শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

Labyrinths of Mutual Nothingness


  • মাথার চারপাশে বায়ুর ঘূর্ণি , ধুলো মাথায় দেখছি টেবিলের কোণ থেকে বেরিয়ে আসা আমার ওড়নার লাল-হলুদ সুতো । ও ঘূর্ণিতে উড়ছে কিন্তু উড়ে যেতে পারছে না...... ঘুরছি আমিও কিন্তু বাস্তব বুদ্ধির অভিকর্ষের টানে  উড়ে যেতা পারছি না আমিও...... আমার মাথায় এসে বসেছে অগুণিত পাখি, আসছে , উড়ে যাচ্ছে...... আমার মনে পড়ছে রবি'র সেই খাঁচার পাখি আর বনের পাখি......

  • খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে বনের পাখি ছিল বনে। একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে, কী ছিল বিধাতার মনে। বনের পাখি বলে - 'খাঁচার পাখি ভাই, বনেতে যাই দোঁহে মিলে।' খাঁচার পাখি বলে - 'বনের পাখি আয় খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।' বনের পাখি বলে - 'না, আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।' খাঁচার পাখি বলে - হায়, আমি কেমনে বনে বাহিরিব!'


  • বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি বনের গান ছিল যত, খাঁচার পাখি পড়ে শিখানো বুলি তার - দোঁহার ভাষা দুইমত। বনের পাখি বলে - 'খাঁচার পাখি ভাই, বনের গান গাও দিখি।' খাঁচার পাখি বলে - 'বনের পাখি ভাই, খাঁচার গান লহো শিখি।' বনের পাখি বলে - 'না, আমি শিখানো গান নাহি চাই।' খাঁচার পাখি বলে - 'হায়, আমি কেমনে বনগান গাই।'

  • বনের পাখি বলে - 'আকাশ ঘননীল, কোথাও বাধা নাহি তার।' খাঁচার পাখি বলে - 'খাঁচাটি পরিপাটি কেমন ঢাকা চারি ধার।' বনের পাখি বলে - 'আপনা ছাড়ি দাও মেঘের মাঝে একেবারে।' খাঁচার পাখি বলে - 'নিরালা সুখকোণে বাধিঁয়া রাখো আপনারে।' বনের পাখি বলে - 'না, সেথা কোথায় উড়িবারে পাই!' খাঁচার পাখি বলে - 'হায়, মেঘে কোথা বসিবার ঠাঁই!'

  • এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে তবুও কাছে নাহি পায়। খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে, নীরবে চোখে চোখে চায়। দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে, বুঝাতে নারে আপনায়। দুজনে একা ঝাপটি মরে পাখা কাতরে কহে - 'কাছে আয়!' বনের পাখি বলে - 'না, কবে খাঁচায় রুধি দিব দ্বার।' খাঁচার পাখি বলে - 'হায়,
মোর শকতি নাহি উড়িবার।'
  • তারপর...... আজ রাতে...... দুই পাখি ...... আবার মুখোমুখি......... অতঃপর......
নির্বাক ওরা ছিল না কেউই, তবু কথা বলার আয়োজনযেন বাংলা ব্যাকরণের বিপরীত শব্দ দেওয়া- নেওয়ার ছেলেমানুষী খেলা....... চাওয়া দুজনার, না পাওয়াও দুজনার... তবু ছেড়ে যাওয়া হয় না কোন অজ্ঞাত মোহে...ছোঁয়ার বহু দূরে আমৃত্যু অপ্রাপ্তির খুব নিকটে... জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি কোন মন্থর বৃত্তের গণ্ডিতে বাস দুজনার...প্রাপ্তি কেবলই দীর্ঘশ্বাস আর নীরবতার আমৃত্যু অস্পষ্টতা ...আজও অনেক কিছুই বুঝে অনেক কিছু না বোঝার বোঝা......ওদের মাঝের বৃত্তের গতি মন্থর, তাই বলে গতিহীন নয়...ক্রমমন্দনে গতি শুন্যতায় পৌঁছায়নি বরং প্রাপ্তির শূন্যটা সাম্যবাদে বিন্দুকে ঘিরে জন্ম দিয়ে চলে  আরও না জানার অগণিত বৃত্তকে আর সেই বৃত্তকে ঘিরে ওদের আজও পরিক্রমণ......একে অন্যকে পাবার কাম আজও অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়নি......সেই অঙ্কুরের ভুক মেটায় না জানি কোন রসদ !!!একজন চায় বন্ধনের বিস্তার আরেক জনে চায় বন্ধনের গভীরতা...কিন্তু তাই বলে বন্ধন গভীরতায় বিস্তৃতি পায় না... কেবলই পারস্পরিক শূন্যতার জটিল গোলক ধাঁধাঁয় পরিক্রমণ করেআজ , কাল , পরশু, সপ্তাহ , মাস, বছর, শতাব্দী ......অতঃপর একই রূপ একইকালীন পরিক্রমণে প্রশ্নবিদ্ধ হয় চোখের বালি ??? অভ্যস্ততায় না জানি কোন চাওয়ায় হেসে চোখের বালিকে উড়িয়ে দেয় স্বয়ং প্রশ্নকর্তা বনের পাখি... খাঁচার পাখিটি নীরব তার আপন অসম্পূর্ণতার চিন্তায়... উত্তর সে খুঁজেও পায়...তবু মুখস্থ বুলি ওর , সহজ কথা পায়না বলতে সহজে......অথচ যা ছিল সবচেয়ে সহজ তাই হল সবচেয়ে কঠিনবন্ধন আর মুক্তির সীমাহীন ব্যুৎপত্তিই জন্ম দিল দুজনার মাঝে অতল নীরব সিন্ধুর ; সিন্ধুর ঘোলা জলের অস্পষ্টতাআর কাটে না অথচ স্পষ্টতা ছিল কাম্য দুজনারই তবু পারস্পরিক অক্ষমতার জের ধরে স্পষ্ট হল না কিছুই এবং তারপর ওরা পাখি দুটো আবদ্ধ হল আজ রাতে কেবল পরিচিতের শিরোনামে...... যা আরেকটি বৃত্তের সীমাবদ্ধ গণ্ডি টেনে দিল দুজনার মাঝে......সেই অগণিত বৃত্তকে মাঝখানে রেখে ওরা অপেক্ষায় প্রহর গোণে পারস্পরিক বৈপরীত্যের সেই ছেলেমানুষী খেলায়...আর হাসেন বিধাতা... এই দুই বিহঙ্গীর প্রহসিত প্রতিজ্ঞায়...... 

বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কার্বন ড্রিমস সোনালি মোড়ক – ধূসর বাস্তবতা







ওর অনেক কথা এমনিই-
নেহাতই কালক্ষেপণের জন্য
ও- এই শহরের আমুদে মানুষদের একজন
যারা কথার পিঠে কথা বলে
আফিং এর নেশায় ভোলায় মানুষকে
ওর শ্রোতাদের মস্তিষ্কে ওর ধুলো কথা
ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে ওকে ঘিরে

আর ও চলে হেয়ালিতে ভর করে
ওর খেয়াল আর জিদের রাজত্ব কায়েম করে ।

গতিশীল আধুনিকতার ছাঁচে নিজেকে ঢেলে
আজ ও অন্য কেউ ।
আধুনিকতার সোনালি মোড়কে জড়ানো
ধূসর বাস্তবতা ওকে আলেয়ার আলো’র মতই
তাড়িয়ে বেড়ায়। তবু ক্লান্তি...... অ্যালকোহলের
ঝাঁঝাঁলো তরল নেশা সেই ক্লান্তিকেও
ওর রক্তে মিশিয়ে দেয়, আরও বিষিয়ে
তোলে ওর ফুসফুসকে । কার্বনের ক্ষুদ্র
কণাগুলো ওর হৃৎপিণ্ডের ফাঁকে
আশ্রয় নিয়ে দিয়েছে প্রশস্ততা
ওকে নষ্ট আমোদে আহ্লাদিত হবার ।

