সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১২

অন্ধকার মন



তুমি জানো কোথায় আমার কষ্ট, আমার দহন !!!
তোমাকে নিজের মাঝে অবাধ মুক্তি দেওয়ার ছলে
আমি ধরা পড়ি আত্মবন্ধনে !!!
তোমাকে অশেষ আলোয় রাখতে গিয়ে
অতীব সহনশীলতায় সূর্যগ্রহণ আর সূর্যাস্ত
ছাড়াই আমার মনে নেমেছে অন্ধকার !!!
পৃথিবী ধ্বংস হয়নি কিন্তু তাই বলে উপগ্রহ
চাঁদেরও গতি হয়নি......
চিরকালীন আদরের উপবাসে থেকে
একদিকে যেমন অমিত কামনা ;
অন্যত্র অদম্য ভুকে রুগ্ন হওয়ার ভয়---
এই দুয়ের মাঝে বিবশ আমি...
ভগ্নাংশ মাত্র অবশিষ্ট আছে...
কিন্তু তাতে পূজা চলে কি ???
...তাই এভাব এসে শেষটায় আমি
ফিরে যাই এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে ঠোঁটে ...
থাকে প্রশ্ন , যার উত্তর নিয়ে আমি হারিয়ে
যাই উত্তরা সমীরণে...হাতের পাঁচ দিয়ে
সমীকরণ মেলানোর সাহস হয় না ...
কারণ আমার অংকের ফল বরাবরই শূন্য !!!
তাই ভেবেছিলাম মানুষের কবিতা লিখব
কিন্তু অন্ধকার মন নিয়ে কিছুই লেখা হল না !!!

এখন যখন



এখন যখন অরণ্যের মর্মর ধ্বনির নিবিড়তা
'সভ্য' মানুষদের স্বল্পচিত্ত লঘু কথায়
আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে
তখন 'আদিম' মানুষদের ভাষাবিহীন
অঙ্গ ভঙ্গিময় কথকতা
উপযুক্ত অরণ্যাশ্রয়ের বিবরে
প্রতিধ্বনিত হতে না পেরে
ধূসর প্রান্তরে বিদেহী বায়ুর মত বয় ......

এখন যখন তপ্ত রৌদ্রের উত্তাপ
'সভ্য' মানুষদের শরীরের পলিমারীয় চামড়ায়
আছড়ে পড়ে নিস্তেজ হয়
তখন 'আদিম' মানুষদের বহুদর্শী কুঞ্চিত
চামড়ার ভাঁজে সযত্নে লালিত অযুত আঁকিবুঁকি
কোন প্রত্যাশিত স্পর্শের প্রতীক্ষায়
রিলিফের শরণার্থীর মত নিষ্পলক
তাকিয়ে রয় অদৃশ্যে ......

এখন যখন কাদামাটির পেলবতাও
'সভ্য' মানুষদের রক্ত-মাংসের শরীর
পেতে চায়
তখন 'আদিম' মানুষদের বহুজীর্ণ অক্ষয় কঙ্কালের
অস্থিগুলো অস্থিবিদদের অস্থির
করতে ব্যর্থ হয়ে নিজেরাই অন্দরে
একে অন্যের সাথে ঠোকাঠুকি খায়
একালের শৈল্পিক ভাবুকতায় ......

এখন যখন বিরাম চিহ্নগুলোর পরিমিতি
'সভ্য' মানুষদের কথার কানাগলিতে
পথ হারায়
তখন 'আদিম' মানুষদের শূন্যে হাতড়ে পাওয়া
মহাকাব্যের পাতাগুলো কোন সানুনয় দৃষ্টির অভাবে
পোকাদের ভুক মেটায় ......

এখন যখন অনেক কিছুই 'সভ্য' হতে চায়
তখন 'আদিম' আমিও
বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে আনা
ঐ ১০৮টি নীল পদ্মের দাবী ছেড়ে
'আদিম' তোমাকে খুঁজে বেড়াই
কোন জাদুঘরে ...!!!

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১২

কুয়াশা



আমার ঘর ভরে গেছে কুয়াশায়
তার বাহিরে মূর্তিমান ভূতুড়ে
ল্যাম্পপোস্টের ন্যায় দাঁড়িয়ে
পাণ্ডুর চাঁদ ফ্যাকাশে আলো বিলায় ।

আমার বহু পৃথিবীর একক সূর্যকে হটিয়ে দিয়ে
আমার যাবতীয় ভাল-মন্দ অর্পণ করা হল
কালো বরফের জমাট অন্ধকারকে ।
সেই অন্ধকার হিমের প্রখর শীতল রাজ্যে
বরফের তীক্ষ্ণ ফলার ছুরি
অহর্নিশ আমার হৃৎপিণ্ডকে
এফোঁড় - ওফোঁড় করে--- অমিত রক্তপাতে
আমার শরীরের উত্তাপ নামে শূন্যের নিচে
আর আমার দুর্বল হৃৎপিণ্ডের একাংশ এক
ভীষণ প্রদাহে ক্রমশ রুগ্ন হয়ে
একটু একটু করে পুড়তে থাকে
পৃথিবীর চির আদিম হোমানলে...
কি আশে সনাতন কু-আশা জাগে
এই অন্ধকার কুয়াশায় !

আর সেই রুগ্ন ভগ্নাংশের ধ্বস দেখে
আমারই মানসনয়ন--- নিমেষমাত্র
সুখস্মৃতির উত্তাপকে জড়িয়ে
আর দ্বিতীয়বার রৌদ্রের ঘ্রাণ নেবার আশায় !

মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১২

ক্ষুধিত পাষাণ



১।ওর অশ্রুপূর্ণ রক্তাক্ত নিষ্প্রাণ শব্দের বুলি
ওই ভীষণ নর্দমাটায় আটকে পড়ে
বেরিয়ে আসতে চায় বারে বারে
কিন্তু তারও অতলে
কিলবিল করা কীটের দল
ওকে টেনে নামায় সেই ভীষণ
বীভৎস অতলে, যেখানে বেঁচে থাকাই
নিয়ত মৃত্যুযন্ত্রণা !!!

নামার আগে একবার ভেসে ওঠা
প্রিয় রুদ্র রৌদ্রের প্রখর নিদাঘে
পিঠটাকে শেষবারের মত তাঁতিয়ে নেওয়া,
মাথার এলোমেলো চুলে হাত দিয়ে
শেষবারের মত উত্তাপ ছুঁয়ে দেখা......
অতঃপর যন্ত্রণা ???
ঠিক ততক্ষণই যতক্ষণ রক্তেভেজা
আর্ত শব্দগুলোর প্রোটোপ্লাজমীয় স্পন্দনকে
পাষাণের ক্ষুধা গিলে না খায়
অতঃপর বিজয়ী (বিশেষ পন্থায় জয়ী) পাষাণ
কেবলি ক্ষয়ে যেতে থাকবে
আজ থেকে অতিদূর বা অদূর
অনিশ্চয়তায় আগত সুনিশ্চিত ভবিষ্যতে
সেই রক্তাক্ত শব্দগুলোর প্রখর ক্ষুরধারে ...!!!

