবার সে হোক আমার নতুন পথ !

তিনটি শহরে আমি নারী বন্দনা গেয়েছি
সেসব বন্দনা ছিল একই রকম ।

আমি তাই স্বর্গের নীলাভে পাখিদের গান গাইবো ,
সমুদ্র থেকে ঝড়ে পড়া মেঘেদের গান ।

মূল লেখাঃ Cino
Written By: Ezra Pound

বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কীভাবে ? পারলে না !

কীভাবে ?
পারলে না !

অনেক ঝড়ের পরের একটি দিন ।
আলোর কণা , জুড়ে জুড়ে মিশছে ;
আকাশ জোড়া স্বর্ণরেণু ; বাবলার ফুলে বৃষ্টির প্রথম চুমু ।
জানতাম আমরা দুজনেই , এই সপ্তাহের যে কোন একটি দিনেরই হবার কথা ছিল ।
এখন যখন জানিই , তুমি আর নেই ,
তখন দরজায় গিয়ে দাঁড়াই , গলির এমাথা থেকে ওমাথা জুড়ে দেখি
কী নিদারুণ রৌদ্র , মেঘেরা জড়ো হয়েছে দিগন্ত জুড়ে ;
ভাবি আমি : কোন ভাবেই আজকের দিন না হয়ে পারত ?
অন্য ঘরে মহিনের ঘোড়াগুলি গাইছে , টম প্যাক্সটনের ,
" এত চাওয়া নিয়ে কোথা যাই ~ " , খুবই মৃদুমন্দ ,
ঠিক যেন কোন অতীত হেমন্তের মাঠের ধারে বসে
কৃষকের ধান কাটার শব্দের মতন । মৃদুমন্দ ।
ঘাসের বুকে শুয়ে থাকি ,
তারপর আজ খুব সকালে হয়ত হাঁটতে হাঁটতে , অন্ধকারে
এইসব ক্রমাগত সাফল্য আর নারকোটিকের ব্যর্থতায়
নিজেকে সম্পূর্ণ ক্লান্ত করে খুঁজে পেতে ।
রোজ বছরের যন্ত্রণা আর হতাশা হয়ত নারকোটিকের বিবর্ণ আস্বাদনে
ক্ষণিক স্বস্তি গড়ে নিত ।
এখন প্রথম আলোয় দেখা এ পৃথিবীকে , যেই পৃথিবীকে ভালোবেসেছিলাম
দেখতে পাই , এভাবে চলে যাওয়ায় , না থাকায় ক্ষতি কিছু নেই ।
এবং আমার প্রস্থানে প্রিয়তম মানুষ কে রেখে আসি একটি স্বর্গের দিনে ।
তারপর সূর্যের কাছে এসে নিজেকে কি একটু হারিয়ে ফেলি ?
কীভাবে ভালো না থাকতে পারি ,
এই শেষ কটি দিনে যখন আমার প্রাণের সবখানি কথা তাকে বলা হয়ে গেছে ,
সেও প্রাণের সব কথা গিয়েছিলো বলে , এবং আমার নীরবতায় কোন শব্দ
বাকি ছিল বলে তার ভুল হয় নি ।
কীভাবে নিজেকে না হারিয়ে থাকতে পারি সেইসব দিনে
যখন সে ঠিক আমার পাশে , তার বাহু আমার সমস্তটা জুড়ে ,
ঠিক যেমন ছিল , যেন এমনটাকেই সমস্ত জীবন বলে মনে হয়েছিল ?
কিভাবে একবার আমার চিবুক তার চিবুক কে না ছুঁয়ে থাকতে পারত !
কিভাবে না পারতাম ! যখন জানলা জুড়ে সবটুকু আলো ,
আমাকে ঘিরে ও , এবং কেবলই দূরের একটা সিঙ্গেল ইঞ্জিনের প্লেনের শব্দ ,
এতটাই দূরত্বে যা কেউ শুনতে পায় না ?

মূল কবিতাঃ How Could You Not
Written By: Galway Kinnell
For: Jane Kenyon

[ কেনো পারলে না তুমি পাগল হতে আমার সাথে অমন কোরে ? ]

শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৬

মুক্ত মানুষ আর সমুদ্রের কথা

মূল কবিতাঃ L'Homme et la mer - Charles Baudelaire

মুক্ত মানুষ ! সমুদ্র তোমার কত কাছের !
জল তোমার আয়না , তোমার মনের নিকটের
অন্তহীন উন্মত্তে তার ঢেউ ,
তার মনে যে দাগ সে কি কম কাছে ?

