শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১২

নামহীন কবিতা



প্রভাতের রবির কিরণের মিছিলে
জানালার কালো কাচের বেরিকেড
টেনে দেয় দিবায় নিদ্রাতুর নিশাচর প্রাণী ।
অসূর্যস্পশ্যা হয়ে কংক্রীটের মত ধূসর
হয়ে গেছে ওর বর্ণ , ওর লোহিত
কণিকাগুলো রবিকরণের দুর্দমনীয় তৃষ্ণায়
বহু বছর আগেই রূপান্তরিত মরুর তপ্ত
বালুকাকণায়---
তাতে নিযুত বছরাধিক পরের পলমাত্র
বৃষ্টির জল ওকে ভেজাতে পারে না বরং
নিজেই যায় শুকিয়ে বাষ্প হয়ে ।
ওর বেগময় নিদাঘে ওর আবেগ
লোকচক্ষুর কাছে মরীচিকা হয়ে ধরা দেয়...
তৃষ্ণার্ত পথিক বহুদূর হেটে এসে ধ্বসে পড়ে
ওর নির্মম বক্ষ' পরে । তবু নির্বিকার ও....
গত জন্মের ভুল যে চিতার অনল জ্বেলেছিল
ওর মাঝে, তা যেন অনির্বাণ.....
পরজন্ম হল ওর এক অতিকায় বামন তারা
হয়ে, আপন শক্তিতে দাহ হয়ে একদিন
মৃত্যু নেমে আসবে ওর কেন্দ্রে , কিন্তু ততদিনে
ও ক্রমশ সম্প্রসারণের পরিক্রমায়
চলে গেছে তোমার গ্যালাক্সির বাইরে ......
এসব নেহাতই ওর ভবিষ্যত ...
আর বর্তমান ?

কাঁধে ওর সফলতার হিমালয়
তবু ক্লান্ত ও ; হিমালয়ের জন্য নয় ;
ক্লান্ত ওর নীল মাছরাঙ্গাটিকে হারিয়ে
শারদ প্রভাতে বিচিত্র অবয়ব সাদা মেঘের
রাজ্যে ঘুরে বেড়ায় ও , ওর নীল
পাখিটির খোঁজে.... আর এভাবেই গল্প
বদলে যায়, তবু কেউ দেখে না আর
কেউ বোঝে না ....রক্তের ক্লান্তি ভেসে
যায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সুনিশ্চিত তাড়নায়....

অতঃপর ক্লান্তি নিয়েই আজ বিকেলে
নিজেকে না জানিয়েই ও বের হয়
নিজের ভেতর থেকে , হারিয়ে যায় চারপাশে ,
নীল পাখি বা নীলকণ্ঠের খোঁজে নয় ; সেই
ছোট্ট ঘাসের কুটিরে যেখানে একদিন ওর
বুকে এসে নামবে একটি নীল অপরাজিতা !!!





অস্তিত্বের প্রবচন




''কে তুমি?'' এই দুটো শব্দের প্রশ্ন
হবার সঠিকতা কতটুকু ?
আর তার বিপরীতে তোমার নিজের নাম
বা নিজেকে মানুষ বলাটা উত্তর হিসেবেই
বা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
হয়ত এ প্রশ্নের উত্তর বিলীন
তোমার - আমার অচেতনতায় ............

কিসে অস্তিত্ব তোমার -আমার?
মাতৃজরায়ুতে ভ্রূণীয় পরিস্ফুটনের
সাথে সূচনা হল আমাদের পরাশ্রয়ী
অস্তিত্বের...... বেড়ে উঠলাম একতাল
মাংসপিণ্ডের পুনঃপুনঃ বিভেদনে......
তারপর যেদিন তীব্র আলোর ফোটন কণা
আমাদের তীক্ষ্ণ সংবেদনশীল চোখে
আঘাত হানল, সেদিনই বোধহয়
আমাদের পরনির্ভর অস্তিত্বের সূচনা!!!

আজও পরনির্ভরতায় আমাদের দিন
কাটে , জীবন বাঁচে......
একদিন বলেছিলাম তোমায় এই
অস্তিত্বের সমাপ্তির আগে অন্তত
একবারের জন্য হলেও একটি
মুহূর্ত চাই আমার একান্ত নিজের করে-
যেই মুহূর্তে আমি আমার নিজের থেকেও
স্বাধীন হব, আপনাতে আপনি পরাধীন আমি
এবং তুমিও, তাই সেদিন তোমার সহজীবী
অস্তিত্বের প্রস্তাবের বিপরীতে এনেছিলাম
আমার চাবুকসম তীক্ষ্ণ ধারালো যুক্তি
কিন্তু যুক্তি ভেসে যায়
সময়ের সাথে প্রকৃতির নিয়মে---
গভীর মানবীয় সত্ত্বার অপরিচিত
তাড়নায় ।

