বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৭

সবার সাথেই "একা"

মাংসের নিচেই এ শরীরের যত না অস্থি ;
তার সাথে থাকে কোনদিন এট্টুখানি মগজ,
আবার কোন কোনদিন থাকে একটি মন ।

দেয়ালে ফুলদানীগুলো আছড়ে পড়ে নারীর হাতে
আর পুরুষের মদের নেশা মিটে না ;
এবং কেউই তার সেই একজন কে খুঁজে পায় না
তবু তারা খুঁজতে থাকে - শরীরের ভিতরে এবং বাইরে ।

মাংসের নিচেই এ শরীরের যত না অস্থি ;
কিন্তু শরীর খোঁজে শরীরের থেকেও বেশি কিছু ।

কিন্তু,
একক ভাগ্যে বন্দী হয়ে থাকার বাহিরে দ্বিতীয় আর কোন সুযোগ হয় না।
এবং কেউই তার সেই একজন কে খুঁজে পায় না

এরপর একদিন
শহুরে ভাগাড় ভরে উঠে,
আস্তাকুঁড়েরাও ভরে উঠে,
এই শহরের যত সমস্ত পাগলাগারদ, হাসপাতাল, কবরস্থান, শ্মশান -
সমস্তই একদিন ভরে উঠে।

তবুও কিছুই পূর্ণ হয় না।


Original Poem: Alone With Everybody
Writer: Charles Bukowski

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

I like you calm

তার নীরবতাই আমার পছন্দ , যেন মনে হয় আজ সে আসে নি ,
বহুদূরের আমাকে সে শুনতে পায় , আমার কণ্ঠ তাকে স্পর্শ করে না ।
মনে হয় ঘুম তার চোখের পাতায় উড়ে এসে বসেছে :
কোন চুম্বন তার ঠোঁট দুটো কে বেঁধে দিয়েছে ।
এ সবকিছুই আমার আমি দিয়ে পূর্ণ ,
আমার পূর্ণতা থেকে তার আসা ।
সে আমার গভীরে প্রজাপতির স্বপ্নের মতন ,
কোন বিরহ ধ্বনির মতন ।
তার নিশ্চুপ কথাই আমার পছন্দ , যেন সে কোন দূরে ,
আমার মৌনতায় প্রজাপতিদের শব্দের মতন ।
বহুদূরের আমাকে সে শুনতে পায় , আমার কণ্ঠ তার কাছে পৌঁছায় না ।
তাহলে আমাকে বরং নীরব হতে দাও , নিশ্চুপ হতে দাও তার নীরবতায় ।
আমাকে তার নীরবতার সাথে ভাগ করে থাকতে দাও ,
আলোর স্বচ্ছতায় , চক্রের পুণ্যতায় ।
সে রাতের মতন , নীরব , জমাট
তার নীরবতা দূরের নক্ষত্রের মতনই , ধ্রুব
তার নীরবতাই আমার পছন্দ , যেন মনে হয় সে আজ আসে নি :
বহুদূরে , বহুদুঃখে যেন সে আর নেই ।
এমুহূর্ত খানিতে একটুকু কথা , একটুকু হাসি ,
শিহরিত হই আমি তবু ভেবে যে : এমন টা হবার ছিল না ।

মূল কবিতাঃ Me Gustas Cuando Callas ( Pablo Neruda )

বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১৬

গল্পের ফেরিওলা

তিনটি শহরে আমি নারী বন্দনা গেয়েছি ,
কিন্তু ও সব যেন ঘুরেফিরে একই রকম ;
তাই এখন আমি রৌদ্রের গান গাইবো ।

ঠোঁটে করে নিয়ে শব্দের সাথে খেলা হয় তোমার ,
স্বপ্ন , শব্দ - যেন কোন রত্নের মতন ,
প্রাচীন কোন দেবতার অদ্ভুত উচ্চারিত মন্ত্র ,
রাত, কাক কিংবা কোন প্রলুব্ধি নয় ;
আমার এ গানের প্রাণ বরং অন্য কিছুতে ।