২।সেদিন দেখে এলাম এক ধূসর বায়োস্কোপ
চিত্রায়িত হয়েছে সেখানে ---কী ভীষণ আমোদে
হা'ঘরে হা'ভাতে মৃত- অর্ধমৃত- জীবিত রুগ্ন
শবগুলোর কাঁচা মাংস খুবলে খেয়ে
পুষ্ট হয়েছে কালো শীর্ণ শকুনের দল !!!
আজও কোটি পেটের ক্ষুধা পোড়ে
দুর্ভিক্ষের হুতাশনে অমোঘ অন্ধকার হতাশায়......
পোড়ে মানুষের মাংস ---তার তীব্র ঘ্রাণে
মাতাল হয় নরখাদক বাঘ---
কসাই হয়ে চাপাতির নিচে গোমাংসের বদলে ঠেলে দেয়
এই মৃত- অর্ধমৃত - জীবিত শবগুলোকে!!!
আর তাই কিনে নেয় ক্ষুধার্ত অসুস্থ ভেকের দল ।

এইসব মৃত- অর্ধমৃত - জীবিত রুগ্ন শবগুলো
পড়ে থাকে পথের ধুলোয়
ছোট পাষাণের টুকরোর মত
কখনও খেয়ালিদের লাথিতে ধুলোয় খায় গড়াগড়ি
কখনও বা কেউ ছুড়ে দেয় উপরের দিকে
আর প্রচণ্ড ভরবেগে নেমে আসে পৃথিবীর বুকে
নিদারুণ ধাক্কায় বিদীর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে
চারদিকে রক্তের ছোপ ছিটিয়ে ---
অতঃপর ঢাকা পড়ে দ্রুত ধুলোর স্তরে!!!
এসব পথিক পাষাণের দৃষ্টিতে বহুকাল ধরে
ক্ষুব্ধতা আর প্রাপ্য বঞ্চনার রোমশ ক্ষুধা ,
মিটবে না -- কিছুতেই মিটবে না
কারণ উত্তর মেলেনি একটি প্রশ্নের.
বিজয়ী হয়েছ , কিন্তু নিজের থেকে স্বাধীন কি ???

সোমবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১২

পরিবর্তন




ডানপন্থী , বামপন্থী না মধ্যবর্তী নিস্ক্রিয় দর্শক
তা সুতীক্ষ্ম শুদ্ধরূপে নির্ণীত হবার আগেই
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ও;
পেছনে বিবদমান সমালোচকদের জিজ্ঞাসাসূচক
ভ্রূকুটির তোয়াক্কা না করেই ।

বাইরে বেরিয়ে একবার আড়মোড়া ভেঙ্গে নেয় ও
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকায় পিঠের শিরদাঁড়া বরাবর
একটা সূক্ষ্ম বেদনা অনুভব করে ও
অজস্র বোধগম্য-অবোধ্য তর্কের স্টীম রোলারের
তাণ্ডব লীলা আরও একবার অনুভব করে ও
মস্তিষ্কের কোন এক প্রকোষ্ঠে ।

রাত সাড়ে দশটা, কুয়াশার চাদর ঢেকে দিয়েছে
ওর আপাদমস্তক। মনে পড়ে ওর ''ফিরতে হবে ''
কিন্তু কোথায় ? বোধ করি ''নীড়ে''
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটতে শুরু করে ও ,
ও জানে না এই পথ ওকে আদৌ কোন
নীড়ে নিয়ে যাবে কি!!!

মননের বেলাভূমিতে সূর্যাস্ত লগ্নের
মধ্যবিত্ত অনুভূতিরূপ স্তিমিত তরঙ্গমালার
মৃদুমন্দ আত্মসমর্পণ অনুভব করে ও ......
সাঝবেলায় কল্পনার বাতিঘরে যে ষাট ওয়াটের
বাল্ব জ্বালিয়েছিল ও , পথশেষে আর তাকে
আলোকিত দেখতে পায় না ও ......
কখন যে ফুরিয়ে নিভে গেছে নিজের
উদাসীনতায় দেখতে পায়নি আজ রাতের আগে ......

আর এভাবেই আজ রাতের নীড়ে ফেরা আগামী দিনের
প্রতি রাতের মত অর্থহীনতায় পতিত হল !!!

নিজের ঘরে টেবিলে একটি কালো খামে
একটি চিঠি পায় ও , কোন এক ''নরপশু'' কে লেখা
মৃদু হেসে ড্রয়ার থেকে একই হাতের লেখার নীল খামে
পোরা পূর্বেকার একটি চিঠি বের করে ও ,
লেখা হয়েছিল কোন এক ''দেবতা'' কে......

বিগত রাতেও যেমন ও পুলকিত হয় নি
বিষাদ জাগে না ওর মনে আজ রাতেও......
কেবল একটাই যন্ত্রণা......

যন্ত্র - না হওয়ার যন্ত্রণা ,
যন্ত্রমুক্তির যন্ত্রণা
বোধ করি এখন ও রক্ত মাংসের একটি শরীর !!!

রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১২

অর্বাচীন



লক্ষাধিক অস্তিত্ববান সত্ত্বার ধ্বংসস্তূপে
দাঁড়িয়ে আমি আমারই এক ত্রিমাত্রিক অসদ বিম্ব
ভাল থাকার, ভাল রাখার রীতি আর বিপরীতে
সাদা-কালো দেখা যায় চারপাশ
তবু সব দৃষ্টিবিভ্রমকে বাঁচিয়ে আমি
চাতকের মত খুঁজে বেড়াই অর্বাচীনকে .......
অন্ধকার ঘরের কুলুঙ্গিতে
অনির্বাণ হয়ে উঠার অপেক্ষায়

তেল সমেত প্রদীপের সলতে হয়ত
আজও আর্দ্র অন্ধকারের কান্নায় .......
নিদারুণ হয়ে জ্বলে উঠবার দারুণ লিপ্সায়
গুমরে উঠে আমার আবেগ বিহ্বল
প্রবীণ সত্ত্বার অন্তর্গত ক্রন্দন
কিন্তু আধুনিক অর্বাচীনের উদাসীনতা
আর আদিম প্রবীণের উপেক্ষায় আমি খুঁজে পেলাম
আদিমতা আর আধুনিকতা একই
সুতোর দুটি প্রান্ত আর
তার মাঝে রয়েছে একটি বিশাল শব্দ ---
''''সভ্যতা''''

শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১২

নামহীন কবিতা



প্রভাতের রবির কিরণের মিছিলে
জানালার কালো কাচের বেরিকেড
টেনে দেয় দিবায় নিদ্রাতুর নিশাচর প্রাণী ।
অসূর্যস্পশ্যা হয়ে কংক্রীটের মত ধূসর
হয়ে গেছে ওর বর্ণ , ওর লোহিত
কণিকাগুলো রবিকরণের দুর্দমনীয় তৃষ্ণায়
বহু বছর আগেই রূপান্তরিত মরুর তপ্ত
বালুকাকণায়---
তাতে নিযুত বছরাধিক পরের পলমাত্র
বৃষ্টির জল ওকে ভেজাতে পারে না বরং
নিজেই যায় শুকিয়ে বাষ্প হয়ে ।
ওর বেগময় নিদাঘে ওর আবেগ
লোকচক্ষুর কাছে মরীচিকা হয়ে ধরা দেয়...
তৃষ্ণার্ত পথিক বহুদূর হেটে এসে ধ্বসে পড়ে
ওর নির্মম বক্ষ' পরে । তবু নির্বিকার ও....
গত জন্মের ভুল যে চিতার অনল জ্বেলেছিল
ওর মাঝে, তা যেন অনির্বাণ.....
পরজন্ম হল ওর এক অতিকায় বামন তারা
হয়ে, আপন শক্তিতে দাহ হয়ে একদিন
মৃত্যু নেমে আসবে ওর কেন্দ্রে , কিন্তু ততদিনে
ও ক্রমশ সম্প্রসারণের পরিক্রমায়
চলে গেছে তোমার গ্যালাক্সির বাইরে ......
এসব নেহাতই ওর ভবিষ্যত ...
আর বর্তমান ?

কাঁধে ওর সফলতার হিমালয়
তবু ক্লান্ত ও ; হিমালয়ের জন্য নয় ;
ক্লান্ত ওর নীল মাছরাঙ্গাটিকে হারিয়ে
শারদ প্রভাতে বিচিত্র অবয়ব সাদা মেঘের
রাজ্যে ঘুরে বেড়ায় ও , ওর নীল
পাখিটির খোঁজে.... আর এভাবেই গল্প
বদলে যায়, তবু কেউ দেখে না আর
কেউ বোঝে না ....রক্তের ক্লান্তি ভেসে
যায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সুনিশ্চিত তাড়নায়....

অতঃপর ক্লান্তি নিয়েই আজ বিকেলে
নিজেকে না জানিয়েই ও বের হয়
নিজের ভেতর থেকে , হারিয়ে যায় চারপাশে ,
নীল পাখি বা নীলকণ্ঠের খোঁজে নয় ; সেই
ছোট্ট ঘাসের কুটিরে যেখানে একদিন ওর
বুকে এসে নামবে একটি নীল অপরাজিতা !!!





অস্তিত্বের প্রবচন




''কে তুমি?'' এই দুটো শব্দের প্রশ্ন
হবার সঠিকতা কতটুকু ?
আর তার বিপরীতে তোমার নিজের নাম
বা নিজেকে মানুষ বলাটা উত্তর হিসেবেই
বা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
হয়ত এ প্রশ্নের উত্তর বিলীন
তোমার - আমার অচেতনতায় ............

কিসে অস্তিত্ব তোমার -আমার?
মাতৃজরায়ুতে ভ্রূণীয় পরিস্ফুটনের
সাথে সূচনা হল আমাদের পরাশ্রয়ী
অস্তিত্বের...... বেড়ে উঠলাম একতাল
মাংসপিণ্ডের পুনঃপুনঃ বিভেদনে......
তারপর যেদিন তীব্র আলোর ফোটন কণা
আমাদের তীক্ষ্ণ সংবেদনশীল চোখে
আঘাত হানল, সেদিনই বোধহয়
আমাদের পরনির্ভর অস্তিত্বের সূচনা!!!

আজও পরনির্ভরতায় আমাদের দিন
কাটে , জীবন বাঁচে......
একদিন বলেছিলাম তোমায় এই
অস্তিত্বের সমাপ্তির আগে অন্তত
একবারের জন্য হলেও একটি
মুহূর্ত চাই আমার একান্ত নিজের করে-
যেই মুহূর্তে আমি আমার নিজের থেকেও
স্বাধীন হব, আপনাতে আপনি পরাধীন আমি
এবং তুমিও, তাই সেদিন তোমার সহজীবী
অস্তিত্বের প্রস্তাবের বিপরীতে এনেছিলাম
আমার চাবুকসম তীক্ষ্ণ ধারালো যুক্তি
কিন্তু যুক্তি ভেসে যায়
সময়ের সাথে প্রকৃতির নিয়মে---
গভীর মানবীয় সত্ত্বার অপরিচিত
তাড়নায় ।

আজকের এই মুহূর্তে তোমার -আমার
কথা যা বাস্তব , যা সত্যি আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ
করেছিল, তার অস্তিত্ব কিসে দীর্ঘস্থায়ী হয়?
একদিন এই কথা , এই অস্তিত্বের সংকট
সবই অস্তিত্বহীন হয়ে ধুলোয় মিশে যায়,
তা থকেই আবার জন্ম নেয় নতুন আবেগ-বেগ
নতুন স্বপ্ন আর বাস্তবতার অনির্ণেয়
সীমার অস্তিত্ব .........
আর তা পরিহাস করে আমাদের অতীত
অস্তিত্বকে আর আমরা দুজনই নিত্য
পুরোনো অস্তিত্বের খোলস ঝেড়ে ফেলে
নব অস্তিত্বে আত্মপ্রকাশ করি
ব্যক্ত-গুপ্তরূপে !!!








সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১২

অশুচি অন্তর্মানব



উচ্চকিত কাজল বা উচ্চকিত অহংসমেত
তুমি নারী বা নর যেই হউ না কেন
তোমার তথাকথিত স্ফটিকনিন্দিত – স্বচ্ছসলিল অন্তর্মানবের
কলেবরে আমি দেখেছি আত্মপ্রদর্শনীর উৎকট মোহ 
আর আত্মরক্ষার উগ্র প্রচেষ্টা
তোমার বিক্ষুব্ধতা , রাগ, তর্ক আর রোদনের 
বহু রূপের অন্তরালে আমার চোখে পড়ে 
আত্মসম্মানবোধের ব্যর্থ পোশাক পরানো 
আদিমতা .........

