শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৩

ইচ্ছা-ঘুম

বিনিমিত শেষ সুর দুটো পটে তোলা থাক,
একের ইচ্ছায়, দুইয়ের ঘুমে গড়া --
ইচ্ছাঘুম ।

দূরবীক্ষণের দুটো লেন্সে দুজনে উঠে বসি ,
একে অবাস্তব  হয়ে দুইয়ে বাস্তব বিম্ব গড়ে
শূন্যে ।

নীল পাড় খসে গেছে,
খেয়ালের নীল খামে খামখেয়ালি
কথা গোঁজা আছে । এইসব ভার্চুয়াল
তরঙ্গ গাছ কেটে ফেললে
বাতাস বয়ে নিয়ে যাক একটাই সুর,

দেখা হবে ইচ্ছা-ঘুমে , এখনও যে দেখা
হওয়া বাকি আছে ইচ্ছে আর ঘুমের ।  

শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৩

একাদশী স্বপ্ন

ক্বদাচিত দুই-একটা রৌদ্রের দিন নজরে আসে ।


রাতে ঘুম হলে স্বপ্নের ট্রেইলার নামে , যেখানে
উত্তাল পদ্মার পাড়ে বসলে বৃষ্টি নামে ; সাদা কাগজ
বাঁচাতে মাথার উপরে ধরা ভাঙ্গা ছাতা দিয়ে যখন
চুল ভিজে তখন আর ভাঙ্গা ছাতা নিয়ে মান-অভিমান
হয় না ।     


বৃষ্টিতে প্রতিধ্বনি ভিজে যায় , তাই
স্বপ্ন ছেড়ে ভিজে আসি ।
বাস্তব কে দুইদিকে টানতে টানতে
অট্টহাসি আসে ,
অনেকগুলো গোল গোল মিষ্টি ওষুধ ,
কোন এক নারীকে ( প্রচলিত মা কে )
কপালে জলের ছোঁয়া দিতে পেয়ে
আবার চোখ বুজব ।


এরপর বিকেল চারটায় আবার সাদা
দেয়ালে রৌদ্রকে পিছলে যেতে দেখব ।
সেবার যেন কেউ এক কাপ চা হাতে শুধোন,
"তোমার তো চায়ে বমি হয় ,
আমার সাথে খেয়ে দেখবে এক কাপ ? "

বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৩

সফেদ খাম ?


তার নিজের হাতে নীল রং করা , নীলাকাশ বা
নীল সমুদ্দরের নীল না ; নিজের প্রথম রংবাক্সের
সেই খয়ে আসা এবড়োথেবড়ো রংপেন্সিলের নীলে ,
দু-হাত নীলে রাঙিয়ে , বাবার ড্রয়ারে পাওয়া সফেদ
খামটাকে মাখিয়ে গড়া তার প্রথম ও শেষ নীল খাম ।
কয়েক টাকায় কেনা যেত আনকোরা নতুন খাম ,
তবে কিনা তা নীল করে রাখা যেত না , নীলাকাশ
মেঘলা হলে , বৃষ্টি নামলে ,নীল সমুদ্রে ঝড় উঠলে
তাকে যে আর চিরন্তন নীল দেওয়া যেত না ,
উত্তাপে নীল , আর্দ্রতায় নীল, শুষ্কতায় নীল , ঘামে নীল ,
হিমে নীল , বিষে নীল , সুখেও নীল----
যেত দেওয়া ?

তাই আটপৌরে নীল হাতে গড়ে দিল নীল রং
একখানা সফেদ খামে ।

নীল খামের দুটো এক ; তার প্রেরক --- নীলরঙা হাত তার,
আর একটি ঠিকানা ...
মানুষের কিংবা ঘরের । সেই একটি মানুষ কেবলি তার ঘর পাল্টায় ,
বা সেই একটি ঘরে সেই মানুষটি আর থাকে না ।
তাই নীল খাম আর ঠিকানায় পৌছে না ;
নীলরং হাতে নিয়ে মনে তার প্রশ্ন জেগেছিল ,
ঠিকানা খুঁজে পেতে পেতে তার নীলখাম সফেদ হবে না তো ?

না,
সেই নীল হাতে গড়া নীল খাম সফেদ হবার নয় । 

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বন্ধুকে লেখা চিঠি

ভেবেছিলাম তোকে একটা শারদ কবিতা লিখব ,
তা মুখে পুরলেই ঠোঁট ভিজবে মিঠে সুপুরির ঘ্রাণে
আর চন্দ্রপুলির রসে ।
এক পাখি জল্পনা আর দুই পাখির ঝগড়ায় ,
ঘাটের শেষ ধাপে দুজনে বসব জলে পা ভিজিয়ে ,
চোখের সামনে দুটো ফড়িঙের সুখবাস দেখতে পেয়ে,
সেবার আমি ঈর্ষে করেই বলব," যে জীবন দোয়েলের,
ফড়িঙের তা কেন আমাদের হল না রে ?"


ভেবেছিলাম একদিন রৌদ্র ঝড় ঊঠলে তোকে তোর
মেঘ বৃষ্টির ছায়া থেকে ছিনতাই করে দুজনে মিলে ভর করব
সোনালি ডানার চিলে ।
এক শালিক অমঙ্গল আর জোড়-শালিকের মঙ্গল
আঁচলে বেঁধে তোকে দেখাতাম অর্বাচীন সব কথার জীবন ,
আর চাইব সেবার যেন তুই আক্ষেপ করেই আমায় শুধোস,
"এতদিন কোথায় ছিলিস ?"



ভেবেছিলাম আলো- আঁধারের কাব্যে চকমকি পাথর ঠুকে,
আলো জ্বেলে তোকে দেখাব আঁধার নক্ষত্রের সমস্ত
পরাধীন হরমোনের স্বাধীনতা ।
আর সেদিন তুইও কিছু শুধোতিস না আর
আমিও গড়তাম না কোন আয়না-বিম্ব ।

বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ত্রিকোণমিতিক


এক টাকার  অটুট নোট ভাঙ্গিয়ে আমার হাতে কিছু খুচড়ো পয়সা
তুলে দেওয়া হল । দুই-তিন আনার বেশি  যার খরচ এখনো হয় নি ;
আর যেটুকু বইয়ে দিয়েছিলাম মাঘ আর ফাল্গুনের ভোরে তা হাতে হাতে
ফিরে পেয়েছি বিগত অঘ্রাণ আর আশ্বিনের ঈষৎ হিমেল গত রাতে ।


প্রথমে এক শামুক জীবন ; যা সশব্দ ছিল দাবানলের আগেকার নিস্তব্ধতায় ;
শীতল চাঁদের পাহাড় পেরুতে গিয়ে দেখা মিলল প্রতিধ্বনিত কিংবা প্রতিফলিত
অ্যাপোলোর । সে আমার আগুনে পুড়বার আগে পতঙ্গ দশার ব্যুৎপত্তি ।
এরপর পঙ্গপালের মতন চষে বেড়িয়েছি ভেতরের অনাবাদী জমিতে,
বীজ বুনেছি কথার শব্দের আর খুঁটে খেয়েছি জীবনের দানা ।



এসবের হাত ধরে ধরে পৌঁছেছিলেম অঘ্রাণের এক আসন্ন সোনালি ধানের ক্ষেতে  ,
সেখানে দেখা মিলল দায়ুনিসাসের । "All that glitters
is not gold."-ক্যাস্যান্ড্রার ভবিষ্যদ্বাণী উপেক্ষা করে
পা বাড়িয়েছিলাম তাই পৃথিবীর কেন্দ্রে , কেবলই ওজনহীন হতে হতে ।



সেই কেন্দ্রবিহীন যাত্রায় দেখা মিলল অরফিউসের এক আশ্বিনের  হিমেল রাতে ,
কিছু খুচরো তারাদের জলসায় । এখানেই মেলে দিলাম আমার তৃতীয় নয়ন ;
মরফিউসের খোঁজে, কিছু অনাবাদী কবিতা লিখবার আশায় ।





খুচড়ো কবিতা

(১)
তোমার হাতে আঠার মতন লেগে থাকা আমার ,
এ স্বোপার্জিত আমি কে মানসিক করেই রাখো ,
শরীরে বইয়ে দিয়ে তাকে ; আমাদের
স্বর্গচ্যুত নর-নারী করো না ...!



