মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

J’ai tant rêvé de toi

[০]
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে তুমি
তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছ
এখনও কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করার
এবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় স্বর জন্ম নেয় সেখানে চুম্বন দেওয়ার ?...

[১]
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে
তোমার ছায়াকে ছুঁতে গেলেই আমার দু' বাহু বুকের মাঝে
আলিঙ্গন পেয়েছে ; অথচ আসল তুমি হলেই সমস্ত বিবশ ।
অসংখ্য দিনে আর বছরে যার তাড়ায় যার ছায়ায় কাটিয়েছি ,
নিশ্চিত আমারও ছায়া হবারই কথা ছিল ।

অনুভূতিদের দাঁড়ি , কমা , প্রশ্নবোধক ?
 
[০]
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে হয়তো
আমার পক্ষে আর জাগাই সম্ভব হবে না
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোই, আমার শরীর সব রকম জীবন ও ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত ...
আমি তোমার ভুরু ছুঁতে পারি, ওষ্ঠ ছুঁতে পারি এত কম ...
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি, হেঁটেছি , কথা বলেছি ।
শুয়েছি তোমার ছায়ার সঙ্গে ...

[১]
যে আমার জন্যে না থাকার মধ্যে আরও না হয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু  নেই !
তোমার সূর্য ঘড়ির 'পরে আসা-যাওয়ার ছায়ার থেকেও আরও গভীর ছায়া হয়ে রই ,
আমি !


[মূল কবিতাঃ  J’ai tant rêvé de toi , Robert Desnos ]
[ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর 'ছবির দেশে কবিতার দেশে ' বইতে কবিতাটির কিছু অংশবিশেষ অনুবাদ করেছিলেন , সেগুলো জোড় চিহ্নিত [০] আছে , আর বাকি যেই অংশটুকুর অনুবাদ করা হয় নি , বিজোড় অংশগুলো [১] সেগুলো করার চেষ্টা করলাম...

রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫

চত্বর

(১)
উড়ে যাওয়া সিগারেটের ধোঁয়ার মতন মিলিয়ে গেছে ,
ঘাসে বসা সবুজ চুড়ির ইচ্ছা
যখন তখন লেগে ভেঙ্গে যাচ্ছিল একেকটা করে লাল চুড়ি
উড়ে যাওয়া পাখিদের মাথায় নিয়ে এক রকম ব্যর্থ জীবন যাপন ।

(২)
সেই ভোরে কুয়াশায় আগুন লেগে গেলো
দাবানলের চাদর গায়ে জড়িয়ে সে এক ভোর দেখতে জেগেছিল ,
পথে বেরুলেই বারবার কিছু দেখার ব্যর্থতা উঠে আসছিল
তাই আর কোনদিন তাদের দেখা হয় নি ।

(৩)
জল ধারে পা ছোঁয়াবার ক্ষণে জিজ্ঞেস করেছি
মনে পড়ে তোমার কথা ? - না তো ,
তবু তোমাকে ভেবেই এ জলে পা ভিজল না ।
ব্যর্থ রোদ্দুর কাঁধ ছুঁল , তবু চুলে উত্তাপ উঠল না ।
তাই ঘরে ফিরে তোমার জলে ভেজা শীতল হাত
আমার তপ্ত কপালে ছোঁয়াবার গল্পটা ঠিক জমল না ।

(৪)
আজ চত্বরে এক মুঠোও লোক নেই ,
তাই পড়ে থাকা বাদামের খোসা তুলি
আর প্রতি হাত দূরে থাকা রৌদ্রকে মেপে ফিরি ,
হঠাৎ বাদামের খোসার মতন হুড়মুড় করে সব মানুষ গুলো গুড়িয়ে গিয়েছে ,
এ চত্বর তাই আজ বড় খাঁ খাঁ  ; আজ বহু আগেই ঘরে ফেরা যেত
কিন্তু চায়ের গল্পে মদের বানান ভুল করে
আজ থেকে রাতে  আমার আর ঘরে ফেরার দরকার নেই ।

শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

Where do we draw the line

হাতের রেখায় হাত রাখতে না পাওয়া কথা
নীরবতার ভাষায় তবু বদলাবে না যে সত্য
তোমার চোখের রুদ্র অন্বেষা খুঁজে পেতে চায় আমায় ,
পথে ?

তবে কখন কীভাবে কে বলে দেবে সে সময়ের কথা -
যখন আমরা অপেক্ষা থেকে সরে দাঁড়াই !

কালকের কথায় কোথায় থাকবো আমি ?
আজকের দেখায় কী আসবে যাবে !
যদি এর কিছুই আমার চাইবার না হয় -
তবে বলো কোথায় আঁকি  আমাদের চিহ্ন ?