কিন্তু ওতো জানে ওর সত্য সত্ত্বা
যা ও নিজের হাতে বিষিয়ে দিয়েছে
তাতে তো শুকতারাকে পাওয়া চলে না,
তাই ও শুকতারার আগে পিছে মিথ্যে
অট্টালিকার জাল বুনে...দেখাতে চায়
শুকতারাকে কার্বন ড্রিমস......
ওর স্বরচিত আকাশের কান্না শুনে শুকতারা
শুধায়, ‘’ আসমান তুই কাঁদিস কেন অট্টালিকা পাহাড়ে ?’’
মুছে দেয় ওর চোখের জল...
তবু শুকতারা নক্ষত্র
কার্বন ড্রিমসের সোনালি মোড়কের
আড়ালের ধূসরতা ওর আলোকে
বেশিদিন ভোলাতে পারেনি,
তাই ঐ দোপেয়ে জীবটির মিথ্যা
হয়ত ওকে আঘাত করে কিন্তু কাঁদায় না ।

তাই মহাকাশের শুকতারা উজ্জ্বল
কারণ ওর স্বপ্ন
আলোকিত মহাবিশ্বের নক্ষত্রে ঘেরা......

মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কার্বন পরী





দুপুরটা আজ ক্লান্ত ছিল না,
ছিল না হাফিয়ে তোলানো গুমোট ভাব
আলসেমিকে প্রশ্রয় না দিতে ো হাতে
তুলে নিয়েছিল মন্থন দণ্ড
তবু এলোকেশে একটু
এলিয়ে পড়ে ও শূণ্য বিছানায়; শিথিল
হাতখানিকে ও ছড়িয়ে দেয় ডানার মত করেই,
তারপর চোখ বুজে আসে ওর, রাত্রি জাগরণের
ক্লান্তিতে নয়
ওর অবচেতন মনের ক্ষণিক ক্ষমতা লাভে।
ভাবে ও ওর পূর্বজন্মের কথা; যখন ও ছিল
কয়লাখনিতে
না, না, কঠিন, চোখধাঁধাঁনো হীরা হয়ে নয়,
আজকেরম মত কয়লার রূপভেদেই জন্ম ওর। সেই জন্মলগ্ন-
যেদিন খনির অন্ধকার থেকে পৃথিবীর আলো দেখেছিল ও
তখন থকে অদ্যাবধি পড়ে আছে ও একটি
তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অন্ধকার সেলারে
অগণিত আরও
কার্বনদের সাথে। ওদের গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে
স্বর্ণ মৃত্তিকার গোল্ডেন ট্যাগ , ওদের মস্তিষ্ক থকে সব আবেগ,
অনুভূতি, কথা কেড়ে নিয়ে গেঁথে দেওয়া হয়েছে একটি লক্ষ্য-
’’নিঃশেষ কর নিজেকে বেগবান সভ্যতার জনক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ‘’
সেই লক্ষ্যর জের ধরে ওর মনে পড়ে কিভাবে গতকাল
ওর মমতাময় কণ্ঠস্বর নির্মম রূঢ় হয়ে উঠেছিল
ওর খাপছাড়া বন্ধুটির প্রতি ......
মনে পড়ে বিগত বসন্তের সব অনুভূতিকে কিভাবে ও নিজে
অট্টহাস্যে
কংক্রীটের দেয়ালা আছড়ে মেরেছে ।
কিন্তু এসবই কি পেরেছে গত কার্তিকের এই দিনে
ওর আকুলতাকে হত্যা করতে ???
চোখ বুজে এসবই ভাবছিল ও
আর
উত্তরটাও পেয়ে যায় ও, না পারেনি -
কারণ ও আত্মসংহারী হবার বহু আগেই
ওর সব আকুল আবেগময় অনুভূতি আশ্রয় নিয়েছিল
ওর অবচেতন বা অচেতন কার্বন পরীর মাঝে ।

সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

বিয়োগ


আশৈশব অভ্যস্ততায় রোজ
সকালে ঘুম থেকে জাগে ও
কিন্তু আজ আরও একবার জাগল ও
নিজের মাঝে; আত্মোপলব্ধির চেয়ে
অধিক নিঃসংগতায় , আত্মচয়নে।
ওর স্থূল তনুর আশ্রমে পালিত
মাংসল হৃৎপিণ্ডের অন্তর্বর্তী করিডোর জুড়ে
গম্ভীর নিঃসংগতার নীরব বচন,
ওকে কাঁদায়ও না, হাসায়ও না-
বরং মাতাল এক তরলে ভাসিয়ে রাখে ওকে ।
ঐ রসে বুদ হয়ে ও নিজেকে
গুটিয়ে নেয় একটি মেকি খোলসে।
বন্ধুত্বের শূন্য করিডোরগুলো দেখে
আজ ওর মনে কোম হাহাকার জাগে না,
বরং ওর দৃষ্টিতে ফুটে উঠে
হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলের দিগন্তবিস্তৃত
ধূ ধূ মাঠের নিঃসঙ্গতা ......
আধো প্রস্ফুটিত প্রণয়ের স্মৃতি,
মাতাল উদ্দামতায় রসাতলের রস আস্বাদনের
তীব্র ক্ষীপ্র সুখ আজ আর ওকে জোঁকের
মত আঁকড়ে নেই । উদ্দাম উচ্ছৃঙ্খল আবেগের
বিহ্বলতায় পরিবার-স্বজন সব বহু আগেই
হুহু করে পেছনের স্টেশনে ফেলে এসেছে ও।
তাই একা রাতের টেবিলে
হাতের’ পরে মাথা রেখে ও হারিয়ে যায়...
আত্মকেন্দ্রিকতার বিবরে......
আশৈশব অভ্যস্ততায় কাল সকালেও
ঘুম ভাঙবে ওর কিন্তু ততক্ষণে ওর
মণিহীন সাদা চোখ থেকে সব কথা,
ভাষা, আবেগ হারিয়ে গিয়েছে ।







রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

দেয়ালে কার ছায়া ?





ওকে আলোকিত করবার জন্য
বৈদ্যুতিক বাল্বের অভাব নেই বাজারে-
সেই আলোয় ও দেখে নিজেকে
না- আয়নায় নয়; ওকে ঘিরে থাকা 
ইট-পাথরের দেয়ালে 
সেই আলো ওকে ভেদ করতে না 
পেরে দেয়ালে ফেলেছে ওর কালো 
একটি ছায়া, কারণ ও অস্বচ্ছ 
ওর অস্বচ্ছ নিরেট কায়া থেকে 
ঠিকরে আসে আলো, আঘাত করে 
আমাদের চোখে-দেয়ালে, 
আর পরিণাম একটিই--ওর 
কালো একটি ছায়া!!!
তাই আজ রাতে সবার অজান্তেই ও 
নেমে পড়েছে অন্ধকারে
ওর চোখ থেকে ঠিকরে পড়ছে কঠিন,
দৃঢ় এক আলো
কিন্তু তার দৃঢ়তা আমাদের চোখে বাঁধা 
কালো কাপড়টি ছিন্ন করার আগেই
ওর পথ খুঁজে নেয়
আজও অজানা......
কৃষ্ণবিবরে





শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

গৃহী – সন্ন্যাসী – তরুণ





আমি বাঙালি
কাগজে-কলমে আর বার মাসের
তের পার্বণের আমোদ উল্লাসে
বাঙ্গালিপনার নাটকীয়তায়...!
আমার মানবীয় অস্তিত্বের বাঙালি সত্ত্বা
মন-প্রাণ সঁপে না হলেও বহু দিবসের মজ্জাগত
ক্রমশ প্রোথিত দুর্বলতা , দাসত্ব আর ক্রমাগত
মূক হয়ে যাওয়া বিবেকের মধ্যস্ততায়
আমার মস্তিষ্ক আমার লেখনীতে আজ
সঁপে দিয়েছে এই কথাটি ---
আমি বাঙালি...