আজকের এই মুহূর্তে তোমার -আমার
কথা যা বাস্তব , যা সত্যি আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ
করেছিল, তার অস্তিত্ব কিসে দীর্ঘস্থায়ী হয়?
একদিন এই কথা , এই অস্তিত্বের সংকট
সবই অস্তিত্বহীন হয়ে ধুলোয় মিশে যায়,
তা থকেই আবার জন্ম নেয় নতুন আবেগ-বেগ
নতুন স্বপ্ন আর বাস্তবতার অনির্ণেয়
সীমার অস্তিত্ব .........
আর তা পরিহাস করে আমাদের অতীত
অস্তিত্বকে আর আমরা দুজনই নিত্য
পুরোনো অস্তিত্বের খোলস ঝেড়ে ফেলে
নব অস্তিত্বে আত্মপ্রকাশ করি
ব্যক্ত-গুপ্তরূপে !!!








সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১২

অশুচি অন্তর্মানব



উচ্চকিত কাজল বা উচ্চকিত অহংসমেত
তুমি নারী বা নর যেই হউ না কেন
তোমার তথাকথিত স্ফটিকনিন্দিত – স্বচ্ছসলিল অন্তর্মানবের
কলেবরে আমি দেখেছি আত্মপ্রদর্শনীর উৎকট মোহ 
আর আত্মরক্ষার উগ্র প্রচেষ্টা
তোমার বিক্ষুব্ধতা , রাগ, তর্ক আর রোদনের 
বহু রূপের অন্তরালে আমার চোখে পড়ে 
আত্মসম্মানবোধের ব্যর্থ পোশাক পরানো 
আদিমতা .........

নীলাঞ্জন বা প্রিয়ার জন্য কিনে আনা ‘’নীলা’’ সমেত
তুমি ললনা বা প্রেমিক যেই হউ না কেন
তোমার তথাকথিত প্রেমময় – অনঘ অন্তর্মানবের
কলেবরে আমি দেখেছি কামনার নগ্ন কংকাল
আর ভোগের ভাগাড়
তোমার ভালবাসা , আদর , যুক্তি আর হতাশার
বহু রূপের অন্তরালে আমার চোখে পড়ে
সত্য যুগের সত্য প্রেমের ব্যর্থ পোশাক পরানো
মোহ .........

পরম গতি বা চরম বাস্তববাদ সমেত
যতবড় যুক্তিবাদী বা উপদেষ্টা – যাই তুমি হউ না কেন
তোমার তথাকথিত অতিমাত্রিক আত্মকেন্দ্রিক-স্বার্থপর অন্তর্মানবের
কলেবরে আমি দেখেছি তোমার নিদারুণ একাকীত্বের দারুণ দশা
আর তাকে উপেক্ষার সমরূপ দারুণ বিপরীত দশা
তোমার দৃঢ়তা , কাঠীন্য , নিস্পৃহতা আর অতিবেগুনী কষ্টের
বহু রূপের অন্তরালে আমার চোখে পড়ে
কংক্রীটের ব্যর্থ বোঝা বয়ে বেড়ানো , ভবিষ্যতে
বিলীয়মান এক নগরায়ন আর সভ্যতা ......

পরামাত্রিক অহিংসা বা আত্মনিন্দায় ব্যতিব্যস্ততা সমেত
সিদ্ধার্থ বা গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী যেই হউ না তুমি
তোমার তথাকথিত সহনশীল – ক্ষমাশীল অন্তর্মানবের
কলেবরে আমি দেখেছি আত্মপ্রবঞ্চনার পারলৌকিক
সুখ লাভের অলীক মোহ
আর আত্মমহত্ত্বের ক্ষণস্থায়ী শিশিরে সিক্ত হবার অভিলাষ
তোমার সংযম , ত্যাগ , নিষ্ঠা আর স্বেচ্ছায় ঐশ্বর্যের ন্যায় দুঃখ ভোগের
বহু রূপের অন্তরালে আমার চোখে পড়ে
এক বৃদ্ধ অক্ষম অন্তর্মানব .........

আর অবিশ্বাসী আমার অন্তর্মানবের কলেবরেও
আমি খুঁজে পাইনি ‘’ তাঁকে ‘’
আমি ক্রমশ বেড়ে উঠি আত্মিক বর্জ্যের ক্রমবর্ধমানতায়
স্বেচ্ছাচারিতা , বর্ণবাদ , আত্মপ্রবঞ্চনা , পাপ, রূঢ়তা,
মিথ্যা, ঔদ্ধত্য , চিৎকার, হরণ আর অপ্রিয় বাক্যের
আঘাতে আমি ঢেকে দিয়েছি ‘’ তাঁকে ‘’
আমার অবিমিশ্র অন্তর্মানবকে
আর তাঁর জায়গায় দাঁড় করিয়েছি......
এক অশুচি অন্তর্মানব ।