সেইসব নারীদের চোখ , স্বপ্ন , ঠোঁট ;
কিন্তু রাত ফুরোবার সাথে সাথে
তাদের কোন স্মৃতিই আমার পথে সঙ্গী হয় না ।
তাদের শরীরে , আমাদের মিলন বিস্মৃতিতে
একটিবারের জন্যে হলেও টুকরো স্মৃতিগুলো
বাতাসে ভেসে আসে , দীর্ঘশ্বাসে বলে , " তুমি ,
তোমার ভাঁজ পড়া চোখ ,
উচ্চকিত হাসি ,
অমন সাহস ( বিদ্রুপিত ) ,
তোমার মতন আরও অনেকের মধ্যে কঠিন তুমি , ঠুনকো তুমি ,
রৌদ্রে বীণা হাতে সেই পুরোনো পথে হেঁটে বেড়ানো তুমি , রইতে ?
রইতে তুমি এইখানে ? "

বছরের কোন ক্বদাচিত দিনে গল্পের ফেরিওলাকে নিয়ে
তাদের নিজেদের মধ্যে কথা হয় :

" গল্পের ফেরিওলা ? " " ও সেই বাগদিয়া বাসী ,
সেই গানওলার কথা বলছ ? "
" হ্যাঁ সেইই , একদিন আমাদের এই পথে গিয়েছিল , "
" ও সেই রসিক যুবকটি "
" কিন্তু আসলে তো সে এইসব ভবঘুরেদেরই একজন , "
" ওগুলো সত্যিই তার নিজের লেখা গান ?
নাকি অন্য কারুর যেগুলো সে প্রায়ই গেয়ে থাকে ? "
" কিন্তু তাই বলে সে সত্যিই তোমাদের শহরেও এসেছিলো , বলছ ? "

" জানি না , ঈশ্বরের ইচ্ছা , হয়ত বা ,
কিন্তু তোমাকে যা বলছি ওর গোপন কথা সেসব যদি প্রকাশ করো
তবে তুমিও ওর মতনই নিঃস্ব হবে - বলে রাখলাম । "

তিনটি শহরে আমি নারী বন্দনা গেয়েছি ।
কিন্তু সেইসব প্রশংসা কথা ঘুরেফিরে একই ।
তাই আমি আজ রৌদ্রের গান গাইবো ।
... উহ ? ... সেই নারীদের প্রায় সবারই চোখ ছিল ধূসর ,
যেন একই রকম , আমি তাই রৌদ্রের গান গাইবো ।

হে সূর্য পুরুষ , পথের-গানে , হাসিতে ,
মেঘে আর বৃষ্টিতে আমার পথ ভরে উঠুক ।
রৌদ্র-কাননে যাবার সে হোক আমার নতুন পথ !

তিনটি শহরে আমি নারী বন্দনা গেয়েছি
সেসব বন্দনা ছিল একই রকম ।

আমি তাই স্বর্গের নীলাভে পাখিদের গান গাইবো ,
সমুদ্র থেকে ঝড়ে পড়া মেঘেদের গান ।

মূল লেখাঃ Cino
Written By: Ezra Pound

বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কীভাবে ? পারলে না !

কীভাবে ?
পারলে না !