আমার গৃহী মানুষটি তার প্রিয় গৃহস্থের আঙিনা ছেড়ে
আজ ক্রমাগত জড়িয়ে পড়ছে কার্বনের কালো ধোঁয়ার ধূম্রজালে ;
তার ধমনীতে আজ প্রবহমান নীল রক্তশঙ্খনীল কারাগারের
শাঁখের ধ্বনি আজ ফেরারি কালের উদবর্তনে তার হাতে
নীল খামের পরিবর্তে উঠে আসে মুঠোফোন আবাসন
প্রকল্পের লোভনীয় আয়োজনে সে গৃহী হয় আরো
আতিথেয়তায় , স্যাকারিনের লাল রঙের ন্যায় আধুনিকতায়
তার অতিথি আজ দুর্যোগ , দুর্ভোগ যেখানে সাধারণের
মাটির ব্যাংক থেকে এক পয়সা- দুপয়সা বিয়োগ হয়ে
নিযুত অঙ্কে যোগ হয় বিড়াল তপস্বীদের পিগ ব্যাংকে
যেখানে দেবতার ভোগ লোপাট করে পেটপূজা করে
ধর্ম ব্যবসায়ী আর অপ্রতুলতায় অভুক্ত থাকে সেই
আমার পুরানো গৃহপ্রাঙ্গনের এককালের প্রিয় কুকুরটি......
আমার আজকের গৃহী মানুষটির আতিথেয়তার উপকরণ
নির্বাক দুর্বলতা আর অপরিমেয় সহনশীলতা...
আজ আমার গৃহী মানুষটি চুন থেকে পান খসলেই
দুর্বলকে সজোরে চপেটাঘাত করে
...আবার কখনও কোনটা আসলেই বড় ব্যাপার না...
আবার বড় ব্যাপারও বটে তার দ্বিমুখী কথায় নিজেতেই
নিজে প্রতারিত হয় !!!

আমার প্রত্যাশার অহিংস সন্ন্যাসীটি আজও সিদ্ধার্থ হয়ে
উঠতে পারেনি ; একদা তার ব্রত ছিল প্রশান্তির মঙ্গলময় সায়রে
বিচরণের - কিন্তুদশ্চক্রে আজ সে ভূত তাই আজ তার মস্তিষ্ক শূন্য,
দৃষ্টিও, সে দেখেও দেখে না, দেখায়ও না সেই
জটাধারী বটবৃক্ষে আজ ''আট বছর আগের একদিন'' এর
থুড়থুড়ে অন্ধ প্যাঁচার ডেরা থুড়থুড়ে অন্ধ প্যাঁচা চোখ পাল্টায়ে
কয়ঃ ''বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে ?''
আহা, চমৎকার !

আমার তরুণ সত্ত্বা আজও কি রয়ে গেছে সেই জায়গায় ?
আজও দেখি তাদের রক্ত ঝরে স্বেচ্ছাচারীর পদত্যাগের সোপানে।।
কিন্তু কালো কণ্ঠে আজ সেই নন্দিত লোহিত ধারা নিন্দিত
এমনটি তো হবার কথা ছিল না
সোনালি মানচিত্র বক্ষে ধারণকারী বাংলাদেশের মাটিতে

হে, প্রগাঢ় পিতামহী
এত আয়োজনবিহীন আড়ম্বর আর প্রত্যাশাপূর্ণ কথার স্তূপে
কোথায় হারাল তোমার সোনার তরী ???
আজও সূর্যোদয় হয়, সূর্যাস্তও আসে
কিন্তু আমি আবার ফিরে পেতে চাই
তোমার সেই সোনাঝরা কিরণ............