(২)
যাযাবর পাখির মত পালক বিছিয়ে শুয়ে থাকি ,
দশ বা তার গুণিতক সংখ্যক মৃতবৎ আঙ্গুলের স্পর্শ
পাবার কামনায় ।
আমার , আমাদের এসবটুকুন অনুভূতি
স্যাকারিনের লাল জলের মত নিস্তেজ ,
দিনে দিনে খেলো হতে থাকে আর
সময়ে অসময়ে পোশাক পাল্টাতে
পর্দা- বেপর্দা হয় ।


(৩)
ঘুমহীন , এক রাতের তারারা এখনও ১১নম্বর
বাড়ির লোকদের মতই অপরিচিত ।
নষ্ট ফোবিয়া , অজস্র প্রাকৃত অনুরণন ,
কেবলই মিউটেশনের সংখ্যা চলে বাড়িয়ে ।
একবার হারাতে জানলে আর উপরে উঠতুম না ,
তবুও  জানি না হারিয়ে যেতে ; জানি,
কেবল, " দূরের পাহাড়" এখনও নীল মনে হয় !


(৪)
আমি তাদের শরীরের এপিটাফগুলো পড়তে পাই ;
তারা দুটো রঙই ছুঁড়তে জানে ; কালো আর নীল,
বিস্ময়ের কালো, ক্ষতের কালো আর ঈর্ষার কালো ।
কখনো সন্ধ্যায় দূর নীলে অভিসারে  নীল-বসনা হতে বলে,
আবার কখনো বিষে নীল বানানোর আয়োজন চালায় ।
স্বর্গচ্যুত হবার পর থেকে নীল আকাশ দেখতে পারি , মাটির
নীল সমুদ্র স্বর্গ থেকেও দেখা যেত । কেবল নীলাকাশের মোহে
উজিয়ে দিলাম আমার ৩টি নীলপদ্ম । আর এখনও নিজের কাছে
দরাদরি নিয়ে বসি ,পদ্ম পাপড়ি গুলো ছিঁড়ে কুটিকুটি করি আর
জোড়া লাগাই আবারও ।


(৫)
নীলে নীলে ছেয়ে গেল বলে আমার ধানী জমি ,
কখনো  আমার জমিন বিকোয়, কখনো বা বিকোয় কুঠির মালিক ।
সমতল জমিনে নীল ফাঙ্গাস গেড়ে বসেছে , আর ওদিকে প্রতিটা
পাহাড়ই দূরে নীল , কাছে ধূসর আর
চক্রটা অসমাপ্তিতে পর্যবসিত ।

শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

পারস্পরিক অনস্তিত্বের গোলকধাঁধা Labyrinths of mutual nothingness



"ভরা বাদর, মাহ ভাদর ,
 শূন্য মন্দির মোর ।"



হারিয়েছে কি ?
হারিয়েছি কি বা !
যখন আমিহীন করার আয়োজন চড়া ,
সেই চূড়ায়  একদিন অবেলায় চূর্ণ বিচূর্ণ হয় ,
আমার স্বতঃস্ফূর্ততা ।
প্রিয় কথাগুলো আজ প্রিয়হীন, নিরুদ্দেশ ;
কথার শবযাত্রায় অনুসারী কেবল , আমার
সযতনে গড়া আখ্যানের প্রতি প্রত্যাখ্যান সমস্ত তোমার ।
দিবারাত্রির কাব্য ওবেলায় ফুরিয়েছে , গোলকধাঁধায়
বিস্তারের প্রদীপও তার সমস্ত সলতে পুড়িয়ে নিভেছে ।
তাই প্রতি আগমনী দিনে আমি খসড়া করি অভিনয়ের ।



খাপছাড়া আয়োজিত আলাপিতা , নিরুদ্দিষ্ট শব্দ হারা,
মুখোশী নাটকের অঙ্ক ; পারস্পরিক অনস্তিত্বের গোলকধাঁধায়
আমি আজ আমিহীন - তুমিহীনা , কুশের পুতুল ।

টুকরো কথা

যেদিন পৃথিবীর সমস্ত সংবিধান আমার কথাকে
ডেড ল্যাংগুয়েজ বলে সাব্যস্ত করবে,
তখন , আমার সমস্ত কথা কাগজ বেচা দরে বেচে দেবে ...
কেবলই বার্ধক্যে ভরা মূল্যহীন নচেৎ আমাকেও
তুলে দেওয়া হত ফেরিওয়ালার কাগজের ঝুড়িতে ...
যদি দাঁড়ি  কমার অভাবই তোমার না বোঝার কারণ
তবে বুঝে নাও যে তুমি কখনই বুঝ নি ...
এমন কি যেটুকু বলে দেওয়া সেটুকুও
মিইয়ে গেছে হাওয়াই মিঠাইয়ের মত তোমার ঠোঁটের ভেতর ...

সংশয়

দিনেরা এখন অনেক অভিযোজিত,
ওরা নিজেরা আর কাটে না ,
উল্টো কাঁচি নিয়ে আমাকে কাটতে বসে ।

কপালের ছোট টিপটিকে সরিয়ে
আমার জীবন ব্যথার মত কেন্দ্রীভূত হয়
আমার দ্বৈত দৃষ্টির কেন্দ্রে ।

গতকালের আর পরশু'র আমি কে বড্ড বোকা ভাবি ,
মহৎ দেখি , আবার নীচ দেখি । আমি আয়নায়
আমার কান্নার অসদ বিম্ব দেখে হাসি ,
আর অনুগত আয়নাও সাথে হাসে ।

আর আমাকে নিয়ে ,
আমার সংশয় জাগে আবার ঘুমিয়ে পড়ে ,
আমার বাহিরে ও ভেতরে ।

শূন্য চাওয়া

আমি চেয়েছি আজ ভীষণ ঝড় হোক , আকাশ মেঘলা হোক ;
যাতে ডুবে যায় রাতের চাঁদ , ঢাকা পড়ে সমস্ত তারা ,
আমি দেখতে চেয়েছি তোমার প্রিয় চাঁদ আর ভেনাসবিহীন রাতে
আমার মতই অন্ধকারকে তুমি কতটা কাছে আসার আহবান জানাও ।

আমি চেয়েছি কাঁটাময় গোলাপের পরিবর্তে ক্যাকটাস হতে ,
দেখতে চেয়েছি সৌন্দর্য আর সৌরভবিহীন হবার দোষে
তোমার বাগান থেকে আমার নির্বাসন হয় কি না !
তবু খরায় গোলাপ মরলেও অসুন্দর ক্যাকটাস
থাকবে তোমার অপেক্ষায় বেঁচে তার জীর্ণ প্রাণ নিয়ে ।

আমি চেয়েছি হারিয়ে যেয়ে কোথাও আমার
ন্যূন প্রয়োজনটুকু দেখতে । যেদিন সমগ্র পৃথিবী
তোলপাড় করে ঝড় হবে সেদিন আমার দরজায়
তোমার হাতের কড়া নাড়ানো শুনতে চাই
নির্ভরতার আশ্রয়ের খোঁজে ।
যেদিন সমগ্র পৃথিবী খরতাপে পুড়ে পানিশূন্য হবে
সেদিনও আমার কাছেই তোমার তৃষ্ণার সবটুকু
আর্জি আমি দেখে যেতে চাই চিরতরে
অভিমানে হারিয়ে যাবার আগেই ।


বুমেরাং

আজ ৭২ বছর ধরে বাইশে শ্রাবণে বা তার আগে-পরে বৃষ্টি ঠিক ঠিক হল ,
আর সেদিন আমার কাছের বন্ধু ফুল আমার জন্মদিন ভুলল , যেমন আমি
ভুলেছিলাম জলেরটা বা সত্যি করে বলতে জলকে বহির্ভূত আমার বর্তমান জীবনে
এটুকু আদিখ্যেতা না দেখানোকে আমি মেনে নিয়েছিলাম ।

উপদ্রব ভেবে বা কোন বিমুখতায় বা বিষণ্ণতায় যেমন
অনেক নিঃস্বার্থ রৌদ্রে আমার ছায়া পড়তে দিই নি ,
তেমনি অনেক আকুলতায় ,আকাঙ্ক্ষায় আমার
প্রিয় মানুষদের ছায়াও আমার রৌদ্র মাড়ায়নি ...
বুমেরাং - আমার থেকে মুক্তি পাওয়া বুমেরাং,
আবার পথ চিনে ফিরে আসে আমাতে ।

সেদিন আমার মেয়েকে গল্পের বই হাতে দেখে যখন জিজ্ঞেস করলাম,
"কি করছ ? পরীক্ষার পড়াগুলো ঠিক মত করেছ তো !"
তখন সেও যে "উফফ বিরক্তিকর" বলে রাগ দেখাল তাতে
আমার নিজেকে দেখলাম কুড়ি বছর আগে আর সেদিনের
মায়ের বুকে বেঁধা শেলটা আজ বিঁধল আমার বুকে ।
বুমেরাং - আমার থেকে মুক্তি পাওয়া বুমেরাং,
আবার পথ চিনে ফিরে আসে আমাতে ।

ইতিহাস তার পুনরাবৃত্তি ঘটায় , অতীত নয় ;
তোমার-আমার অতীত ইতিহাস নয়, চিরন্তন সত্য !