নীলাঞ্জন বা প্রিয়ার জন্য কিনে আনা ‘’নীলা’’ সমেত
তুমি ললনা বা প্রেমিক যেই হউ না কেন
তোমার তথাকথিত প্রেমময় – অনঘ অন্তর্মানবের
কলেবরে আমি দেখেছি কামনার নগ্ন কংকাল
আর ভোগের ভাগাড়
তোমার ভালবাসা , আদর , যুক্তি আর হতাশার
বহু রূপের অন্তরালে আমার চোখে পড়ে
সত্য যুগের সত্য প্রেমের ব্যর্থ পোশাক পরানো
মোহ .........

পরম গতি বা চরম বাস্তববাদ সমেত
যতবড় যুক্তিবাদী বা উপদেষ্টা – যাই তুমি হউ না কেন
তোমার তথাকথিত অতিমাত্রিক আত্মকেন্দ্রিক-স্বার্থপর অন্তর্মানবের
কলেবরে আমি দেখেছি তোমার নিদারুণ একাকীত্বের দারুণ দশা
আর তাকে উপেক্ষার সমরূপ দারুণ বিপরীত দশা
তোমার দৃঢ়তা , কাঠীন্য , নিস্পৃহতা আর অতিবেগুনী কষ্টের
বহু রূপের অন্তরালে আমার চোখে পড়ে
কংক্রীটের ব্যর্থ বোঝা বয়ে বেড়ানো , ভবিষ্যতে
বিলীয়মান এক নগরায়ন আর সভ্যতা ......

পরামাত্রিক অহিংসা বা আত্মনিন্দায় ব্যতিব্যস্ততা সমেত
সিদ্ধার্থ বা গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী যেই হউ না তুমি
তোমার তথাকথিত সহনশীল – ক্ষমাশীল অন্তর্মানবের
কলেবরে আমি দেখেছি আত্মপ্রবঞ্চনার পারলৌকিক
সুখ লাভের অলীক মোহ
আর আত্মমহত্ত্বের ক্ষণস্থায়ী শিশিরে সিক্ত হবার অভিলাষ
তোমার সংযম , ত্যাগ , নিষ্ঠা আর স্বেচ্ছায় ঐশ্বর্যের ন্যায় দুঃখ ভোগের
বহু রূপের অন্তরালে আমার চোখে পড়ে
এক বৃদ্ধ অক্ষম অন্তর্মানব .........

আর অবিশ্বাসী আমার অন্তর্মানবের কলেবরেও
আমি খুঁজে পাইনি ‘’ তাঁকে ‘’
আমি ক্রমশ বেড়ে উঠি আত্মিক বর্জ্যের ক্রমবর্ধমানতায়
স্বেচ্ছাচারিতা , বর্ণবাদ , আত্মপ্রবঞ্চনা , পাপ, রূঢ়তা,
মিথ্যা, ঔদ্ধত্য , চিৎকার, হরণ আর অপ্রিয় বাক্যের
আঘাতে আমি ঢেকে দিয়েছি ‘’ তাঁকে ‘’
আমার অবিমিশ্র অন্তর্মানবকে
আর তাঁর জায়গায় দাঁড় করিয়েছি......
এক অশুচি অন্তর্মানব ।

শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

Labyrinths of Mutual Nothingness


  • মাথার চারপাশে বায়ুর ঘূর্ণি , ধুলো মাথায় দেখছি টেবিলের কোণ থেকে বেরিয়ে আসা আমার ওড়নার লাল-হলুদ সুতো । ও ঘূর্ণিতে উড়ছে কিন্তু উড়ে যেতে পারছে না...... ঘুরছি আমিও কিন্তু বাস্তব বুদ্ধির অভিকর্ষের টানে  উড়ে যেতা পারছি না আমিও...... আমার মাথায় এসে বসেছে অগুণিত পাখি, আসছে , উড়ে যাচ্ছে...... আমার মনে পড়ছে রবি'র সেই খাঁচার পাখি আর বনের পাখি......

  • খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে বনের পাখি ছিল বনে। একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে, কী ছিল বিধাতার মনে। বনের পাখি বলে - 'খাঁচার পাখি ভাই, বনেতে যাই দোঁহে মিলে।' খাঁচার পাখি বলে - 'বনের পাখি আয় খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।' বনের পাখি বলে - 'না, আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।' খাঁচার পাখি বলে - হায়, আমি কেমনে বনে বাহিরিব!'


  • বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি বনের গান ছিল যত, খাঁচার পাখি পড়ে শিখানো বুলি তার - দোঁহার ভাষা দুইমত। বনের পাখি বলে - 'খাঁচার পাখি ভাই, বনের গান গাও দিখি।' খাঁচার পাখি বলে - 'বনের পাখি ভাই, খাঁচার গান লহো শিখি।' বনের পাখি বলে - 'না, আমি শিখানো গান নাহি চাই।' খাঁচার পাখি বলে - 'হায়, আমি কেমনে বনগান গাই।'

  • বনের পাখি বলে - 'আকাশ ঘননীল, কোথাও বাধা নাহি তার।' খাঁচার পাখি বলে - 'খাঁচাটি পরিপাটি কেমন ঢাকা চারি ধার।' বনের পাখি বলে - 'আপনা ছাড়ি দাও মেঘের মাঝে একেবারে।' খাঁচার পাখি বলে - 'নিরালা সুখকোণে বাধিঁয়া রাখো আপনারে।' বনের পাখি বলে - 'না, সেথা কোথায় উড়িবারে পাই!' খাঁচার পাখি বলে - 'হায়, মেঘে কোথা বসিবার ঠাঁই!'

  • এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে তবুও কাছে নাহি পায়। খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে, নীরবে চোখে চোখে চায়। দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে, বুঝাতে নারে আপনায়। দুজনে একা ঝাপটি মরে পাখা কাতরে কহে - 'কাছে আয়!' বনের পাখি বলে - 'না, কবে খাঁচায় রুধি দিব দ্বার।' খাঁচার পাখি বলে - 'হায়,
মোর শকতি নাহি উড়িবার।'
  • তারপর...... আজ রাতে...... দুই পাখি ...... আবার মুখোমুখি......... অতঃপর......
নির্বাক ওরা ছিল না কেউই, তবু কথা বলার আয়োজনযেন বাংলা ব্যাকরণের বিপরীত শব্দ দেওয়া- নেওয়ার ছেলেমানুষী খেলা....... চাওয়া দুজনার, না পাওয়াও দুজনার... তবু ছেড়ে যাওয়া হয় না কোন অজ্ঞাত মোহে...ছোঁয়ার বহু দূরে আমৃত্যু অপ্রাপ্তির খুব নিকটে... জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি কোন মন্থর বৃত্তের গণ্ডিতে বাস দুজনার...প্রাপ্তি কেবলই দীর্ঘশ্বাস আর নীরবতার আমৃত্যু অস্পষ্টতা ...আজও অনেক কিছুই বুঝে অনেক কিছু না বোঝার বোঝা......ওদের মাঝের বৃত্তের গতি মন্থর, তাই বলে গতিহীন নয়...ক্রমমন্দনে গতি শুন্যতায় পৌঁছায়নি বরং প্রাপ্তির শূন্যটা সাম্যবাদে বিন্দুকে ঘিরে জন্ম দিয়ে চলে  আরও না জানার অগণিত বৃত্তকে আর সেই বৃত্তকে ঘিরে ওদের আজও পরিক্রমণ......একে অন্যকে পাবার কাম আজও অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়নি......সেই অঙ্কুরের ভুক মেটায় না জানি কোন রসদ !!!একজন চায় বন্ধনের বিস্তার আরেক জনে চায় বন্ধনের গভীরতা...কিন্তু তাই বলে বন্ধন গভীরতায় বিস্তৃতি পায় না... কেবলই পারস্পরিক শূন্যতার জটিল গোলক ধাঁধাঁয় পরিক্রমণ করেআজ , কাল , পরশু, সপ্তাহ , মাস, বছর, শতাব্দী ......অতঃপর একই রূপ একইকালীন পরিক্রমণে প্রশ্নবিদ্ধ হয় চোখের বালি ??? অভ্যস্ততায় না জানি কোন চাওয়ায় হেসে চোখের বালিকে উড়িয়ে দেয় স্বয়ং প্রশ্নকর্তা বনের পাখি... খাঁচার পাখিটি নীরব তার আপন অসম্পূর্ণতার চিন্তায়... উত্তর সে খুঁজেও পায়...তবু মুখস্থ বুলি ওর , সহজ কথা পায়না বলতে সহজে......অথচ যা ছিল সবচেয়ে সহজ তাই হল সবচেয়ে কঠিনবন্ধন আর মুক্তির সীমাহীন ব্যুৎপত্তিই জন্ম দিল দুজনার মাঝে অতল নীরব সিন্ধুর ; সিন্ধুর ঘোলা জলের অস্পষ্টতাআর কাটে না অথচ স্পষ্টতা ছিল কাম্য দুজনারই তবু পারস্পরিক অক্ষমতার জের ধরে স্পষ্ট হল না কিছুই এবং তারপর ওরা পাখি দুটো আবদ্ধ হল আজ রাতে কেবল পরিচিতের শিরোনামে...... যা আরেকটি বৃত্তের সীমাবদ্ধ গণ্ডি টেনে দিল দুজনার মাঝে......সেই অগণিত বৃত্তকে মাঝখানে রেখে ওরা অপেক্ষায় প্রহর গোণে পারস্পরিক বৈপরীত্যের সেই ছেলেমানুষী খেলায়...আর হাসেন বিধাতা... এই দুই বিহঙ্গীর প্রহসিত প্রতিজ্ঞায়...... 

বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কার্বন ড্রিমস সোনালি মোড়ক – ধূসর বাস্তবতা







ওর অনেক কথা এমনিই-
নেহাতই কালক্ষেপণের জন্য
ও- এই শহরের আমুদে মানুষদের একজন
যারা কথার পিঠে কথা বলে
আফিং এর নেশায় ভোলায় মানুষকে
ওর শ্রোতাদের মস্তিষ্কে ওর ধুলো কথা
ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে ওকে ঘিরে

আর ও চলে হেয়ালিতে ভর করে
ওর খেয়াল আর জিদের রাজত্ব কায়েম করে ।

গতিশীল আধুনিকতার ছাঁচে নিজেকে ঢেলে
আজ ও অন্য কেউ ।
আধুনিকতার সোনালি মোড়কে জড়ানো
ধূসর বাস্তবতা ওকে আলেয়ার আলো’র মতই
তাড়িয়ে বেড়ায়। তবু ক্লান্তি...... অ্যালকোহলের
ঝাঁঝাঁলো তরল নেশা সেই ক্লান্তিকেও
ওর রক্তে মিশিয়ে দেয়, আরও বিষিয়ে
তোলে ওর ফুসফুসকে । কার্বনের ক্ষুদ্র
কণাগুলো ওর হৃৎপিণ্ডের ফাঁকে
আশ্রয় নিয়ে দিয়েছে প্রশস্ততা
ওকে নষ্ট আমোদে আহ্লাদিত হবার ।

কিন্তু ওতো জানে ওর সত্য সত্ত্বা
যা ও নিজের হাতে বিষিয়ে দিয়েছে
তাতে তো শুকতারাকে পাওয়া চলে না,
তাই ও শুকতারার আগে পিছে মিথ্যে
অট্টালিকার জাল বুনে...দেখাতে চায়
শুকতারাকে কার্বন ড্রিমস......
ওর স্বরচিত আকাশের কান্না শুনে শুকতারা
শুধায়, ‘’ আসমান তুই কাঁদিস কেন অট্টালিকা পাহাড়ে ?’’
মুছে দেয় ওর চোখের জল...
তবু শুকতারা নক্ষত্র
কার্বন ড্রিমসের সোনালি মোড়কের
আড়ালের ধূসরতা ওর আলোকে
বেশিদিন ভোলাতে পারেনি,
তাই ঐ দোপেয়ে জীবটির মিথ্যা
হয়ত ওকে আঘাত করে কিন্তু কাঁদায় না ।

তাই মহাকাশের শুকতারা উজ্জ্বল
কারণ ওর স্বপ্ন
আলোকিত মহাবিশ্বের নক্ষত্রে ঘেরা......

মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কার্বন পরী





দুপুরটা আজ ক্লান্ত ছিল না,
ছিল না হাফিয়ে তোলানো গুমোট ভাব
আলসেমিকে প্রশ্রয় না দিতে ো হাতে
তুলে নিয়েছিল মন্থন দণ্ড
তবু এলোকেশে একটু
এলিয়ে পড়ে ও শূণ্য বিছানায়; শিথিল
হাতখানিকে ও ছড়িয়ে দেয় ডানার মত করেই,
তারপর চোখ বুজে আসে ওর, রাত্রি জাগরণের
ক্লান্তিতে নয়
ওর অবচেতন মনের ক্ষণিক ক্ষমতা লাভে।
ভাবে ও ওর পূর্বজন্মের কথা; যখন ও ছিল
কয়লাখনিতে
না, না, কঠিন, চোখধাঁধাঁনো হীরা হয়ে নয়,
আজকেরম মত কয়লার রূপভেদেই জন্ম ওর। সেই জন্মলগ্ন-
যেদিন খনির অন্ধকার থেকে পৃথিবীর আলো দেখেছিল ও
তখন থকে অদ্যাবধি পড়ে আছে ও একটি
তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অন্ধকার সেলারে
অগণিত আরও
কার্বনদের সাথে। ওদের গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে
স্বর্ণ মৃত্তিকার গোল্ডেন ট্যাগ , ওদের মস্তিষ্ক থকে সব আবেগ,
অনুভূতি, কথা কেড়ে নিয়ে গেঁথে দেওয়া হয়েছে একটি লক্ষ্য-
’’নিঃশেষ কর নিজেকে বেগবান সভ্যতার জনক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ‘’
সেই লক্ষ্যর জের ধরে ওর মনে পড়ে কিভাবে গতকাল
ওর মমতাময় কণ্ঠস্বর নির্মম রূঢ় হয়ে উঠেছিল
ওর খাপছাড়া বন্ধুটির প্রতি ......
মনে পড়ে বিগত বসন্তের সব অনুভূতিকে কিভাবে ও নিজে
অট্টহাস্যে
কংক্রীটের দেয়ালা আছড়ে মেরেছে ।
কিন্তু এসবই কি পেরেছে গত কার্তিকের এই দিনে
ওর আকুলতাকে হত্যা করতে ???
চোখ বুজে এসবই ভাবছিল ও
আর
উত্তরটাও পেয়ে যায় ও, না পারেনি -
কারণ ও আত্মসংহারী হবার বহু আগেই
ওর সব আকুল আবেগময় অনুভূতি আশ্রয় নিয়েছিল
ওর অবচেতন বা অচেতন কার্বন পরীর মাঝে ।

সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

বিয়োগ


আশৈশব অভ্যস্ততায় রোজ
সকালে ঘুম থেকে জাগে ও
কিন্তু আজ আরও একবার জাগল ও
নিজের মাঝে; আত্মোপলব্ধির চেয়ে
অধিক নিঃসংগতায় , আত্মচয়নে।
ওর স্থূল তনুর আশ্রমে পালিত
মাংসল হৃৎপিণ্ডের অন্তর্বর্তী করিডোর জুড়ে
গম্ভীর নিঃসংগতার নীরব বচন,
ওকে কাঁদায়ও না, হাসায়ও না-
বরং মাতাল এক তরলে ভাসিয়ে রাখে ওকে ।
ঐ রসে বুদ হয়ে ও নিজেকে
গুটিয়ে নেয় একটি মেকি খোলসে।
বন্ধুত্বের শূন্য করিডোরগুলো দেখে
আজ ওর মনে কোম হাহাকার জাগে না,
বরং ওর দৃষ্টিতে ফুটে উঠে
হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলের দিগন্তবিস্তৃত
ধূ ধূ মাঠের নিঃসঙ্গতা ......
আধো প্রস্ফুটিত প্রণয়ের স্মৃতি,
মাতাল উদ্দামতায় রসাতলের রস আস্বাদনের
তীব্র ক্ষীপ্র সুখ আজ আর ওকে জোঁকের
মত আঁকড়ে নেই । উদ্দাম উচ্ছৃঙ্খল আবেগের
বিহ্বলতায় পরিবার-স্বজন সব বহু আগেই
হুহু করে পেছনের স্টেশনে ফেলে এসেছে ও।
তাই একা রাতের টেবিলে
হাতের’ পরে মাথা রেখে ও হারিয়ে যায়...
আত্মকেন্দ্রিকতার বিবরে......
আশৈশব অভ্যস্ততায় কাল সকালেও
ঘুম ভাঙবে ওর কিন্তু ততক্ষণে ওর
মণিহীন সাদা চোখ থেকে সব কথা,
ভাষা, আবেগ হারিয়ে গিয়েছে ।







রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

দেয়ালে কার ছায়া ?





ওকে আলোকিত করবার জন্য
বৈদ্যুতিক বাল্বের অভাব নেই বাজারে-
সেই আলোয় ও দেখে নিজেকে
না- আয়নায় নয়; ওকে ঘিরে থাকা 
ইট-পাথরের দেয়ালে 
সেই আলো ওকে ভেদ করতে না 
পেরে দেয়ালে ফেলেছে ওর কালো 
একটি ছায়া, কারণ ও অস্বচ্ছ 
ওর অস্বচ্ছ নিরেট কায়া থেকে 
ঠিকরে আসে আলো, আঘাত করে 
আমাদের চোখে-দেয়ালে, 
আর পরিণাম একটিই--ওর 
কালো একটি ছায়া!!!
তাই আজ রাতে সবার অজান্তেই ও 
নেমে পড়েছে অন্ধকারে
ওর চোখ থেকে ঠিকরে পড়ছে কঠিন,
দৃঢ় এক আলো
কিন্তু তার দৃঢ়তা আমাদের চোখে বাঁধা 
কালো কাপড়টি ছিন্ন করার আগেই
ওর পথ খুঁজে নেয়
আজও অজানা......
কৃষ্ণবিবরে





শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

গৃহী – সন্ন্যাসী – তরুণ





আমি বাঙালি
কাগজে-কলমে আর বার মাসের
তের পার্বণের আমোদ উল্লাসে
বাঙ্গালিপনার নাটকীয়তায়...!
আমার মানবীয় অস্তিত্বের বাঙালি সত্ত্বা
মন-প্রাণ সঁপে না হলেও বহু দিবসের মজ্জাগত
ক্রমশ প্রোথিত দুর্বলতা , দাসত্ব আর ক্রমাগত
মূক হয়ে যাওয়া বিবেকের মধ্যস্ততায়
আমার মস্তিষ্ক আমার লেখনীতে আজ
সঁপে দিয়েছে এই কথাটি ---
আমি বাঙালি...