অনেক ঝড়ের পরের একটি দিন ।
আলোর কণা , জুড়ে জুড়ে মিশছে ;
আকাশ জোড়া স্বর্ণরেণু ; বাবলার ফুলে বৃষ্টির প্রথম চুমু ।
জানতাম আমরা দুজনেই , এই সপ্তাহের যে কোন একটি দিনেরই হবার কথা ছিল ।
এখন যখন জানিই , তুমি আর নেই ,
তখন দরজায় গিয়ে দাঁড়াই , গলির এমাথা থেকে ওমাথা জুড়ে দেখি
কী নিদারুণ রৌদ্র , মেঘেরা জড়ো হয়েছে দিগন্ত জুড়ে ;
ভাবি আমি : কোন ভাবেই আজকের দিন না হয়ে পারত ?
অন্য ঘরে মহিনের ঘোড়াগুলি গাইছে , টম প্যাক্সটনের ,
" এত চাওয়া নিয়ে কোথা যাই ~ " , খুবই মৃদুমন্দ ,
ঠিক যেন কোন অতীত হেমন্তের মাঠের ধারে বসে
কৃষকের ধান কাটার শব্দের মতন । মৃদুমন্দ ।
ঘাসের বুকে শুয়ে থাকি ,
তারপর আজ খুব সকালে হয়ত হাঁটতে হাঁটতে , অন্ধকারে
এইসব ক্রমাগত সাফল্য আর নারকোটিকের ব্যর্থতায়
নিজেকে সম্পূর্ণ ক্লান্ত করে খুঁজে পেতে ।
রোজ বছরের যন্ত্রণা আর হতাশা হয়ত নারকোটিকের বিবর্ণ আস্বাদনে
ক্ষণিক স্বস্তি গড়ে নিত ।
এখন প্রথম আলোয় দেখা এ পৃথিবীকে , যেই পৃথিবীকে ভালোবেসেছিলাম
দেখতে পাই , এভাবে চলে যাওয়ায় , না থাকায় ক্ষতি কিছু নেই ।
এবং আমার প্রস্থানে প্রিয়তম মানুষ কে রেখে আসি একটি স্বর্গের দিনে ।
তারপর সূর্যের কাছে এসে নিজেকে কি একটু হারিয়ে ফেলি ?
কীভাবে ভালো না থাকতে পারি ,
এই শেষ কটি দিনে যখন আমার প্রাণের সবখানি কথা তাকে বলা হয়ে গেছে ,
সেও প্রাণের সব কথা গিয়েছিলো বলে , এবং আমার নীরবতায় কোন শব্দ
বাকি ছিল বলে তার ভুল হয় নি ।
কীভাবে নিজেকে না হারিয়ে থাকতে পারি সেইসব দিনে
যখন সে ঠিক আমার পাশে , তার বাহু আমার সমস্তটা জুড়ে ,
ঠিক যেমন ছিল , যেন এমনটাকেই সমস্ত জীবন বলে মনে হয়েছিল ?
কিভাবে একবার আমার চিবুক তার চিবুক কে না ছুঁয়ে থাকতে পারত !
কিভাবে না পারতাম ! যখন জানলা জুড়ে সবটুকু আলো ,
আমাকে ঘিরে ও , এবং কেবলই দূরের একটা সিঙ্গেল ইঞ্জিনের প্লেনের শব্দ ,
এতটাই দূরত্বে যা কেউ শুনতে পায় না ?

মূল কবিতাঃ How Could You Not
Written By: Galway Kinnell
For: Jane Kenyon

[ কেনো পারলে না তুমি পাগল হতে আমার সাথে অমন কোরে ? ]

শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৬

মুক্ত মানুষ আর সমুদ্রের কথা

মূল কবিতাঃ L'Homme et la mer - Charles Baudelaire

মুক্ত মানুষ ! সমুদ্র তোমার কত কাছের !
জল তোমার আয়না , তোমার মনের নিকটের
অন্তহীন উন্মত্তে তার ঢেউ ,
তার মনে যে দাগ সে কি কম কাছে ?

জলমগ্ন গভীরতার অতলে তোমার যে ছবি ;
তবু চোখে আর আলিঙ্গনের যে ভাষা ,
তোমার গভীর যে ভাষা সেও কিনা কখনো কখনো
ঢেকে যাবে আদিম সেই অপরাহত গভীর শোকে ।

তুমি এবং সেই তুমি , আঁধারে , গোপনে এবং গভীরে  :
তবু , তোমার সেই অতলে আজও কেউ পৌঁছায়নি ,
হে সমুদ্র , কেউ জানেনি সেই গভীর সম্পদ কে ,
ঈর্ষান্বিত তোমরা দুজনেই সেই গভীরতাকে অতলে রাখতে !

তারপর অশেষ সময়ের পথে হেঁটে ,
অকরুণ , নির্দয় সে লড়াই ,
অজেয় পাওয়ার শেষে যার আনন্দ :
আহ মুক্ত মানুষ ! ধ্রুব হোক তোমার শত্রুতা ! 

বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৬

ছড়া

পানকৌড়ি আর শিকারীর তাড়ানো মুহূর্ত থেকে আসি , 
হঠাতই আসি 
নিশিন্দা-গুচ্ছে  জোনাকের মতন জ্বলি , 
তারপর উপত্যকা থেকেই ঝড়ে পড়ি । 

ত্রিশ পাহাড় পেরিয়ে আসি , 
কিংবা শৈলতেই  হারিয়ে পড়ি , 
কুড়ি গাঁও বাদে , একটি ছোট্ট শহর , 
আর আধা শতক সাঁকো । 

শেষ পর্যন্ত যেখানে ওর মাঠের ধারে বয়ে চলি 
উদ্বেল নদের সঙ্গিনী হতে ,
যদিওবা সে আসে এবং যেতেও পারে চলে , 
তবু আমি যাই বয়ে । 

এখন পাথরের সাথেই বাজে বকি , 
ধারে আর ত্রিগুণে , 
ঘূর্ণায়ু সমুদ্রে ডুবে মরি , 
আর নুড়িপাথরের সাথ বকবক করি । 