প্যারাডক্স -১

ভিতরে আজ অভূতপূর্ব অবসর ,
খুব সূক্ষ্ম ভাবে হেরে , স্থূল করে জেতার নয়;
বরং জিতে যাবার হাসি ।
আমার কল্পময়ী তৃতীয় ভুল ,
সাথে কুশলী কুশীলবের কৌশল ।

প্রহসনে প্রবচনে আমার মিথ্যা ,
পাটে পাটে ভাঁজ করা ; নেভা আলোর
অন্ধকারে ভাঙ্গা আয়নায় নিজেকে দেখা ,
অনুতাপে নয়, অহঙ্কারে নয় ,
চপল স্বাভাবিকতায় ।

প্যারাডক্স -২



আজ তোমাকে একটা মিথ্যা কবিতা শোনাই,

আমি বেহিসেবি সংখ্যাপ্রিয় মানুষ এক,
রঙের মাঝে বেগুনী আমার ভীষণ আদরের,
তেমনটা লাল-নীল নয় ।

প্রায় রাতগুলোতে বর্তমান আমি আলোর
বিন্দু খুঁজে অতীত নক্ষত্রদের চিনি ।
প্রবল হতে হতেই তারারা খসে পড়ে ,
আর আমি ওদের কুড়িয়ে রাখি আমার কাঁচ-ব্যাগে ।
যেসব দিনগুলোতে কৃষ্ণপক্ষ বা সূর্যগ্রহণ নেমে আসে,
আমি তখন ঝড়ে পড়া তারা বের করে
হাতের মুঠোয় জ্বালিয়ে দিই ।
আমার হাতে জ্বলে কংকালসার উদ্বাস্তু নক্ষত্র
আর চোখে রাতের আকাশের অতীত তারারা অদেখা ।

চিঠি


মন কে নাম মাত্র গুছিয়ে নিয়ে লেখা
আমার এই চিঠি ,চিঠির পাতায় পাতা
আমার নীল আঁচল আর কথার
ফাঁকে গুঁজে দেওয়া আমার ঘ্রাণ ।
শব্দ আমার , বিম্ব তোমার ;
কাটাকুটি আর রংচটা মাটির
পুতুলের কারবার ।

মিঠে কথাগুলো দিয়েছি তারায় সাজিয়ে,
আর কাঁচাপাকা অভিযোগ গুলো
রূপোর জলে ধুয়ে সোনার কাগজে
দিয়েছি মুড়িয়ে । সেই সাথে আধো
স্বপ্নগুলো বুনে দিয়েছি
তোমার-আমার স্পর্শে ...

এরপর চিঠির পরতে পরতে
দেখতে পাও কাকে ?
শব্দ না আমাকে ?


অনঘ




আমাকে একটা কাঁচি দিও , যাতে আমি
ভবিষ্যৎ ধারার সমস্ত হেলিক্যাল সিঁড়িগুলো
বিচ্ছিন্ন করতে পারি ।
আমার পরিতৃপ্তি , অজস্র ভুলময় পাপের
মধ্য দিয়ে তোমার আমাকে আবিষ্কার
করায় । আর সেদিন যেন আমার ধারণ
দু'হাতে না হয় ।
তারপর সহস্র সেকেন্ড পরও যখন
রূপান্তর শুরু না হয় , আমি দেখতে পাই ,
"কোথাও কেউ নেই ।"
যদি সমস্ত কথা বলা হয়ে যেত তবে
আমাকে কবিতার নামে কথা চালাতে হত না ।
আবার যখন রাত ভোর হবে , ভরদুপুরে
নিজেকে বড্ড বোকা মনে হবে , বিকালে
আমার অভিনয় চলবে আর সন্ধ্যায় সবাইকে
বিদেয় দিয়ে রাতের অন্ধকারে
আমি আমার হব।

মানুষেরা গেছে হারিয়ে


একদিন তুমি নক্ষত্র হবে ,
তখন আর সৌরদিনে বাঁধা পড়বে না তুমি ,
ঠাই নিবে আলোকবর্ষে ।

কালো কী ?
শরীর কী ?
অনুপস্থিতি কী ?
আমি উত্তর খুঁজি না , কারণ,
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে ;
আমার এবং আমার কাছে ।

আমার কুড়িয়ে রাখা সব তারা
গেছে শুকিয়ে ; তাই আর
আমি ভুল ঠিকানায় খোঁজ নেব না ;
মানুষেরা গেছে হারিয়ে ।

সন্দিগ্ধ সন্দিহান



আমার ভোর এসেছে কিন্তু
সকাল আসে নি । এই ,
আধো আধো নিঃসীম ছায়াবৃত্তে
আমার টুকরো টুকরো অন্তহীন
অপেক্ষা , শূন্যতা
অন্তর্বর্তী ।

স্বার্থ খুঁজে পাওয়া আমার সব অবস্থান
নিঃস্বার্থ । তবু অলি থেকে গলিতে তুমি
নিঃশব্দ কালো বেড়ালের টানটান মেজাজে
পিছু নেবেই । গন্ধটা তোমার নিজের ,
উন্মোচনের নেশায় তাকে নতুন কোন মানুষ
দেখতে পাও তুমি ।

আবার পথ শেষ হলে , আমি ফিরে যাই
পুরোনো দরজাতে ; তাতে যেন অন্তত
ফাঁক থাকে ভেতরের আলো আসবার ,
আমাকে ছুঁয়ে দেখার ।

বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৩

এইসব বেওয়ারিশ শব্দজট বা জোট


যে বিকেলে সব আলো ধ্বসে পড়েছিল ,
প্রথম বিরামের সূত্রপাত কমা দিয়ে
আর তার পরিণতি উত্তুংগ দাড়িতে ।
মাঝে বিসর্গের দুটো শূন্যতায় ভর করে
যেসব বিসর্গ আর শূন্যভাব চেপে বসেছিল
সেইসব রোদ্দুরের ভেলায় ,
তাকে দেখে বিস্ময়বোধে বিস্ময়সূচকতা জাগে
আলোয় ঝিমিয়ে পড়া এঞ্জেলোপুলিসের সেইসব
 উল্টো হয়ে ঝুলে থাকা মৃত ভেড়ার দলের ।
এইসব দিন শেষে আমি যখন নামতে থাকি
আমার ভেতরের ঘুরানো সিঁড়ি বেয়ে আমার ভেতরের
সমতলে , আর আমার চারপাশে ভেতরের আয়না জুড়ে
পরিবর্তনকারী প্রভাবক আর তীব্র রাসায়নিক পদার্থের
ধাঁচে আমার বদলে যাওয়া প্রতিবিম্ব । আমারই অবয়ব
শত সহস্র  । আমারই প্রশ্বাস ভেজা আর্তনাদ আর কতিপয়
প্রতীক্ষাজনিত স্থবিরতা ; যদিও আমি জীবজ , জৈবিক,
যাবজ্জীবন কোন গতিরই নিরীক্ষক নই ,শিষ্য নই ।
আমার বুঝতে পারা নিজেকে না বুঝার , নিজের সংখ্যালঘু
অস্তিত্বের সাথে সংখ্যাগরিষ্ট অস্তিত্বকে মানিয়ে নেবার ,
তবু দিনশেষে নামহীন ক্ষণিকতায় আমিই আমায়
সর্বোচ্চ গ্রহণকারী , সর্বোচ্চ ত্যাগকারী ।

বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৩

নষ্ট গল্প



যখন আগুন আর রৌদ্র খণ্ডনের গল্প পূবের বাতাসে মিশেছিল ,
আর চকমকি পাথরের ঠোকাঠুকিতে নিমেষেই আগুন জ্বলে উঠেছিল ,
আর্তনাদ ময় চিৎকারে আর পূবের বাতাস তাকে এনে দিয়েছিল
অবাধ প্রশ্রয় ।

যদি নিমেষ মাত্রই হাহাকার তবে অন্য আশ্রয়ের খোঁজ - আবার
সেই পুরনো নষ্ট গল্পের ঝোঁক । আলো আর কালোর মিশেলে
কালোর প্রাখর্য - নষ্ট গল্পের শিরোনাম । আর জারণ শিখায়
বাতাসে এসে মেশে ফুসফুস পোড়া ঘ্রাণ ।

ভেজা বাতাসে নীল গোলা জল, উত্তপ্ত নেশাতুর বিকীর্ণ মেদুর ,
অগণিত রৌদ্র পোড়ার গান , ভেজা বাতাসে বাজে চামড়ার পোড়া ঘ্রাণ ,
আর সমাপ্তি তব আত্মসংঘাতী কল্পনায় , নষ্ট গল্পের খসড়া আর মহড়া
তখন ভাগাড়ের চুলায় ।

" কায়ায় কায়ায় মায়ার ফাঁদ" - মিছে মাংস , চামড়া আর রক্তের পাহাড়
এক শীর্ণ জীর্ণ কে ঘিরে ...