আমার গৃহী মানুষটি তার প্রিয় গৃহস্থের আঙিনা ছেড়ে
আজ ক্রমাগত জড়িয়ে পড়ছে কার্বনের কালো ধোঁয়ার ধূম্রজালে ;
তার ধমনীতে আজ প্রবহমান নীল রক্তশঙ্খনীল কারাগারের
শাঁখের ধ্বনি আজ ফেরারি কালের উদবর্তনে তার হাতে
নীল খামের পরিবর্তে উঠে আসে মুঠোফোন আবাসন
প্রকল্পের লোভনীয় আয়োজনে সে গৃহী হয় আরো
আতিথেয়তায় , স্যাকারিনের লাল রঙের ন্যায় আধুনিকতায়
তার অতিথি আজ দুর্যোগ , দুর্ভোগ যেখানে সাধারণের
মাটির ব্যাংক থেকে এক পয়সা- দুপয়সা বিয়োগ হয়ে
নিযুত অঙ্কে যোগ হয় বিড়াল তপস্বীদের পিগ ব্যাংকে
যেখানে দেবতার ভোগ লোপাট করে পেটপূজা করে
ধর্ম ব্যবসায়ী আর অপ্রতুলতায় অভুক্ত থাকে সেই
আমার পুরানো গৃহপ্রাঙ্গনের এককালের প্রিয় কুকুরটি......
আমার আজকের গৃহী মানুষটির আতিথেয়তার উপকরণ
নির্বাক দুর্বলতা আর অপরিমেয় সহনশীলতা...
আজ আমার গৃহী মানুষটি চুন থেকে পান খসলেই
দুর্বলকে সজোরে চপেটাঘাত করে
...আবার কখনও কোনটা আসলেই বড় ব্যাপার না...
আবার বড় ব্যাপারও বটে তার দ্বিমুখী কথায় নিজেতেই
নিজে প্রতারিত হয় !!!

আমার প্রত্যাশার অহিংস সন্ন্যাসীটি আজও সিদ্ধার্থ হয়ে
উঠতে পারেনি ; একদা তার ব্রত ছিল প্রশান্তির মঙ্গলময় সায়রে
বিচরণের - কিন্তুদশ্চক্রে আজ সে ভূত তাই আজ তার মস্তিষ্ক শূন্য,
দৃষ্টিও, সে দেখেও দেখে না, দেখায়ও না সেই
জটাধারী বটবৃক্ষে আজ ''আট বছর আগের একদিন'' এর
থুড়থুড়ে অন্ধ প্যাঁচার ডেরা থুড়থুড়ে অন্ধ প্যাঁচা চোখ পাল্টায়ে
কয়ঃ ''বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে ?''
আহা, চমৎকার !

আমার তরুণ সত্ত্বা আজও কি রয়ে গেছে সেই জায়গায় ?
আজও দেখি তাদের রক্ত ঝরে স্বেচ্ছাচারীর পদত্যাগের সোপানে।।
কিন্তু কালো কণ্ঠে আজ সেই নন্দিত লোহিত ধারা নিন্দিত
এমনটি তো হবার কথা ছিল না
সোনালি মানচিত্র বক্ষে ধারণকারী বাংলাদেশের মাটিতে

হে, প্রগাঢ় পিতামহী
এত আয়োজনবিহীন আড়ম্বর আর প্রত্যাশাপূর্ণ কথার স্তূপে
কোথায় হারাল তোমার সোনার তরী ???
আজও সূর্যোদয় হয়, সূর্যাস্তও আসে
কিন্তু আমি আবার ফিরে পেতে চাই
তোমার সেই সোনাঝরা কিরণ............



শঙ্খ বাস



আমার নিভৃত সত্বার প্রথম দশা, ছিল
সেখানে মৃত্যুর নীরবতা,
আর সেই সাথে ছিল জীবনের বিভাজন,
জীবনের পরিস্ফুটন এবং পরিশেষে
আমি সুপ্তোত্থিতা

আমার সকালের প্রথম আলোয়
দেখলাম সুনীল আকাশে
কালো মেঘের ঘনঘটা - এক অনাকাঙ্ক্ষিত
পরিবর্তনের অশনি সংকেত আর আমি
অভিযোজিত হলাম
তোমাদের থেকে স্বাতন্ত্র্যে - এক বিচ্ছিন্ন শঙ্খে
নিষ্প্রাণ, নিস্তব্ধ , আবেঘীন কর্মে
আমার না বলা কথার তীব্র
অম্লে জারিত হয়ে
তখন বাহিরে আমার দৃঢ় শুভ্র
শঙ্খ আবরণের ক্রমবিকাশ
কিছু আমার অন্ধকার বরফ যুগের
নিষ্প্রাণ শীতলতাত - আর কিছু তোমাদের
অন্ধ একমুখী কামনায়

তারপর আমাসর পৃথিবীর বার্ষিক
পরিক্রমনে এল নিদাঘকাল
বিদায় নিল সেই আবালবন্ধু
অন্ধকার বরফ যুগ
প্রখর নিদাঘে উদ্ঘাটিত হল শঙ্খের আড়ালে
আমার কমনীয় ক্লেদাক্ত সত্ত্বা......
আর শুনতে পেলে তুমি
আমার স্বনন,
আমাকে মাত্রাহীন অধিকার দিয়েও স্বতন্ত্র
করলে সেই আমার চিরচেনা
শঙ্খ বাসে



অপব্যয়





আমার নাম? জিজ্ঞাসা করো না
জিজ্ঞেস করার প্রশ্ন বা প্রয়োজন কোনটাই
ছিল না কখনও, ভবিষ্যতেও থাকবে না
আর শুধালেও কানে ঠেকে আমাকে করা তোমার
পরিহাসের সুর কিংবা
চোখে পড়ে তোমার বাস্তব বুদ্ধিহীনতা !
না না, আত্মনিগ্রহ এ নয়, এটাই বাস্তবে বাস্তবতা
কারণ নেড়ি কুকুরদের নাম কখনই থাকে না

না না, কোন বক্তৃতা মঞ্চে জাগরূক তথাকথিত
সমাজসেবীর কথার প্রতিধ্বনি আমি করছি না
এ একান্তই আমার নিজের কথা ! যা তোমার
মূল্যবান উন্নত শ্রবণযন্ত্রে শোনায় বিরক্তিকর ''ঘেউ ঘেউ''

তোমাকে দেখে আমার ঈর্ষা হয় না, ভাবছ
যেই পশু সামান্য দুগ্রাস অন্নের জন্য কামড়াকামড়ি
করে মরে, তার কণ্ঠে এ কোন সুর ?
কারণ তুমি মানবরূপী অসুর,
তাই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে
আমায় হয় মরতে কিন্তু তুমি বেঁচে নামতে থাক রসাতলে
তুমি পাও রসের ঘ্রাণ আর আমি পাই
তোমার নষ্ট সত্ত্বার পচা দুর্গন্ধ
রাতের অন্ধকারে তুমি অন্ধ
কিন্তু আমি তখনও দেখি তোমার আত্মার মিথ্যা
অপব্যয়......

