সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১২

অন্ধকার মন



তুমি জানো কোথায় আমার কষ্ট, আমার দহন !!!
তোমাকে নিজের মাঝে অবাধ মুক্তি দেওয়ার ছলে
আমি ধরা পড়ি আত্মবন্ধনে !!!
তোমাকে অশেষ আলোয় রাখতে গিয়ে
অতীব সহনশীলতায় সূর্যগ্রহণ আর সূর্যাস্ত
ছাড়াই আমার মনে নেমেছে অন্ধকার !!!
পৃথিবী ধ্বংস হয়নি কিন্তু তাই বলে উপগ্রহ
চাঁদেরও গতি হয়নি......
চিরকালীন আদরের উপবাসে থেকে
একদিকে যেমন অমিত কামনা ;
অন্যত্র অদম্য ভুকে রুগ্ন হওয়ার ভয়---
এই দুয়ের মাঝে বিবশ আমি...
ভগ্নাংশ মাত্র অবশিষ্ট আছে...
কিন্তু তাতে পূজা চলে কি ???
...তাই এভাব এসে শেষটায় আমি
ফিরে যাই এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে ঠোঁটে ...
থাকে প্রশ্ন , যার উত্তর নিয়ে আমি হারিয়ে
যাই উত্তরা সমীরণে...হাতের পাঁচ দিয়ে
সমীকরণ মেলানোর সাহস হয় না ...
কারণ আমার অংকের ফল বরাবরই শূন্য !!!
তাই ভেবেছিলাম মানুষের কবিতা লিখব
কিন্তু অন্ধকার মন নিয়ে কিছুই লেখা হল না !!!

এখন যখন



এখন যখন অরণ্যের মর্মর ধ্বনির নিবিড়তা
'সভ্য' মানুষদের স্বল্পচিত্ত লঘু কথায়
আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে
তখন 'আদিম' মানুষদের ভাষাবিহীন
অঙ্গ ভঙ্গিময় কথকতা
উপযুক্ত অরণ্যাশ্রয়ের বিবরে
প্রতিধ্বনিত হতে না পেরে
ধূসর প্রান্তরে বিদেহী বায়ুর মত বয় ......

এখন যখন তপ্ত রৌদ্রের উত্তাপ
'সভ্য' মানুষদের শরীরের পলিমারীয় চামড়ায়
আছড়ে পড়ে নিস্তেজ হয়
তখন 'আদিম' মানুষদের বহুদর্শী কুঞ্চিত
চামড়ার ভাঁজে সযত্নে লালিত অযুত আঁকিবুঁকি
কোন প্রত্যাশিত স্পর্শের প্রতীক্ষায়
রিলিফের শরণার্থীর মত নিষ্পলক
তাকিয়ে রয় অদৃশ্যে ......

এখন যখন কাদামাটির পেলবতাও
'সভ্য' মানুষদের রক্ত-মাংসের শরীর
পেতে চায়
তখন 'আদিম' মানুষদের বহুজীর্ণ অক্ষয় কঙ্কালের
অস্থিগুলো অস্থিবিদদের অস্থির
করতে ব্যর্থ হয়ে নিজেরাই অন্দরে
একে অন্যের সাথে ঠোকাঠুকি খায়
একালের শৈল্পিক ভাবুকতায় ......

এখন যখন বিরাম চিহ্নগুলোর পরিমিতি
'সভ্য' মানুষদের কথার কানাগলিতে
পথ হারায়
তখন 'আদিম' মানুষদের শূন্যে হাতড়ে পাওয়া
মহাকাব্যের পাতাগুলো কোন সানুনয় দৃষ্টির অভাবে
পোকাদের ভুক মেটায় ......

এখন যখন অনেক কিছুই 'সভ্য' হতে চায়
তখন 'আদিম' আমিও
বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে আনা
ঐ ১০৮টি নীল পদ্মের দাবী ছেড়ে
'আদিম' তোমাকে খুঁজে বেড়াই
কোন জাদুঘরে ...!!!