প্রতীক্ষা



আমার নিঃশ্বাসটুকু আটকে ছিল এগারটা বাইশ আর তেইশের মাঝখানে ,
ওর ছোট্ট ''না'' টুকুও ততখানি উপেক্ষিত ৬০ সেকেন্ডে আঘাত হানল
আমার ভিতরে ।
লাকসাম রেইলওয়ে জংশন , আমি বসে আছি আমাকে নিয়ে ,
বসিয়ে রেখেছি তাকে ঘিরে আমার সমস্ত অখণ্ড খণ্ডিত আলাপন আর
কল্পবিলাসিতাকে ।
লাইনম্যানের সবুজ পতাকা আর আমার বুকের ভিতরে ক্ষয়ে যাওয়া
লাল গোলাপের কাঁটার বিদ্ধতায় জমে থাকা কালচে রক্ত ,
আমার বুকের ভেতরের লাল তার শ্বেত ক্যামেলিয়াকে
কি কখনই রাঙ্গায়নি ?
ভোর রাতে শুকতারার আলোয় পৃথিবীর প্রথম দুটি পাখির
আকাশে উড়ে যাওয়া আর ডানা মেলে দেওয়া মুক্তবিহংগের
অবোধ আলাপে আমার প্রতিক্ষণে হারিয়ে যাওয়া,
এসবই কি নিমেষ মাত্র ?
সকাল আটটায় লোকাল বাসে অফিসগামীদের উপচে পড়া ভিড়ে
আমি ক্রমাগত কক্ষচ্যুত হয়ে পড়ি আর হারিয়ে যাই ভিড়ের তলে ,
যদিও কেউ খুঁজে নেয় না , তবু হঠাত করেই সস্তা কাজের ভিড়ে
যখন বেজে উঠে সেলফোনের টুংটাং , আমি আরও একবার হারাই
বিগত হাসি-কান্না , হীরা-পান্নার উপাখ্যানে ।
প্রখর ঝলসানো রৌদ্রে ট্র্যাফিক জ্যামে ঘামের কড়াইতে ভেজে উঠা ,
আমার পিঠে ওদের লাগাম ছাড়া ছুটোছুটি আর মেঝেয় শত
আনন্দিত কলরবের লুটোপুটি ।
বিষণ্ণ নীলচে গোধূলির আঁধার যখন মাথার উপর চাঁদোয়া মেলে ধরে
আর রাত দুপুরের আবদার যখন একে একে হাতছানি দিয়ে উকি দেয়
মনের দৃশ্যপটে তখন আমি আমাকে বিছিয়ে দিই বেলাভূমিতে ,
নুড়িপাথর আর নোনা জলের কলরবে , আবছায়া কালো প্রতীক্ষায় ...

শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৩

মগজ জুড়ে শব আর শহরের মৃতদেহ



একটি ছোট পিড়ির উপর এক প্যাকেট মস্তিষ্ক ,
তাতে রাস্তার ধারের ভাজা ডালমুট আর ঘামেভেজা রুমালের নিঃশ্বাস ,
লাল আগুনের উপর কালো কড়াইতে তপ্ত বালির বুকে ,
বাদামের দলের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ আর তোমার আর তোমার প্রেমিকার
নরম হাতের আঙ্গুল ওদের আবরণকে বিদীর্ণ করে নোংরা করে তোমাদের জুতার তল ।
তোমাদের প্রেম , কাম, স্বার্থ আর স্বপ্নের বুলি আউড়ে যাওয়া চোয়ালের ভেতর ভেঙ্গে
ক্লান্ত ক্লান্ত হয় আর মিশে যায় তোমাদের লালারসে ।

একটি ছোট টুলের উপরে এক গ্লাস মস্তিষ্ক ,
এক কোণায় সিগারেটের আ্যশ-ট্রে , তাতে কোন বৃদ্ধ ফুসফুসের যুবকের
মৃত ফুসফুসের কণা , তারও পাশে তিন মাস আগের এক রংচটা ম্যাগাজিন ,
সুন্দরী মডেল আর চটুল প্রেমের সস্তা গল্পের পরিহাস ,
মেঝেতে এক সিঙ্গারার ঠোঙ্গা , উচ্চ মাধ্যমিক সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের পৃষ্ঠা ,
আর তোমার আর তোমার প্রেমিকার এবং তোমাদের অভূমিষ্ঠ সন্তানের এথিক্স
এভাবেই ঘুরতে থাকে ফি- শতাব্দী , তোমাদের ঔরসে আর জঠরে ।

একটি ছোট টেবিলের উপর এক প্লেট মস্তিষ্ক ,
তার পাশেই তোমার পরিবারের এঁটো খাবারের বাসন ,
তরকারির ঝোল লেগে সাদা কাপড়টা ভীষণ নোংরা আর তোমার
দাঁতের ফাঁকে আটকে মাংসের এক কণা । তোমার বউয়ের মুখে দামী প্রসাধনী প্রলেপ ,
তোমার ছেলের বালিশের তলে এক প্যাকেট সিগারেট আর ...
তোমার হাতের তেলো এখন দশ ইঞ্চি পুরু, আর আমার সস্তা পাঁচ টাকার কলম ,
ভাঙবেই - তার সন্দেহ নেই কিংবা এক কাপ ব্ল্যাক কফি আর রাস্তার পাশের টঙের চা ,
যেই হিসাবগুলো আমাদের আর তোমাদের কখনই মিলবে না ।

একটি ছোট বালিশের উপর রাখা এক মাথা মস্তিষ্ক ,
তার নিউরনে অমানুষের জন্ম আর মানুষের মৃত্যু আর নগ্ন শহরের ধ্বংস স্তূপের
শেষ বাড়ির শবযাত্রা , তার একরাশ ঘিলু কিলবিল করে উঠে প্যাচপ্যাচে কাদায় ,
আর মার্সিডিজের ধাক্কায় থেঁতলে পিষে থাকে সরকারি ওই বড় রাস্তায় ।
আমার মগজ জুড়ে শব আর শহরের মৃতদেহ , আর কচি কচি ঘিলুময়
বিযোজক ব্যাকটেরিয়ার আর্তনাদ আর হাহাকার !

বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৩

বিপ্রতীপ



যতটুকু বছরের প্রথম বৃষ্টিভেজা জলকে দুহাতে আলিঙ্গন করে পাওয়া ,
তারও বেশি চোরাবালির টানে হারিয়ে ফেলা ।
যতখানি আলো , তার আরও বেশি অন্ধকার ছায়া ,
যতখানি আসল ,তারে পিছন থেকে আঁকড়ে ধরে কায়া আর মায়া ।

যতটুকু সকালের স্নিগ্ধ আলোকে পরম মমতায় দু'গালে চেপে ধরা ,
তারও বেশি মধ্যাহ্নের সত্যি উত্তাপকে ভ্রূকুটিতে দূরে ঠেলে দেওয়া ।
যতখানি সুর , তার মাঝেও বাজে অসুর ,
যতখানি হলুদ , তার মাঝেও থাকে সরষে ফুলের ভূত ।

যতটুকু বসন্তের বাতাসকে বুকে আগলে রাখা,
তারও বেশি শীতের কুয়াশায় নিজেকে হারাতে না দেওয়া ।
যতখানি ঠিক , তার আরও বেশি ভুল ,
যতখানি স্মৃতি , তার নিঃস্ব একটি ফুল ।

যতটুকু অর্ধমাসের সঙ্গী চন্দ্রের প্রতীক্ষা ,
তারও বেশি বার মাসের সাথী শুকতারাকে না চেনা ।
যতখানি ফাঁক , তার আরও বেশি ফাঁকি ,
যতখানি নীল , তার মাঝেও গরমিল ।

যতটুকু রঙিন স্বপ্নকে দিবারাত্রির কাব্য করে নেওয়া ,
তারও বেশি অতীতের দুঃস্বপ্ন থেকে পালিয়ে বাঁচা ।
যতখানি ঘর , তার থেকেও বেশি বেঘর ,
যতখানি গড়ে নদী , ভাঙ্গে তারও বেশি ।

যতখানি কাঁচা ঘুমকে নিবিড় ভালবাসায় জড়িয়ে ধরা ,
তারও বেশি বিক্ষিপ্ততার মাঝে ডুবে যাওয়া ।
যতখানি বাস্তব , তার থেকেও বেশি হ্যালুসিনেশন ,
যত বড় চিন্তা , তারও অসামান্য বাস্তব ।


যত ধনাত্মক , ক্রমে হয় শূন্য , সম ঋণাত্মকতায় ,
যত অসম্ভব কাব্য ভাঙ্গা -গড়া আর অসমাপ্ত সমাপ্তির আলাপিতায় ...