এখন, বলবে, আমি খারাপ, তাই দেখছি
কেবল তোমার খারাপটাই
কিন্তু মন্দরা তোমার ভালর টুটি
যে অহর্নিশ চেপে ধরে রেখেছে তা
তোমার চোখে পড়ে নাবরং তুমি এই
ভয়ে থাক ব্যতিব্যস্ত কখন আমি তোমার
টুটি ধরে চেপে

তুমি আসলেই ভীরু, তাই
তোমার দ্বারে অসীমতায় ঘেরা
একটা সীমা পর্যন্তই আমি পারি যেতে,
নোংরার ভয়ে তোমার গৃহলক্ষ্মী আমায় দেয় তাড়িয়ে
আমি আক্ষেপ করি না, কারণ এর বেশি
তোমার মত দুর্বলের কাছে আমি কখনই প্রত্যাশা করি না

শুধু মনে কষ্ট জেগেছিল একদিন , তোমার কোলে
সাদা বিলাতি কুকুরটাকে দেখে ,
কিন্তু সেই কষ্ট আমার নিমেষ মাত্র
কারণ আমি দিকপালবিহীন
রাস্তার নেড়ি কুকুর এক !!!
স্নেহের অপব্যয় তোমার হয়ত সয়
কিন্তু আমার মত কাঙ্গালের সয় না
তাই আমার কষ্ট পাওয়াও হয় না
কষ্ট দেওয়াও হয় না.........

অবশেষে আমি মানব অনুভূতি বর্জিত
রাস্তার নেড়ি কুকুর এক.........!!!
বর্তমানের শাইলক..................



প্রহসন



''কেমন আছ ?'' উত্তরে ''ভাল'' বলেছি আমি বরাবর
''এই'' প্রশ্নের ''এই'' উত্তর দেওয়াটাই ভদ্রতা বলে
জানা ছিল আমার

আজ মধ্যরাতে বসে তাই ভাবছি আসলে
''কেমন আছ ?'' এই প্রশ্নটাই তখন করা হয়নি
আমাকে আমার

তারপর একদিন হঠাত করেই এল রথে চড়ার আহবান,
কল্পনা বিলাসী আমি ; দেখলাম সারথি আমার অর্জুন ;
কিন্তু সেই রথ যে আলেয়ার আলোর পিছু পিছু
আমায় নিয়ে গেল নরকের দ্বারেআর
আমার কণ্ঠ তারই বন্দনা গীত গাইল নীল মোহ ভ্রমে
তখন আমি ঐ বিশেষ প্রশ্নটার উত্তরে বলতে শিখলাম
আমি আছি, এইতো, মোট কথা ভাল নয়

কিন্তু ভাগ্য আমার, মর্ত্যের এক সাধারণ
মহীরূহ ভ্রম ভাঙ্গাল আমার
দেখলাম, স্বেচ্ছায় দুঃখ বরণের মত প্রহসন নেই আর
একটা দিনও শিখলাম না গড়তে,
অথচ মহাকারিগরের সৃষ্টিকে ভাঙ্গার
নির্মম প্রহসনে উঠেছিলাম মেতে

তারপর সেই মহীরূহ ? হতে পারে সে রসাল ;
পারে হতে বিষবৃকশ, কিন্তু আমি মাধবীও নই,
পার্বতীও নই............

মুহূর্ত পরেই আবিষ্কার করলাম
পুনরায় নীল মোহ ভ্রম
আমি উল্লসিত হলাম প্রহসনে
অতঃপর পুরোটাই পূর্ণ তীব্র বিষাদে
মনে হচ্ছিল নরকের কীটগুলো জোঁকের মত আমার
সমস্ত রক্ত নিচ্ছে চুষে, অতঃপর পুনরায় আমি আশ্রয়
নিলাম নিঁদে

তারপর এখন আমি আছি ভীষণ ভাল
কিন্তু আমার আমি জানে এই ভীষণ ভাল আছি এই কথাটি
প্রতিষ্ঠিত করবার জিদের চেয়ে বড়
প্রহসন নেই আর !!!




তুমি শোননি (পর্ব ৩)




পৃথিবীতে এদুটো নিত্য সাধারণ লড়াই-
বহু মানউষের আর বহু মানব - মানবীর,
না, জীবন যুদ্ধ নয় ; নয় ইতিহাসখ্যাত বা
কুখ্যাত কোন রণ একটি তোমার আমার
এবং আরো বহু নবীন মানুষের নিকট ভবিষ্যৎ
সোপানে আরোহণের লড়াই- অপরটি আমার
লড়াই- তোমাকে সর্ব বিধ সোপানে উতরে দেবার
কিন্তু একগুঁয়ে তুমি, হেয়ালি তোমার বসন,
তাই আমার তোমাকে ফিরিয়ে আনার
একটি ডাকও তুমি শোননি

এইতো সেইদিন সকালে , ছিল আমাদের
রণশিক্ষার প্রস্তুতির মহরা, ভেবেছিলাম
তুমি হয়ত প্রতুল নিদ্রায়, তাই তোমার
নিদ্রাভঙ্গের সকল প্রস্তুতি নিয়েই গিয়েছিলাম
তোমার দ্বারে কিন্তু দ্বার তোমার খোলেনি -
কারণ তুমি আমার একতরফা মঙ্গল শোভাযাত্রার
আয়োজঙ্কে ধরে নিয়েছিলে আমার বাতুলতা
তাই আম্র উদ্বিগ্ন ডাক
তুমি সেদিন শুনেও শোননি

তারপর যখন দ্বার খুললে তখন ততোধিক বিস্মিত
আমি তোমার অলীক কাননে ঘুরতে যাবার
হঠকারী আয়োজন দেখে ফিরে আসার
আগে সমর মহরার সকল নির্দেশনা দিয়ে
এলাম বজ্রাহতের মত বাড়ির পথে পা বাড়াতে না বাড়আতেই
শুন্তে পেলাম তোমার দ্বার বন্ধের অধীরতা
আর দেখতে পেলাম বদ্ধ দ্বারের পেছনে
তোমার হাঁফ ছেড়ে বাঁচা

অতঃপর বিষণ্ন আমি , বাড়ির পথে
ছিন্ন পত্রের মত বৃক্ষের পাদদেশে
ধুলায় হায় যাই গড়াগড়ি !!!
আমার সেদিনের দুঃখ বিহ্বল
চিত্তের একটি ডাকও তোমার বদ্ধ দ্বারকে
টলাতে পারেনি

তবুও আমি মিথ্যা প্রতীক্ষায়, স্বপন ও জাগরণে
এই বুঝি তুমি এলে......
এবং তারপর আজ মেঘলা অপরাহ্নে
এলোকেশী আমি, মেঘদূতের অপেক্ষায় ......
কিন্তু হায়! আমার প্রতীক্ষার ডাক মোচনের
আকুল আকুতি
তুমি শোননি
অতঃপর তুমি ''আমাকে '' শোননি