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১২

কুয়াশা



আমার ঘর ভরে গেছে কুয়াশায়
তার বাহিরে মূর্তিমান ভূতুড়ে
ল্যাম্পপোস্টের ন্যায় দাঁড়িয়ে
পাণ্ডুর চাঁদ ফ্যাকাশে আলো বিলায় ।

আমার বহু পৃথিবীর একক সূর্যকে হটিয়ে দিয়ে
আমার যাবতীয় ভাল-মন্দ অর্পণ করা হল
কালো বরফের জমাট অন্ধকারকে ।
সেই অন্ধকার হিমের প্রখর শীতল রাজ্যে
বরফের তীক্ষ্ণ ফলার ছুরি
অহর্নিশ আমার হৃৎপিণ্ডকে
এফোঁড় - ওফোঁড় করে--- অমিত রক্তপাতে
আমার শরীরের উত্তাপ নামে শূন্যের নিচে
আর আমার দুর্বল হৃৎপিণ্ডের একাংশ এক
ভীষণ প্রদাহে ক্রমশ রুগ্ন হয়ে
একটু একটু করে পুড়তে থাকে
পৃথিবীর চির আদিম হোমানলে...
কি আশে সনাতন কু-আশা জাগে
এই অন্ধকার কুয়াশায় !

আর সেই রুগ্ন ভগ্নাংশের ধ্বস দেখে
আমারই মানসনয়ন--- নিমেষমাত্র
সুখস্মৃতির উত্তাপকে জড়িয়ে
আর দ্বিতীয়বার রৌদ্রের ঘ্রাণ নেবার আশায় !

মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১২

ক্ষুধিত পাষাণ



১।ওর অশ্রুপূর্ণ রক্তাক্ত নিষ্প্রাণ শব্দের বুলি
ওই ভীষণ নর্দমাটায় আটকে পড়ে
বেরিয়ে আসতে চায় বারে বারে
কিন্তু তারও অতলে
কিলবিল করা কীটের দল
ওকে টেনে নামায় সেই ভীষণ
বীভৎস অতলে, যেখানে বেঁচে থাকাই
নিয়ত মৃত্যুযন্ত্রণা !!!

নামার আগে একবার ভেসে ওঠা
প্রিয় রুদ্র রৌদ্রের প্রখর নিদাঘে
পিঠটাকে শেষবারের মত তাঁতিয়ে নেওয়া,
মাথার এলোমেলো চুলে হাত দিয়ে
শেষবারের মত উত্তাপ ছুঁয়ে দেখা......
অতঃপর যন্ত্রণা ???
ঠিক ততক্ষণই যতক্ষণ রক্তেভেজা
আর্ত শব্দগুলোর প্রোটোপ্লাজমীয় স্পন্দনকে
পাষাণের ক্ষুধা গিলে না খায়
অতঃপর বিজয়ী (বিশেষ পন্থায় জয়ী) পাষাণ
কেবলি ক্ষয়ে যেতে থাকবে
আজ থেকে অতিদূর বা অদূর
অনিশ্চয়তায় আগত সুনিশ্চিত ভবিষ্যতে
সেই রক্তাক্ত শব্দগুলোর প্রখর ক্ষুরধারে ...!!!

২।সেদিন দেখে এলাম এক ধূসর বায়োস্কোপ
চিত্রায়িত হয়েছে সেখানে ---কী ভীষণ আমোদে
হা'ঘরে হা'ভাতে মৃত- অর্ধমৃত- জীবিত রুগ্ন
শবগুলোর কাঁচা মাংস খুবলে খেয়ে
পুষ্ট হয়েছে কালো শীর্ণ শকুনের দল !!!
আজও কোটি পেটের ক্ষুধা পোড়ে
দুর্ভিক্ষের হুতাশনে অমোঘ অন্ধকার হতাশায়......
পোড়ে মানুষের মাংস ---তার তীব্র ঘ্রাণে
মাতাল হয় নরখাদক বাঘ---
কসাই হয়ে চাপাতির নিচে গোমাংসের বদলে ঠেলে দেয়
এই মৃত- অর্ধমৃত - জীবিত শবগুলোকে!!!
আর তাই কিনে নেয় ক্ষুধার্ত অসুস্থ ভেকের দল ।

এইসব মৃত- অর্ধমৃত - জীবিত রুগ্ন শবগুলো
পড়ে থাকে পথের ধুলোয়
ছোট পাষাণের টুকরোর মত
কখনও খেয়ালিদের লাথিতে ধুলোয় খায় গড়াগড়ি
কখনও বা কেউ ছুড়ে দেয় উপরের দিকে
আর প্রচণ্ড ভরবেগে নেমে আসে পৃথিবীর বুকে
নিদারুণ ধাক্কায় বিদীর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে
চারদিকে রক্তের ছোপ ছিটিয়ে ---
অতঃপর ঢাকা পড়ে দ্রুত ধুলোর স্তরে!!!
এসব পথিক পাষাণের দৃষ্টিতে বহুকাল ধরে
ক্ষুব্ধতা আর প্রাপ্য বঞ্চনার রোমশ ক্ষুধা ,
মিটবে না -- কিছুতেই মিটবে না
কারণ উত্তর মেলেনি একটি প্রশ্নের.
বিজয়ী হয়েছ , কিন্তু নিজের থেকে স্বাধীন কি ???

সোমবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১২

পরিবর্তন




ডানপন্থী , বামপন্থী না মধ্যবর্তী নিস্ক্রিয় দর্শক
তা সুতীক্ষ্ম শুদ্ধরূপে নির্ণীত হবার আগেই
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ও;
পেছনে বিবদমান সমালোচকদের জিজ্ঞাসাসূচক
ভ্রূকুটির তোয়াক্কা না করেই ।

বাইরে বেরিয়ে একবার আড়মোড়া ভেঙ্গে নেয় ও
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকায় পিঠের শিরদাঁড়া বরাবর
একটা সূক্ষ্ম বেদনা অনুভব করে ও
অজস্র বোধগম্য-অবোধ্য তর্কের স্টীম রোলারের
তাণ্ডব লীলা আরও একবার অনুভব করে ও
মস্তিষ্কের কোন এক প্রকোষ্ঠে ।

রাত সাড়ে দশটা, কুয়াশার চাদর ঢেকে দিয়েছে
ওর আপাদমস্তক। মনে পড়ে ওর ''ফিরতে হবে ''
কিন্তু কোথায় ? বোধ করি ''নীড়ে''
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটতে শুরু করে ও ,
ও জানে না এই পথ ওকে আদৌ কোন
নীড়ে নিয়ে যাবে কি!!!

মননের বেলাভূমিতে সূর্যাস্ত লগ্নের
মধ্যবিত্ত অনুভূতিরূপ স্তিমিত তরঙ্গমালার
মৃদুমন্দ আত্মসমর্পণ অনুভব করে ও ......
সাঝবেলায় কল্পনার বাতিঘরে যে ষাট ওয়াটের
বাল্ব জ্বালিয়েছিল ও , পথশেষে আর তাকে
আলোকিত দেখতে পায় না ও ......
কখন যে ফুরিয়ে নিভে গেছে নিজের
উদাসীনতায় দেখতে পায়নি আজ রাতের আগে ......

আর এভাবেই আজ রাতের নীড়ে ফেরা আগামী দিনের
প্রতি রাতের মত অর্থহীনতায় পতিত হল !!!

নিজের ঘরে টেবিলে একটি কালো খামে
একটি চিঠি পায় ও , কোন এক ''নরপশু'' কে লেখা
মৃদু হেসে ড্রয়ার থেকে একই হাতের লেখার নীল খামে
পোরা পূর্বেকার একটি চিঠি বের করে ও ,
লেখা হয়েছিল কোন এক ''দেবতা'' কে......

বিগত রাতেও যেমন ও পুলকিত হয় নি
বিষাদ জাগে না ওর মনে আজ রাতেও......
কেবল একটাই যন্ত্রণা......

যন্ত্র - না হওয়ার যন্ত্রণা ,
যন্ত্রমুক্তির যন্ত্রণা
বোধ করি এখন ও রক্ত মাংসের একটি শরীর !!!

রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১২

অর্বাচীন



লক্ষাধিক অস্তিত্ববান সত্ত্বার ধ্বংসস্তূপে
দাঁড়িয়ে আমি আমারই এক ত্রিমাত্রিক অসদ বিম্ব
ভাল থাকার, ভাল রাখার রীতি আর বিপরীতে
সাদা-কালো দেখা যায় চারপাশ
তবু সব দৃষ্টিবিভ্রমকে বাঁচিয়ে আমি
চাতকের মত খুঁজে বেড়াই অর্বাচীনকে .......
অন্ধকার ঘরের কুলুঙ্গিতে
অনির্বাণ হয়ে উঠার অপেক্ষায়

তেল সমেত প্রদীপের সলতে হয়ত
আজও আর্দ্র অন্ধকারের কান্নায় .......
নিদারুণ হয়ে জ্বলে উঠবার দারুণ লিপ্সায়
গুমরে উঠে আমার আবেগ বিহ্বল
প্রবীণ সত্ত্বার অন্তর্গত ক্রন্দন
কিন্তু আধুনিক অর্বাচীনের উদাসীনতা
আর আদিম প্রবীণের উপেক্ষায় আমি খুঁজে পেলাম
আদিমতা আর আধুনিকতা একই
সুতোর দুটি প্রান্ত আর
তার মাঝে রয়েছে একটি বিশাল শব্দ ---
''''সভ্যতা''''