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৩

বিষমানুষের গল্প


বিষ ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমার হাত আজ নীল,
মটরের খোসা ছাড়িয়ে কখনো উপবৃত্তাকার মটর দানা
তুমি খুঁজে পাবে না ।
যে গোলকধাঁধার ভুল-ভুলাইয়ায় তুমি তোমার সচেতন অতীত,
অবচেতন ভবিষ্যৎ আর অচেতন বর্তমানকে একই পাল্লায় মাপো
তার মানদণ্ডের কাঁটাটিই বাঁকা, যদিও তুমি পৃথিবীর সেই প্রথম দিন
থেকেই তা সোজা দেখছিলে তোমার ঐ বক্র উত্তল লেন্স দুটি দিয়ে ।
কখনও বৃষ্টির সেই জলধারা যা তরল হয়ে নিচে নেমে আসে
তাকে প্রবল উত্তাপের দহনে বাষ্প হয়ে মেঘের সাথে মিশে যেতে দেখনি ।
তুমি অখণ্ড আকাশ দেখতে চেয়েছিলে অথচ তোমার দৃষ্টিসীমা
খণ্ডিত ঐ দিগন্তরেখাতেই । তুমি নদীর জলের রপোলি জোড়া ইলিশ
তোমার জালে বাঁধতে চেয়েছিলে ,অথচ এক বুড়ো ধাড়ি ইঁদুরের পোক্ত
দাঁতের ধারে সেই জালের সমগ্রতা এক বিশাল শূন্যতা ।
তুমি আগুনকে বাঁধতে চেয়েছিলে একগাছি কাঁচা সুতা দিয়ে
তাতে আধপোড়া ম্যাচকাঠিগুলোই পুড়ল কেবল নতুন করে ।
সবুজ নক্ষত্র আর ছিটকে পড়া ধূমকেতুর দল চন্দ্রপ্রেমীদের হলদে
প্রেমের আঠায় আটকাতে পারে না । ভাসমান কচুরিপানার শিকড় আর
জলের তল খুঁজে পায় না । আ্যন্টিক্লকওয়াইজ ঘূর্ণনে কেবলই উন্মোচনের
শিখিয়ে দেওয়া তত্ত্ব আর তা বদলে দিয়ে বাদুড়ের দলকে সভ্যতা শেখাতে পারবে না
তুমি কখনোই ; ওরা বরাবরের মতই ঝুলবে উলটো হয়ে ।
তবু পারলে মনে করো পশ্চিমে উঠা সেই নীল সূর্য আর '' বিষ মানুষের গল্প ''
যাদের ঘূর্ণন ছিল অনির্ণেয় ... আর যারা ছিল অজস্র মৃত্যুর কেন্দ্র ।
তুমি মনে করো, আমি মনে করাচ্ছি ...

বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৩

শ্বেত পাথরের কথা



বহুদিন এই ঘাটে পা পড়েনি তার,
বহুদিন কথার প্রাঙ্গণ ছিল ক্ষুধার্ত ,
বহুদিন হিসেব মেলেনি ছেঁড়া খাতার অংকগুলোর,
বহুদিন রাত আলো হয়ে দেখা দেয় নি ।

বহুদিন জমে আছে মৃত শ্যাওলা ঘাটের প্রথম সিক্ত ধাপে ,
বহুদিন পথ পিচ্ছিল ছিল স্যাঁতস্যাঁতে সিক্ততায় ।
বহুদিন কথার ঝুড়ি ভরে উঠতে পারেনি নতুন কথার ফুলে,
কারণ পুরোনো কথাগুলো ভাষায় সেজে উঠবার পায়নি অবসর ।

বহুদিন একটা ছোট অশ্বত্থের চারা আঁকড়ে বেঁচে আছে
ঘাটের একটি সরু ভঙ্গুর খাঁজ ,
বহুদিন ধরে ঘাটের সোপান ভেঙেছে জলকেলির তীব্র খেলায় ,
বহুদিন ঘাটের পানিতে তার পা ভিজে নি , সিক্ত এলোচুল গড়িয়ে
জলের কণা আর কারও হাতে, কণ্ঠে সুর তোলেনি ।

এমনি করে বহুদিন ...
তারপর বহুদিন পরে হঠাত বসন্তের এলোজল-হাওয়ার মাতোয়ারায়
ধুয়ে গেল ঘাটের সমস্ত ক্লান্তি, শ্রান্তি আর ধুলো ...
প্রতীক্ষায় না বহুদিনের নিত্যতায় ?

মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৩

অনিরুদ্ধের কথা



কথাগুলো জলের মত তরল ছিল না,
অত সহজে অবলীলায় গড়িয়েও যেত না ।
অত সহজে জলের মত আকণ্ঠ পানও করা যেত না ,
মেটাত না বহু উত্তপ্ততার তৃষা ।
অতি দহনের নিদাঘে বাষ্প হয়ে আর্দ্র হৃদয়কে প্রশস্তি দিত না,
আবার মেঘ হয়ে শ্রাবণের বারিধারার মত অনিন্দ্য সুধায় হৃদয়কে স্নাত করবে
তেমনটাও ঘটত না ...
তবে কথাগুলো কি ছিল স্ফটিকের মত ?
বেড়ে উঠছিল বহু দিনের নিভৃত যতনে না জানিয়ে
স্বয়ং বাড়ির মালিককে ...
ছাদের শূন্য চিলেকোঠা অল্পদিনের মধ্যেই যাদুর ফুসমন্তরের মত
ভরে গেল অজস্র ফিসফিস কথা আর কানাকানিতে ...
তারা ছুটে বেড়ায় আকাশের বুকে রঙিন ঘুড়ির মত ,
তাদের কেউ কেউ আকাশে ডানা মেলার সুযোগ পায়;
কেউ বা আবার ভোঁ কাট্টা , ছিন্নসূত্র হয়ে ভেসে বেড়ায় , কেউ বা জড়ায়
গাছের ডালে, রাস্তার তারে বা কোন বাড়ির ছাদে ।
কথার ঘুড়ি হারানোর কষ্ট হয়ত যাবে না সহজে, তবে শীঘ্রই
নতুন ঘুড়ি উড়বে আকাশে কারণ প্রতিটি পুরোনো কথাই আবার জন্ম নিবে নতুন করে,
প্রকৃতির নিয়মে ।

সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৩

খেলাঘর...তাসের ঘর...নষ্টনীড়...



খেলাঘর ...
ওদের নীলচে দেয়ালের ঘরে জানালা ছিল একটাই, উত্তুরে,
তাতে হয়ত শীতের কনকনে হাওয়া হাড় কাঁপাত ওদের পৌষে,
তবু ভালবাসার উষ্ণতায় উত্তাপ আর আলো ছড়িয়ে থাকত ওদের
ছোট আধো আলো আধো ছায়াময় ঘরটায় ।
এযেন ঠিক ভালবাসাম্য রাজ্যে ঝলসানো রুটিকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পাওয়া ।
বিলাসী চিরন্তন প্রেমমুগ্ধ গোলাপের চারা ছিল না ওদের,
ছিল কেবল ছোট জায়গায় ঘেরা একটি ছোট শুভ্র দোলনচাঁপার চারা ,
যে বেচারা অভাবের পরিসরে হয়ত ছিল কিঞ্চিত রুগ্ণ ; তবু ওদের ভালবাসায়
ও নিত্য সুরভিত হত শুভ্রতায় ।
ওদের ছিল না বিলাসী রেস্টুরেন্টের ডাইনিং হল,
যেটা ছিল একজনের প্রেমময় আবদার আর অন্যজনের অনিন্দ্য উপহার ।
ওরা বের হত বিহারে , জনগণের সড়কে , দিনের রৌদ্র আর রাত্রির ধ্রুবতারার
একই স্বপ্নিল নীল আর পেলব রাতের আকাশকে ভালবেসে ...
ওদের তরী দুলত সকাল -সাঁঝে , দিবস-রজনীতে
সন্ধ্যামালতীর সৌরভে ।

তাসের ঘর ...
ওদের সাদাটে দেয়ালের ঘরে জানালা ছিল একটাই, পশ্চিমা,
তাতে বৈশ্বিক যোগাযোগ আর প্রযুক্তির অজস্র উপাত্ত ঠাই করে নিচ্ছিল
ওদের মাঝে । যেন মানবীয় জীবনে আর সম্পর্কের জৈব- অজৈব , আবেগিক-বাস্তবিক
উপাত্তে কিছু সংখ্যা আর তরঙ্গের উপাত্তের অসূরীয় দূষণ ।
এখন ইট-কাঠের ঘরের বদলে ত্রিমাত্রিক বিম্বময় ভাসমান ঘরের প্রসপেক্টাস
হাতে ঘুরে ওদের দুজনের । আজ পূর্ণিমার চাঁদের থেকে গোলাকার ডিস্কের চকচকে
প্রলেপের ভাজে লুকানো তথ্য ওদের কাছে যেন মানুষকে চেনার, ধরার মাধ্যম ।
ওরা ধরেই নিয়েছে কণ্ঠস্বর মিথ্যা বলে , চোখও মিথ্যা আবেগকে দেখায় ,
সত্য কেবলি ঐ উপাত্তে । তাই সেই আধো আলো আধো ছায়ার ঘর এখন
হুট করেই তাসের ঘর , তাতে সাহেব-বিবি-গোলাম টেক্কা-নহলা-দহলা
সবার যান্ত্রিক অঙ্কিত আবাস । এখন ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের আলোই সত্য ,
সূর্য, ধ্রুবতারা আর আকাশের বদলে মহাকাশের স্যাটেলাইটগুলোই গতিতে ঘূর্ণায়মান ,
নয় জড়তায়, স্থবিরতায় ।

