শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বন্ধুকে লেখা চিঠি

ভেবেছিলাম তোকে একটা শারদ কবিতা লিখব ,
তা মুখে পুরলেই ঠোঁট ভিজবে মিঠে সুপুরির ঘ্রাণে
আর চন্দ্রপুলির রসে ।
এক পাখি জল্পনা আর দুই পাখির ঝগড়ায় ,
ঘাটের শেষ ধাপে দুজনে বসব জলে পা ভিজিয়ে ,
চোখের সামনে দুটো ফড়িঙের সুখবাস দেখতে পেয়ে,
সেবার আমি ঈর্ষে করেই বলব," যে জীবন দোয়েলের,
ফড়িঙের তা কেন আমাদের হল না রে ?"


ভেবেছিলাম একদিন রৌদ্র ঝড় ঊঠলে তোকে তোর
মেঘ বৃষ্টির ছায়া থেকে ছিনতাই করে দুজনে মিলে ভর করব
সোনালি ডানার চিলে ।
এক শালিক অমঙ্গল আর জোড়-শালিকের মঙ্গল
আঁচলে বেঁধে তোকে দেখাতাম অর্বাচীন সব কথার জীবন ,
আর চাইব সেবার যেন তুই আক্ষেপ করেই আমায় শুধোস,
"এতদিন কোথায় ছিলিস ?"



ভেবেছিলাম আলো- আঁধারের কাব্যে চকমকি পাথর ঠুকে,
আলো জ্বেলে তোকে দেখাব আঁধার নক্ষত্রের সমস্ত
পরাধীন হরমোনের স্বাধীনতা ।
আর সেদিন তুইও কিছু শুধোতিস না আর
আমিও গড়তাম না কোন আয়না-বিম্ব ।

বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ত্রিকোণমিতিক


এক টাকার  অটুট নোট ভাঙ্গিয়ে আমার হাতে কিছু খুচড়ো পয়সা
তুলে দেওয়া হল । দুই-তিন আনার বেশি  যার খরচ এখনো হয় নি ;
আর যেটুকু বইয়ে দিয়েছিলাম মাঘ আর ফাল্গুনের ভোরে তা হাতে হাতে
ফিরে পেয়েছি বিগত অঘ্রাণ আর আশ্বিনের ঈষৎ হিমেল গত রাতে ।


প্রথমে এক শামুক জীবন ; যা সশব্দ ছিল দাবানলের আগেকার নিস্তব্ধতায় ;
শীতল চাঁদের পাহাড় পেরুতে গিয়ে দেখা মিলল প্রতিধ্বনিত কিংবা প্রতিফলিত
অ্যাপোলোর । সে আমার আগুনে পুড়বার আগে পতঙ্গ দশার ব্যুৎপত্তি ।
এরপর পঙ্গপালের মতন চষে বেড়িয়েছি ভেতরের অনাবাদী জমিতে,
বীজ বুনেছি কথার শব্দের আর খুঁটে খেয়েছি জীবনের দানা ।



এসবের হাত ধরে ধরে পৌঁছেছিলেম অঘ্রাণের এক আসন্ন সোনালি ধানের ক্ষেতে  ,
সেখানে দেখা মিলল দায়ুনিসাসের । "All that glitters
is not gold."-ক্যাস্যান্ড্রার ভবিষ্যদ্বাণী উপেক্ষা করে
পা বাড়িয়েছিলাম তাই পৃথিবীর কেন্দ্রে , কেবলই ওজনহীন হতে হতে ।



সেই কেন্দ্রবিহীন যাত্রায় দেখা মিলল অরফিউসের এক আশ্বিনের  হিমেল রাতে ,
কিছু খুচরো তারাদের জলসায় । এখানেই মেলে দিলাম আমার তৃতীয় নয়ন ;
মরফিউসের খোঁজে, কিছু অনাবাদী কবিতা লিখবার আশায় ।





খুচড়ো কবিতা

(১)
তোমার হাতে আঠার মতন লেগে থাকা আমার ,
এ স্বোপার্জিত আমি কে মানসিক করেই রাখো ,
শরীরে বইয়ে দিয়ে তাকে ; আমাদের
স্বর্গচ্যুত নর-নারী করো না ...!



(২)
যাযাবর পাখির মত পালক বিছিয়ে শুয়ে থাকি ,
দশ বা তার গুণিতক সংখ্যক মৃতবৎ আঙ্গুলের স্পর্শ
পাবার কামনায় ।
আমার , আমাদের এসবটুকুন অনুভূতি
স্যাকারিনের লাল জলের মত নিস্তেজ ,
দিনে দিনে খেলো হতে থাকে আর
সময়ে অসময়ে পোশাক পাল্টাতে
পর্দা- বেপর্দা হয় ।


(৩)
ঘুমহীন , এক রাতের তারারা এখনও ১১নম্বর
বাড়ির লোকদের মতই অপরিচিত ।
নষ্ট ফোবিয়া , অজস্র প্রাকৃত অনুরণন ,
কেবলই মিউটেশনের সংখ্যা চলে বাড়িয়ে ।
একবার হারাতে জানলে আর উপরে উঠতুম না ,
তবুও  জানি না হারিয়ে যেতে ; জানি,
কেবল, " দূরের পাহাড়" এখনও নীল মনে হয় !


(৪)
আমি তাদের শরীরের এপিটাফগুলো পড়তে পাই ;
তারা দুটো রঙই ছুঁড়তে জানে ; কালো আর নীল,
বিস্ময়ের কালো, ক্ষতের কালো আর ঈর্ষার কালো ।
কখনো সন্ধ্যায় দূর নীলে অভিসারে  নীল-বসনা হতে বলে,
আবার কখনো বিষে নীল বানানোর আয়োজন চালায় ।
স্বর্গচ্যুত হবার পর থেকে নীল আকাশ দেখতে পারি , মাটির
নীল সমুদ্র স্বর্গ থেকেও দেখা যেত । কেবল নীলাকাশের মোহে
উজিয়ে দিলাম আমার ৩টি নীলপদ্ম । আর এখনও নিজের কাছে
দরাদরি নিয়ে বসি ,পদ্ম পাপড়ি গুলো ছিঁড়ে কুটিকুটি করি আর
জোড়া লাগাই আবারও ।


(৫)
নীলে নীলে ছেয়ে গেল বলে আমার ধানী জমি ,
কখনো  আমার জমিন বিকোয়, কখনো বা বিকোয় কুঠির মালিক ।
সমতল জমিনে নীল ফাঙ্গাস গেড়ে বসেছে , আর ওদিকে প্রতিটা
পাহাড়ই দূরে নীল , কাছে ধূসর আর
চক্রটা অসমাপ্তিতে পর্যবসিত ।