অনেক ঢেউয়ে আমার পাড়ে আমি ক্ষয়ে যাই 
বহু মাঠে আর অনাবাদী জমিতে , 
আর বহু আকাঙ্ক্ষিত অন্তরীপে
শেষাবধি আগাছাই জেগে রয় । 

তাই আজ বয়ে যাই আর কল্লোল করে বাজে বকে যাই ,
উদ্বেল নদের সঙ্গিনী হতে ,
যদিওবা সে আসে এবং যেতেও পারে চলে , 
তবু আমি যাই বয়ে । 

বাতাসের মতই বয়ে যাই , ভেতরে ও বাহিরে , 
এখানের প্রসূত জলযাত্রায় , 
হয়ত বা এক ঝাঁক কইয়ের দল । 

মাঝে আমার শরীরে বিন্দু বিন্দু জলকণা 
যখন আমি পাথরের উপর ঢেউয়ের মতন ভেঙ্গে যাই , 
আর সেই ভেঙ্গে পড়া জলকণাদের সাথে করে চলি  
উদ্বেল নদের সঙ্গিনী হতে ,
যদিওবা সে আসে এবং যেতেও পারে চলে , 
তবু আমি যাই বয়ে । 

ঘাসের ফুলে লুকিয়ে ,
পিপুলের পাতায় আড়াল করে ,
তুলে নিলাম কয়েকটি নীল শেরামণি বা জোনাক ফুল  
যা জন্মেছিল সুখী প্রেমিকদের জন্য । 

আমি আছড়ে পড়ি , ভেঙ্গে পড়ি , বিদগ্ধ হতাশায় তাকিয়ে রই , 
আমার বাহিরে , 
তবু দুহাতে মুঠি মুঠি রৌদ্র বুলিয়ে দিই  
আমার এসমস্ত ক্ষতে । 

এক অদ্ভুত অস্থিরতায় জেগে রাতের নক্ষত্রদের সাথে কথা কই ,
নিজের ভেতরে রাত বাড়ে , 
আর সময়দের সাথে বাড়ে দূরত্ব ।

এবং আবারও আমাদের চিহ্ন এঁকে বয়ে চলি , 
উদ্বেল নদের সঙ্গিনী হতে ,
যদিওবা সে আসে এবং যেতেও পারে চলে , 
তবু আমি যাই বয়ে । 


ভাবানুবাদঃ মূল কবিতাঃ দ্য ব্রুক - আলফ্রেড লর্ড টেনিসন 

মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

J’ai tant rêvé de toi

[০]
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে তুমি
তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছ
এখনও কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করার
এবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় স্বর জন্ম নেয় সেখানে চুম্বন দেওয়ার ?...

[১]
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে
তোমার ছায়াকে ছুঁতে গেলেই আমার দু' বাহু বুকের মাঝে
আলিঙ্গন পেয়েছে ; অথচ আসল তুমি হলেই সমস্ত বিবশ ।
অসংখ্য দিনে আর বছরে যার তাড়ায় যার ছায়ায় কাটিয়েছি ,
নিশ্চিত আমারও ছায়া হবারই কথা ছিল ।

অনুভূতিদের দাঁড়ি , কমা , প্রশ্নবোধক ?
 
[০]
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে হয়তো
আমার পক্ষে আর জাগাই সম্ভব হবে না
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোই, আমার শরীর সব রকম জীবন ও ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত ...
আমি তোমার ভুরু ছুঁতে পারি, ওষ্ঠ ছুঁতে পারি এত কম ...
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি, হেঁটেছি , কথা বলেছি ।
শুয়েছি তোমার ছায়ার সঙ্গে ...

[১]
যে আমার জন্যে না থাকার মধ্যে আরও না হয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু  নেই !
তোমার সূর্য ঘড়ির 'পরে আসা-যাওয়ার ছায়ার থেকেও আরও গভীর ছায়া হয়ে রই ,
আমি !


[মূল কবিতাঃ  J’ai tant rêvé de toi , Robert Desnos ]
[ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর 'ছবির দেশে কবিতার দেশে ' বইতে কবিতাটির কিছু অংশবিশেষ অনুবাদ করেছিলেন , সেগুলো জোড় চিহ্নিত [০] আছে , আর বাকি যেই অংশটুকুর অনুবাদ করা হয় নি , বিজোড় অংশগুলো [১] সেগুলো করার চেষ্টা করলাম...