রোদের নাচে,  পথের ছায়ায় --- যে কবিতা
কেবল তুমি-আমি ছাড়া  শোনেনি  আর কেউ,
তোমার পায়ের চূড়ায় একাকীত্ব
এখনও যে খাঁচার পাখি ---

তাই সব ভাঙ্গনের আগে ,
ক্ষুধিত ভালোবাসা জন্মানোর আগেই
আমরা বরং অন্য কেউ হই ।

যদি নিজের চাওয়াতেই না পাবো ,
তবে বলো কোথায় আঁকি আমাদের চিহ্ন?
যদি এভাবেই চলবার হয়
তখনও বলো আমায়,  কোথায় এঁকে দিই আমাদের চিহ্ন ?

হারায়েছি আমি সেই সুশীতল বাতাস, চিরসবুজ মাঠ ।
হারিয়ে গেছে মায়ের স্নেহ , বাবার সেই বিস্তীর্ণ হৃদয় ;
যেন হারায়েছি সূর্য কে , বিবর্ণ ভূমিতে ঘুমায় মাথা রেখে ,
হেমন্তের ঝরা পাতার মতন , যার আর কোন দুঃখ হয় না ।

কাল বরং আমাকে যেখানেই রাখুক ,
তবু আজও আমি এখানেই, আমাদের সাথে ;
আজও আমি বিস্তৄত আমাদের চিহ্ন কে চিনে নিতে ,
তাহলে এই হোক আমাদের চিহ্ন-রেখা । 

বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫

আর কখনই ? - না!

কথা-রা ঘুরেফিরে আমার কাছেই ফিরে বারে বারে ,
কী চায় ওরা? শরত এলো বলেই না গায়ক পাখি
শূন্য হাওয়া ছিঁড়ে ফুঁড়ে উড়ে গেলো । রোদ্দুর,
সেই একই  রোদ্দুর উত্তরা বাতাসের গুঞ্জন ভরা
পাণ্ডুর গাছগুলোকে আরও তাপিয়ে দিয়ে যায় ।

আমরা তো ছিলাম একা - আমাদের স্বপ্নে ,
সে এবং আমি, হাওয়া এসে আমাদের চিন্তা- চুল
সব নাড়া দিয়ে গেলো ।
তারপর দ্বিধাস্বরে  জানতে চাইলো,
"তোমার সবচাইতে সুন্দর দিন ? আজ?"

মেঘে ঢাকা রৌদ্রের মতন তার সেই কণ্ঠ,
বিচ্ছিন্ন হেসেই আমি উত্তর দিলাম।
কিছু অনুক্ত অভিভূতি

তবে প্রথম "হ্যাঁ" হোক সেইসব কিছুর জন্যে যা আমরা দুজনেই ভালোবেসেছিলাম ।

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সারারাত কেটে যায় তোর কথা ভেবে

শরৎ যেন বড্ড তাড়াতাড়ি এসে পড়ে ,
রাত্তিরে আমি হেঁটে যাই , একা ,
বৃষ্টিতে উড়িয়ে নেয় , বাতাসে ভিজিয়ে দেয়,
আর তুমি ? আমার বন্ধু তুমি ?

হয়ত তুমি দেখতে পাও পাণ্ডুর চাঁদ
বনের মাথায় ভেসে যেতে ,
হয়ত এখানে খড়ের মাঠে শুয়ে তুমি  
তোমার ঘুমন্ত কপালে ভেজা শিশির জুড়িয়ে আসে যেন ।

হয়ত বা আজ রাতে এখনও তুমি তোমার পথে ,
দূরে , আরও বহুদূরে ,
আপনমনে ক্লান্তিতে নিজের সাথে নিজের কথা বলা ।
হয়ত আমি ভাবছি তোমায় অন্যখানে , অন্যরাতে
শব্দে কিংবা সুর খোঁজার মাঝে !

এবং হয়ত বা তুমি আর নেইই , মৃত ।
তোমার চোখে আর রোদের আলো খেলে না ,
এবং যদি, যদি  আমি তোমায় , বলে দিতে পারতাম
বলা বারণ সে সমস্ত কথা !

কিন্তু তুমি তো আমায় জানো ,
হয়ত তুমি ফিরবে কোন একদিন ,
কোন এক সন্ধ্যার আলোতে হাঁটবে আমার সাথে ।

আর কেউ একজন তার সমস্ত পাগলামি গুলো বলে যাবে
অন্যজন শুনে হাসবে , তখন আর কেউ তাদের ভয় ,
একলা রাত্তিরের কথা ভাববে না আর ।

যেন সেদিন থেকে আমাদের সমস্ত জড়তা আর ভয় টিকবে না ,
 আর ফিরবে না ।

[ ভাবানুবাদঃ Thinking of a friend at night - Herman Hesse ]