জলমগ্ন গভীরতার অতলে তোমার যে ছবি ;
তবু চোখে আর আলিঙ্গনের যে ভাষা ,
তোমার গভীর যে ভাষা সেও কিনা কখনো কখনো
ঢেকে যাবে আদিম সেই অপরাহত গভীর শোকে ।

তুমি এবং সেই তুমি , আঁধারে , গোপনে এবং গভীরে  :
তবু , তোমার সেই অতলে আজও কেউ পৌঁছায়নি ,
হে সমুদ্র , কেউ জানেনি সেই গভীর সম্পদ কে ,
ঈর্ষান্বিত তোমরা দুজনেই সেই গভীরতাকে অতলে রাখতে !

তারপর অশেষ সময়ের পথে হেঁটে ,
অকরুণ , নির্দয় সে লড়াই ,
অজেয় পাওয়ার শেষে যার আনন্দ :
আহ মুক্ত মানুষ ! ধ্রুব হোক তোমার শত্রুতা ! 

বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৬

ছড়া

পানকৌড়ি আর শিকারীর তাড়ানো মুহূর্ত থেকে আসি , 
হঠাতই আসি 
নিশিন্দা-গুচ্ছে  জোনাকের মতন জ্বলি , 
তারপর উপত্যকা থেকেই ঝড়ে পড়ি । 

ত্রিশ পাহাড় পেরিয়ে আসি , 
কিংবা শৈলতেই  হারিয়ে পড়ি , 
কুড়ি গাঁও বাদে , একটি ছোট্ট শহর , 
আর আধা শতক সাঁকো । 

শেষ পর্যন্ত যেখানে ওর মাঠের ধারে বয়ে চলি 
উদ্বেল নদের সঙ্গিনী হতে ,
যদিওবা সে আসে এবং যেতেও পারে চলে , 
তবু আমি যাই বয়ে । 

এখন পাথরের সাথেই বাজে বকি , 
ধারে আর ত্রিগুণে , 
ঘূর্ণায়ু সমুদ্রে ডুবে মরি , 
আর নুড়িপাথরের সাথ বকবক করি । 

অনেক ঢেউয়ে আমার পাড়ে আমি ক্ষয়ে যাই 
বহু মাঠে আর অনাবাদী জমিতে , 
আর বহু আকাঙ্ক্ষিত অন্তরীপে
শেষাবধি আগাছাই জেগে রয় । 

তাই আজ বয়ে যাই আর কল্লোল করে বাজে বকে যাই ,
উদ্বেল নদের সঙ্গিনী হতে ,
যদিওবা সে আসে এবং যেতেও পারে চলে , 
তবু আমি যাই বয়ে । 

বাতাসের মতই বয়ে যাই , ভেতরে ও বাহিরে , 
এখানের প্রসূত জলযাত্রায় , 
হয়ত বা এক ঝাঁক কইয়ের দল । 

মাঝে আমার শরীরে বিন্দু বিন্দু জলকণা 
যখন আমি পাথরের উপর ঢেউয়ের মতন ভেঙ্গে যাই , 
আর সেই ভেঙ্গে পড়া জলকণাদের সাথে করে চলি  
উদ্বেল নদের সঙ্গিনী হতে ,
যদিওবা সে আসে এবং যেতেও পারে চলে , 
তবু আমি যাই বয়ে । 

ঘাসের ফুলে লুকিয়ে ,
পিপুলের পাতায় আড়াল করে ,
তুলে নিলাম কয়েকটি নীল শেরামণি বা জোনাক ফুল  
যা জন্মেছিল সুখী প্রেমিকদের জন্য । 

আমি আছড়ে পড়ি , ভেঙ্গে পড়ি , বিদগ্ধ হতাশায় তাকিয়ে রই , 
আমার বাহিরে , 
তবু দুহাতে মুঠি মুঠি রৌদ্র বুলিয়ে দিই  
আমার এসমস্ত ক্ষতে । 

এক অদ্ভুত অস্থিরতায় জেগে রাতের নক্ষত্রদের সাথে কথা কই ,
নিজের ভেতরে রাত বাড়ে , 
আর সময়দের সাথে বাড়ে দূরত্ব ।

এবং আবারও আমাদের চিহ্ন এঁকে বয়ে চলি , 
উদ্বেল নদের সঙ্গিনী হতে ,
যদিওবা সে আসে এবং যেতেও পারে চলে , 
তবু আমি যাই বয়ে । 


ভাবানুবাদঃ মূল কবিতাঃ দ্য ব্রুক - আলফ্রেড লর্ড টেনিসন