নষ্টনীড় ...
ওদের লালচে ঘরের দেয়ালে জানালা একটাই, দখিনা,
তা দিয়ে প্রবেশ করে হয়ত বসন্ত বাতাস বা বসন্ত জীবাণু...
ঘর রুদ্ধ আবাস নয় , তাই বেরিয়ে পড়ে অনেক কিছুই, একই সাথে ঢুকে অনেক কিছুই ।
ত্রিমাত্রিক বিম্বময় ঘরকেও চিরন্তন ভেবে বেঁচে থাকা যায় না , যা ছিল না, যা নেই,
যা থাকবে না ---সেই মরীচিকার সাথে ওরা কেউই থাকবে না হয়ত শেষ পর্যন্ত ।
ঘরে ফেরার নীড় এতদিনে নষ্টনীড় ...সমগ্র শান্তি, সুখের আধার আজ পরিত্যক্ত প্ল্যাটফর্ম ।
অভ্রভেদী হাহাকার আর মর্মভেদী কান্নার জান্তব সুরে জন্ম নিবে কি ?
সামাজিক দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান না কি ......
মর্মন্তুদ জীবন যাপন ?

বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

''আগুনে সন্ধি ''



-কিছু মনে করবেন না , জ্বালাবো আপনাকে , আপনি আবার রেগে গিয়ে আগুনে কাঠ ছুড়ে দিবেন না যেন ।
-এতই যদি পোড়ার ভয় তবে কেন আমাকে জ্বালাতে আসা ?
-উহু ... পোড়ার ভয় নেই কারণ আমি নিজেও জ্বলছি এক দারুণ আগুনে ।
- তাই নিজের আগুন অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেবার অপচেষ্টা , ভীষণ হিংসুটে তো তুমি ।
-যে আগুন জ্বালিয়েছে তাকেও আগুনে পোড়ার স্বাদ দিতে চাই ।
-আমি তো জানতাম নুন ছাড়া স্বাদ হয় না , তা আগুনে কিঞ্চিত নুন ছড়িয়ে দেওয়া হবে কি ?
-তুমি ....
-কি?
-পারোও বটে ।
-হাহাহা...পারি বলেই তো আগুন জ্বালালাম , আর তুমিও জ্বলেপুড়ে ছুটে এলে আমাকে জ্বালাতে । এখন তোমার ছোঁয়াচে আগুন দিয়েই আজ সকালের চায়ের পানি গরম করব ।
-আমাকে কি তোমার কাজের লোক পেয়েছ নাকি ?
-না, তা হবে কেন, তোমাকে মাইনে দেব সেরকম মাইনেই তো আমি পাই না । কেন আমাকে এককাপ চা খাওয়ালে তোমার আমাকে জ্বালাতে আসা ব্যর্থ হয়ে যাবে নাকি ?
-আচ্ছা ...এবার একটু থামো । আমি চা করে দিচ্ছি । তা তোমার চায়ের সরঞ্জাম কোথায় ?
-নেই। মোড়ের ঐ দোকানের ছোট ছেলেটা দিয়ে যায় বরাবর , ওদের দোকানে বোধহয় ৮০-৮৫টাকার মত বাকি জমেছে । দাঁড়াও আজ তোমার জন্যও এক কাপ আনাই । না, তুমি তো খাবে না বোধহয় , ওদের চায়ের কাপগুলো ভীষণ নোংরা , তাতে রাজ্যের লোকের ঠোঁট আর থুথুর ছোঁয়া , তোমার ঐ নরম ঠোঁট দুটো ময়লা হবে ।
-অত ভণিতা করো না । তুমি জানো , আমি এমনিতেও চা খাই না আর আমাকে খাইয়ে তোমার বাকির অংকটা আর বাড়িয়ো না ।
-কেন তুমি আমার বাকিটা মিটিয়ে দিলেই তো হয় ।
-তুমি নিবে না , আমি জানি ।
-কেন নিব না ? যে মেটাতে জানে তার কাছে নিজের অক্ষমতা ঢাকার ন্যাকামি নাহয় নাই করলাম ।
নাকি করজোড়ে অনুরোধ না করলে তুমি মেটাবে না ?
-আজ তোমার হল কি ? কেবলি পোড়া কথার ফুলঝুড়ী ...
-জ্বালাতে যখন এসেছ তখন পোড়া জিনিসই তো পাবে , তাই নয় কি ?
-আচ্ছা, যাও জ্বালাবো না , আমি চললাম ।
-ওমা, এক্ষুণি চললে ! তাহলে আমার সকালের নাস্তা , দুপুরের খাবারের কি হবে ?
-পানি খাও , পানিগুলোকে তোমার ভিতরে সঞ্চয় কর , তাহলে আমি পোড়ালেও তুমি পুড়বে না ।
-তা ওয়াসার পানির বিলটা কে দিবে শুনি ? নাকি আমাকে রাস্তার কাক আর কুকুরদের মত নর্দমার পানি খেতে হবে ? তবে অগ্নিবর্ণ দেবী কৃপা করলে এই চাতক কে কিছু জল দিতে পারেন ...তাতে ভক্ত অনুরাগী বই বিরাগী হবে না ।
-আর তা আপনার তথাকথিত ''দেবী''কে কোন অর্ঘ্য নিবেদন করবেন?
-বলুন, আপনার কি চাই ?
-একটি ''আগুনে সন্ধি পত্র'' ।
-সন্ধির আগুনে শর্তগুলো একটু শুনি ।
-আপনাকে রোজ জল ঢালতে হবে ?
-কোথায় ? তোমার বাবার বাগানে ?
-উহু ...শিকড়ে ।
-গাছের ?
-উহু ...আমার ''ইন্দ্রিয় মানচিত্রের গভীর শিকড়ে ... '

বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ছয়



পুরনো অন্ধকার ভয়ের বিষাক্ত কৌতূহল ,
আমি ডুব দেই আবারো মজা পুকুরে ।
দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে আমার ভুল হয়
আরও একবার, আজ । আর অনুক্ত রাগে
গরম চায়ে ঝলসে ফেললে তুমি
মুখগহ্বর তোমার । নির্বাক প্রহসনের উত্তাপে
তুমি মরীচিকা দেখেছিলে কিনা জানি না ...
তবে যাকে দেখেছ সে আমি নই
আর আমিও দেখেছি যাদের সে
তুমি বা তোমরা নও ।
কায়ায় কায়ায় মায়ার ফাঁদ ,
আলোও দেখায় কিছু ভুল ;
তাই কেউ হতে চায় পরগাছারও পরগাছা ।
আর ক্ষুব্ধ শূন্য ভূমি খা খা করে চৈত্রের খরতাপে ।
তার অন্তর্গত অভিযোগ ,'' আমি তোমাকে বৃক্ষ
করতে পারি, তবে কেন হতে চাওয়া পরগাছা ! ''
দ্বিতীয় দৃশ্যপটে হাসি আর অব্যক্ত চাওয়ার অভিনয় ,
যা চেয়েছি তা বুঝাই নি,
যা বুঝিয়েছি তা চাইনি ... আমার বেলা বয়ে গেল
আত্মযুক্তির খণ্ডনে ... তবু সে নিস্পৃহতা !
আমার হাত তাই সরে আসে আমার প্রাক-অনুমানে ।
তবু শূন্য থেকে শুরু করে আসা হবে ফিরে আরও একবার ।
তখন আমার আকাশ কে জলে ভিজালে হয়ত আর নীল রং উঠবে না ।
আর শেষ ঘণ্টায় নয় - ছয়ের খেলা থেকে
পড়লামই বা আমি বা তোমাদের কেউ একজন বাদ !

শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

wrong রঙ আর রঙ্গমঞ্চ



জলছবির কালো রং হচ্ছিল ধীরে ধীরে ফিকে
আর তার মৃদু মন্থর শূন্যতা ভরিয়ে দিচ্ছিল
অর্বাচীন ফ্যাকাসে ভাব বা অনিন্দ্য আলোর রং ।
রোজ সকালে স্কেলেটনের ভিতর থেকে ছিটকে আসা
ধুলোর রং সিঁড়িতে গড়াগড়ি খায়
আধোআধো আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ।
মাঝে মাঝে চায়ের কাপে চিনির হেরফের
আর আলাদা করে এখন নজর কাড়ে না ।
প্রতিদিনের চেনা চায়ের কাপে চায়ের রং এখন একটাই
হাতের অভ্যস্ততায় লালিত সেলফোনটির রিংটোনের মতই একঘেয়ে
আর তামাটে ললাট ক্লান্তিতে স্পর্শ করে আকাশের নীল মায়া ...
যা প্রতি গোধূলিবেলায় সাজে রক্তাক্ত হৃদয়ের আগুন রঙে ।

শেষ বিকেলের গল্প



কোন এক বিগত সন্ধ্যায় বেলাভূমিতে লিখেছিলাম আমার প্রথম গল্প
সেদিনের প্রাক-সন্ধ্যার এক সমুদ্র স্রোত ধুইয়ে দিয়ে গেল তা,
আর রেখে গেল একটি অদ্ভুত নীল শঙ্খ !

আমার নিউরনের সমস্ত অনুরণন, আমার প্রথম উপার্জন,বিগত সব সঞ্চয়
একত্র করেও সেই শঙ্খের বিনিময় হল না সমুদ্রের সাথে !

হয়ত আমি বণিক ছিলাম না আড় জন্মে , তাই এজন্মের প্রথম বাজারে
সেই নীল শঙ্খের বিনিময় আর আর আমার সাথে হল না !

তারপর বহুবছর আমি ফিরে যেতে চেয়েছি সমুদ্রে , শঙ্খের সেই নীল ডাক
প্রতিক্ষণ আমার নিউরনে আমার স্নায়ুতে আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে ,
আর অলব্ধ যন্ত্রণায় আমি আমার ভিতরে কাতরেছি !

এরপর,
সেই অভূতপূর্ব দুপুর ... আমার চারিধারের সমস্ত সজ্জার আর শয্যার
মাঝেই পেলাম সেই নীল শঙ্খের ডাক,
আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় বলে উঠল সে আসছে
আর,
তুমি এলে !

আমার প্রথম মৃত্যুর আগে তোমাকে নিস্তব্ধ দেখেছিলাম
আর দ্বিতীয় জন্মে তোমাকে দেখলাম মুখর,
তাই আমার ঠোঁটে আর ভাষা ফোটে না ,
তা যেন চৈত্রের দুপুরে চাতক পাখির মতই
অপলক তৃষ্ণায় থাকে একরাশ উত্তাপ নিয়ে বেঁচে !

সংখ্যারেখায় আমরা বাঁচি দুটো বিন্দুর মত অনিয়ত অধ্রুব নিত্যতায়
আমাদের মাঝের দুই সমকোণ শূন্য ছুঁই ছুঁই করেও
একটি ভগ্নাংশের বাধায় যেন শূন্যে নেমেও নামে না
সমাপতনের প্রাক- মুহূর্তেও সব অঙ্ক নামে বিচ্ছিন্ন পতনে !

আমার বিচ্ছিন্ন আবর্তন আজ টুকরো টুকরো করেই তোমায় ঘিরে,
যেখানে সব পৃথিবীর সমস্ত স্নায়বিক কেন্দ্র এসে মিশেছে
কিন্তু আমি প্রায়ই হারাই তোমার স্নায়ুর রেখা
বিচ্ছিন্ন ক্লান্ত অবসাদে !

আমি জানিনা তুমি উজ্জ্বল সূর্যের মত ধ্রুব না কি
ধ্রুবতারার মত উজ্জ্বল !
তবু আমি জানি আমার জগতের নিত্য আলো মেলে কোথায় ...
এটা ''শেষ বিকেলের গল্প'' ছিল না , কারণ এরপরও
রাতের আকাশে ধ্রবতারা জেগে থাকবে ...
থাকবে না কেবল অনির্ণেয় অন্তরক !

শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

বীক্ষণ প্রণালি



চোখ আমার একান্তই ব্যক্তিমালিকানাধীন বীক্ষণ যন্ত্র ...
লবণাক্ত অ্যাকুয়াস হিউমারের আধার , এই খুদে সমুদ্র দিয়েই
আমি মানুষ দেখি, দেখি সম্পর্ক ...
অণুবীক্ষণ তার পূর্ণতা পায় যাবতীয় আণবিক, পারমাণবিক ও
পরমানবিক পর্যবেক্ষণে । এই মানবীর মানবীয় চর্মচক্ষুতে
প্রতিদিন অজস্র অণু অনুরাগ আশ্রয় নেয় মানুষ আর সম্পর্ককে ঘিরে ...
দূরবীক্ষণ অদূর ও সুদূরের সুলভ ও দুর্লভকে কেবলি অকারণ বড় করে ,
তার সামান্য ''সু' ও অসামান্য অপরিমিতি নিয়ে মরীচিকাময় হয়ে উঠে ...
আর নভোবীক্ষণ আমাকে দেখায় মহাশূন্যের চিরায়ত আঁধারের বুকে
চরের মত জেগে থাকা নক্ষত্রের চিরদৃশ্যমান অস্পৃশ্য অধরা নৈকট্য ...
শেষটায় প্রায়ই হাত বাড়িয়ে ঠেকে শূন্য ,তাই মহাশূন্যের শূন্য অংকের
মালিকানা পেতে চেয়েছিলাম ।
অতঃপর বীক্ষণ যন্ত্রে চোখ রেখে দূরে চলে যাওয়া চরিত্রকে
কিছুতেই কাছের করে দেখতে চাই না ,
অনাদি মুহূর্তে দৃষ্টিহীনতা , ক্ষীণদৃষ্টি আর দৃষ্টিভ্রমের সব উপসর্গকে এড়িয়ে
একটি আগুনে পাথরকেই করেছি আমার চোখের মণি ,
তা আমার মানবীয় মনের অন্তর্দৃষ্টি ...যেখানে সতেজ থাকে
মানুষ, সম্পর্ক, সত্য, আলো ,অনুভূতি আর রুদ্র রৌদ্রের তেজোদ্দীপ্ত জ্যোতি ...

সোমবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৩

মণিহারা



সেদিন নিস্তব্ধ দুপুরের কড়া রোদে গাছের শাখে আগুন ধরেছিল ,
দাবানলের প্রবল হুতাশনে নগরীর তিলোত্তমার চমক ভেঙ্গেছিল ;
ও অগ্নি -- বর্বর এবং উষ্ণ; ওর উষ্ণতায় সুখ, বর্বরতায় সুখের তীব্র পিপাসা ।
ওর জ্বলন্ত আলোয় পতঙ্গের আত্মাহুতির তীব্র নেশা ,
ওর যজ্ঞের অমোঘ ধূমে হৃৎপিণ্ডের নিদাঘ প্রদাহ , সেই প্রদাহে
তিলোত্তমার হৃদয়ে আজ তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্যের মরুভূমি , সেই মরুভূমিতে
পথিক পথ ভোলে , নব্য মরীচিকার পিছে ছোটে আর আকণ্ঠ পান
করে নোনাজল । জলের নেশা আগুন লাগায় উন্মত্ত মস্তিষ্কে ...
আর শিথিল করে আনে প্রতিটি স্নায়ু নমনীয় হ্যালুসিনেশনে ...
তাই প্রতি সকালে ক্যাসেট রিওয়াইন্ড করার
চাকরি নিয়েছে ও অভ্যাসের অফিসে ! আর সেলারি ?
একটি সুষুপ্ত ম্যাচবক্স ...!

সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৩

মূক



বিহ্বলতার শেষ প্রান্তের হাতছানিতে অবশেষে
ধ্যান ভাঙে সহস্র বছরের জটাধারী স্থবির সন্ন্যাসীর ;
মুদিত চক্ষু উন্মীলিত হওয়া মাত্রই কোলের 'পরে
ঝরে পড়ে চোখের উপর জমে থাকা
শতাব্দীর রাশিকৃত ধুলো ;
এখন তার জটাজূটের অধিক জটিল বিষয়েও
''টিকটিক'' করে সায় দেয় তাসের ঘরের
দেয়ালে ঘুরে বেড়ানো টিকটিকির দল ;
তার মেঘমন্দ্র তপস্যাকে দৃষ্টিত্যাজ্য করে
তার আসন সম্মুখে
রাজ্যের ভাগাড় এনে স্তূপীকৃত করে
শহরের সব ছিন্নবস্ত্র আবালবৃদ্ধ টোকাইয়ের দল ।
আর শিকারী মাকড়সাটি সন্ন্যাসীর স্থবির দেহকে
আঁকড়ে ধরে ছড়াতে থাকে তার মোহমন্ত্রের জাল;
কৈলাসে সহস্রাব্দের তপস্যামুগ্ধ অসহনীয় নীরবতা আজ
খানখান হয় ঠুনকো মানবীয় হাতের নিমেশমাত্র কড়াঘাতে
আর তার জটাজূটে আখড়া গড়ে তোলে রাজ্যের
সব ইঁদুর , ছারপোকা, কুকুর আর ভেকের দল ।
ত্রিকালে ত্রিমূর্তির বহুরূপ দর্শন শেষে ধর্ষিত সন্ন্যাসী ভাবে
যদি বিগত অতীতের ন্যায় বিগত হওয়া যেত
আরো একবার; কিন্তু ততদিনে সন্ন্যাসী তার উত্তুংগ সম্ভ্রম হারিয়ে
নেহাতই এক সাদামাটা আত্মসমর্পিত মূক গৃহী ... ।

''অণু'' রক্ত



ভাষাকে হারিয়ে শব্দকে খুঁজতে গিয়ে সে
আবিষ্কার করে শব্দদের শব
আর তার বিপুল নীল তিমি অবয়বধারী সত্ত্বার
মাঝে আটকে পড়া পিপড়েরূপী সত্ত্বা
আর তাই বেরুবার পথ খুঁজে পায় না ।
তাই উট পাখির স্থূলত্বকে বাদ দিয়ে
সে আজ খুঁজে নিতে চায় বুলবুলি যুগলের চপলতা
যেখানে রৌদ্র কণা শিশির জলে রংধনুর সাত রঙ
নিয়ে আছড়ে পড়ে, আজ সেই ক্ষুদ্র দর্পণে
তার অবয়ব ধরা দিতে চায় কোন মানস সরোবরের
স্ফটিকস্বচ্ছ জলকে ত্যাজ্য করে ।
শ্রাবণ মেঘের ঘনঘটা কে পাশে সরিয়ে রেখে
সে আজ খুঁজে নিতে চায় হেমন্তের লঘু কুয়াশা
যেখানে দিনের শেষে পিঙ্গল আকাশ বহুল
প্রতীক্ষিত মিলনের সাঁঝবাতি জ্বালে স্বপ্নের
সোনার কাঠির পরশ বুলিয়ে , আজ সেই প্রিয়মিলনের
আকাঙ্ক্ষায় নববর্ষা নামে তার হৃদয়ের সুতীব্র
কুলীন স্বতন্ত্র বিচ্ছেদের 'পরে ।
বিশ্বপৃথিবীর সমস্ত নক্ষত্ররাজির দুর্লভ মোহ ত্যাগ করে
সে আজ ভালবাসা আর স্বপ্ন-আশার মৃদুমন্দ প্রদীপকে
মেঘমন্দ্র স্বপ্ন চোখের প্রত্যাশায় আঁকড়ে ধরে ...
প্রিয়ের প্রতি অনুরক্ত হৃদয়ের ''অণু'' রক্ত ক্ষরণ
আজ শ্বেত শুভ্র বকুল ফুলগুলোকেও গোধুলির আবীরের
ছটায় রাঙিয়ে তোলে ...
নীলকণ্ঠের সুতীব্র বিষের নীল আবেগ ত্যাগ করে
পাথরের বেদীমূলের উপর বৃন্তচ্যুত রক্তলাল জবাটির
তপ্ত লোহিত বর্ণকে সে আসীন করে সমগ্র
''অণু'' রক্ত স্নাত আত্ম বিচ্ছেদের পরে ...
আর খুঁজে নেয় শুভদৃষ্টিতে তার সমগ্র অমঙ্গলের মঙ্গলকে ।

অমানুষ



যখন স্বভাবসুলভতার স্বাভাবিক রৌদ্র
কাল্পনিক ডাইনোসরের পদতলে
কেঁচোর মতই পিষ্ট হয় ...
আর তার গলিত দেহ থেকে
উগড়ে আসা দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠে নিঃশ্বাস ,
তখন নৃমুণ্ডধারী কাপালিক অতিকল্পবিলাসে
হারিয়ে আয়োজন করে দ্বিতীয় ভৈরবী বধের ;
তানসেনের অপার্থিব সুর যখন আজ অভ্রভেদী হাহাকার
হয়ে সুতীক্ষ্ণ সায়কের মত বিদেহী বাতাসের সুর ভেদ করে ,
তখন যেন প্রতিদিনের বহুমৃত্যুর আগের শেষ গান তার
চাবুকের আঘাতে তীক্ষ্ণ আর্তনাদের বিলাপ তোলে ;
তাই যদি সত্যিকারের ''অমানুষ'' হতে নাই পারা যায়
তবে সেই চিরঅদৄশ্য অকস্মাৎ জাগরূক ডাইনোসর
যেন কোন আরেক বিবর্তনে দৃশ্যমান বাদুড় হয়েই জন্মায় ,
যেই বাদুড় না ছিল পশু , না ছিল পাখি ।
নতুবা চির আদিম সেই ''বুমেরাং'' এর আঘাতে
জন্ম নেবে অজস্র ''অমানুষ'' ।

বুধবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৩

অর্ধেক মানবী , অর্ধেক কল্পনা



আমি সৃজিত হয়েছিলাম মানবী রূপেই
চাঁদের জ্যোৎস্নায় মোড়া ছিল না
আমার ভিতর ও বাহির ...
তবু আমার প্রেমিকের উপমায়
আমি মোহিত হয়েছিলাম চন্দ্রকথায় ...
তারই প্রসন্নতার খাতিরে গড়ে উঠেছিল
আমার চাঁদ হয়ে উঠবার নানা কাল্পনিক
বাহ্যিক আয়োজনের ...!!!
কিন্তু তাতে আমার আত্মা বঞ্চিত হল
দিবাকরের প্রত্যক্ষ কিরণের ...
আর সেই সুবাদেই দ্বিতীয় কোন পুরুষ
সহসাই বলে উঠেছিল ,
'' চাঁদেরও কলঙ্ক আছে '' ...
অতঃপর বোধোদয় হল আমার প্রেমিকের
আমি অভিযুক্ত হলাম প্রতারণার দায়ে ...
আর আমায় শাস্তি দিল আমারই স্বপ্নদৃষ্ট
মোহস্বপ্নের পথিকৃৎ প্রেমিক ও দ্বিতীয় পুরুষ !!!
সেই চাঁদ আজ অম্লের তীক্ষ্মতায় ঝলসানো
সমগ্র মানব-মানবীর চোখে বীভৎস
দ্বিতীয় কোন শ্রাবস্তীর কারুকার্য !!!

আমি সৃজিত হয়েছিলাম মানবী রূপেই
ফুলের সৌরভ ছিল না আমার নিঃশ্বাসে
তবু আমার প্রেমিকের কাছে
ছিলাম আমি জগতের শ্রেষ্ঠ ফুলটি ...
তাই fool আমি ফুল হয়ে
উঠবার অমোঘ চেষ্টায় অস্ত্রোপচারে
আমার কাঁটা সরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম
কোমল পাপড়ির পেলবতা !!!
আর প্রত্যাখ্যাত দ্বিতীয় কোন পুরুষ
সেই আক্রোশে ছিন্ন করে পিষ্ট করল
পদদলিত করল সেই কোমলাবয়বধারী
ফুলটিকে ...!!!

আমি সৃজিত হয়েছিলাম মানবী রূপেই
গঙ্গার মত পবিত্রতা , তার উৎসের শাণিত
ক্ষুরধারা আমার নাই ছিল !!!
তবু আমার প্রেমিক আমার চলায়
খুঁজে পেয়েছিল নির্ঝরিণীর চঞ্চলতা !!!
আর বর্ষায় প্লাবনের অভিযোগে
দ্বিতীয় কোন পুরুষ রুখে দিল
আমার স্রোতস্বিনীর চঞ্চলতা ...
দূষিত হল আমার স্বচ্ছ জল বিষাক্ত দূষণে
চাপা পড়ল আমার কান্না বহু
মানব-মানবীর নিত্য হাসি-কান্নার ঘরকন্নায় !!!

আমি সৃজিত হয়েছিলাম মানবী রূপেই
শান্তি সঞ্চারিণী আমি হয়ত নাই ছিলাম'
বিষবৃক্ষের বীজ হয়ত আমিই বপন করেছিলাম
গন্ধম বৃক্ষের ফল হয়ত আমিই আদমকে খাইয়েছিলাম
তবু আমার প্রেমিক আমার চোখে নিবিড় অরণ্যে
নীড়ের আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল ...
আর সেই ছলনাময়ী , মমতাময়ী আমি
ইট পাথরের নীড়ে দ্বিতীয় পুরুষের
প্রহসনে আমি ছিলাম তার
শক্তি আর পৌরুষ প্রদর্শনের মঞ্চ !!!

আমি সৃজিত হয়েছিলাম মানবী রূপেই
দেবী হয়েও নয় , পশু হয়েও নয় ...
মানবী হয়েই !!!