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

----

চোখে অনেক দিনের সন্ধ্যে নেমে আসে ; ভেবেছি দেখা হলে বলব , " একটি সন্ধ্যের আকাশ খুঁজে দিও । " অথচ সে আকাশের রং আমার এখনও জানা হয় নি , যে কোন রঙের জন্যে হলেও সে কথা এখনও বলা হয় নি ।
কেবল শব্দে বদলে দিলেই কথার মানে তো কিছু বদলায় নি !
তারপর বহু সন্ধ্যা অবলীলায় এসে আবার যাবে চলে । ট্রিলিয়ন প্রোব্যাবিলিটির একটি অংকের ভুলে হয়ত তাকে জানতে পারা গেল না ।
ফেরার রাস্তায় ভিজে আলোতে সে হয়ত অন্য বাড়ি ফিরবে ।
এরপর এমনি বৃষ্টিজোড়া বিকেল হলে আমি হয়ত আবার সিঁড়িঘরে ধূসর মেঘে দৃষ্টি ভাসিয়ে দিলাম ---- আশায় পায়ের ধ্বনির দিকে কান পেতে থাকি চুপে যদি সে কখনও পিছু এসে দাঁড়ায় ।

সোমবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৫

বিক্ষিপ্ত - ১


কবিতা খুঁজে নিলে তোমায়
এবং হারালে বারেবার
তারপর উঠোনে কথাগাছ বুনে দিলে ,
এরপর থেকে শেষ রাতে আর কোন
পাখি নেমে এলো না ।

কবিতার ফুলে ফুলে ভারী হয়ে উঠেছে কথাগাছ ।
এবার কবিতার সাজিতে তুলে না দিলে
আবার অপেক্ষার পরের বছর ।

এতদিনে অভ্যস্ত হয়ে যাবার কথা ছিল ,
যদি কবিতা না দিলে প্রাণে ।

Labyrinths of mutual Nothingness ( পারস্পরিক অনস্তিত্বের গোলকধাঁধা )


আছে , অথচ কেউই নেই ।
তারপর ... ?


অতঃপর তারা ঠিক করল ছায়াসঙ্গী হবে ,
রোজ মাসে একটি করে তারা জমাবে আর,
ঝুলিয়ে দিবে দুই মানুষের মাঝে চুপ করে থাকা
অসীম আকাশে ।


প্রখর রৌদ্রের জাল বুনে তারা একটি দুটি করে বেঁধে দিলে
তারাগুলি । যেন পুড়ে যাওয়া রৌদ্রের সাথে সাথে নিভে যায়
তারাদের বিগত আবেগ ।

ক্ষণে ক্ষণে তারাদের বুকে জ্বলে উঠতে লাগল রাগ 
আর ছেলেমানুষি কথার ভিতরের ব্যাকস্পেসে
ভারী হয়ে ওঠা হলুদ হলুদ কষ্টে ।
কেবল রৌদ্রের রঙের সাথে মিলে গেল বলে
ওরা কেউ দেখেও দেখলে না ।


কথা রইল , একদিন বড় একঘেয়ে লাগলে তারা
ভাগাভাগি করে নিবে তারাগুলো আধেক করে ।
"
তুই বরং ওই হলুদ তারা টা রেখে দে,
তোর দুঃখু করা স্বভাবের সঙ্গে মানিয়ে যাবে "
মনে মনে , " তাহলে ঐ মাথামোডা তারাটাকেও রেখে দিতে দোষ কি ছিল !"
অথচ তারা কেউ কিছুই বললে না ।
দুজনেই গেলে ফিরে ?

তারপর ...?

একদিন  অনন্ত আকাশের ফাঁক পেয়ে
বাঁশি বেজে উঠত ,
ঐ না-থাকবার গোলকধাঁধায়


এরপরের গল্প টুকুন তারা তাদের মতন করে লিখে নিক ।




মঙ্গলবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৫

জানি দেখা হবে

" প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখেই দেখেছিলাম আমার ? "

কখনও তাকাইনি ঐ চোখে,
লুকিয়েছিস তুইও ঐ চশমার ফ্রেমে ।

তবু একবার ঝিরিঝিরি করে হলুদ রাত নেমেছিল বুকে
মৃদু পাগলামির সুখে আর অন্তঃবর্তী অনুপম শূন্যতায় ।


সুর ছেনে এনেছিলি তুই বহু পথ হাঁটি
আমিও নিয়েছিলাম রোদ  মুঠি মুঠি করি ;
সুরে ভাবি কেবল আর অসুরেতে জড়াই ,
কাটাকাটি করে কেবল নিজেদের ভাঙ্গাই ।


হলুদ কষ্টে - সুখে সে রাত জেগে রয় মনে,
আরেকটিবার আসতে কি পারে ফিরে ?
দেখা হবে কি হবে না ...
আবার এ পৃথিবীর পথে !

ওহে হলুদ জুড়ি,
তখন আবারও কি উড়াবি
তোর ঐ হলদিয়া ঘুড়ি  !?