শঙ্খ বাস



আমার নিভৃত সত্বার প্রথম দশা, ছিল
সেখানে মৃত্যুর নীরবতা,
আর সেই সাথে ছিল জীবনের বিভাজন,
জীবনের পরিস্ফুটন এবং পরিশেষে
আমি সুপ্তোত্থিতা

আমার সকালের প্রথম আলোয়
দেখলাম সুনীল আকাশে
কালো মেঘের ঘনঘটা - এক অনাকাঙ্ক্ষিত
পরিবর্তনের অশনি সংকেত আর আমি
অভিযোজিত হলাম
তোমাদের থেকে স্বাতন্ত্র্যে - এক বিচ্ছিন্ন শঙ্খে
নিষ্প্রাণ, নিস্তব্ধ , আবেঘীন কর্মে
আমার না বলা কথার তীব্র
অম্লে জারিত হয়ে
তখন বাহিরে আমার দৃঢ় শুভ্র
শঙ্খ আবরণের ক্রমবিকাশ
কিছু আমার অন্ধকার বরফ যুগের
নিষ্প্রাণ শীতলতাত - আর কিছু তোমাদের
অন্ধ একমুখী কামনায়

তারপর আমাসর পৃথিবীর বার্ষিক
পরিক্রমনে এল নিদাঘকাল
বিদায় নিল সেই আবালবন্ধু
অন্ধকার বরফ যুগ
প্রখর নিদাঘে উদ্ঘাটিত হল শঙ্খের আড়ালে
আমার কমনীয় ক্লেদাক্ত সত্ত্বা......
আর শুনতে পেলে তুমি
আমার স্বনন,
আমাকে মাত্রাহীন অধিকার দিয়েও স্বতন্ত্র
করলে সেই আমার চিরচেনা
শঙ্খ বাসে



অপব্যয়





আমার নাম? জিজ্ঞাসা করো না
জিজ্ঞেস করার প্রশ্ন বা প্রয়োজন কোনটাই
ছিল না কখনও, ভবিষ্যতেও থাকবে না
আর শুধালেও কানে ঠেকে আমাকে করা তোমার
পরিহাসের সুর কিংবা
চোখে পড়ে তোমার বাস্তব বুদ্ধিহীনতা !
না না, আত্মনিগ্রহ এ নয়, এটাই বাস্তবে বাস্তবতা
কারণ নেড়ি কুকুরদের নাম কখনই থাকে না

না না, কোন বক্তৃতা মঞ্চে জাগরূক তথাকথিত
সমাজসেবীর কথার প্রতিধ্বনি আমি করছি না
এ একান্তই আমার নিজের কথা ! যা তোমার
মূল্যবান উন্নত শ্রবণযন্ত্রে শোনায় বিরক্তিকর ''ঘেউ ঘেউ''

তোমাকে দেখে আমার ঈর্ষা হয় না, ভাবছ
যেই পশু সামান্য দুগ্রাস অন্নের জন্য কামড়াকামড়ি
করে মরে, তার কণ্ঠে এ কোন সুর ?
কারণ তুমি মানবরূপী অসুর,
তাই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে
আমায় হয় মরতে কিন্তু তুমি বেঁচে নামতে থাক রসাতলে
তুমি পাও রসের ঘ্রাণ আর আমি পাই
তোমার নষ্ট সত্ত্বার পচা দুর্গন্ধ
রাতের অন্ধকারে তুমি অন্ধ
কিন্তু আমি তখনও দেখি তোমার আত্মার মিথ্যা
অপব্যয়......

এখন, বলবে, আমি খারাপ, তাই দেখছি
কেবল তোমার খারাপটাই
কিন্তু মন্দরা তোমার ভালর টুটি
যে অহর্নিশ চেপে ধরে রেখেছে তা
তোমার চোখে পড়ে নাবরং তুমি এই
ভয়ে থাক ব্যতিব্যস্ত কখন আমি তোমার
টুটি ধরে চেপে

তুমি আসলেই ভীরু, তাই
তোমার দ্বারে অসীমতায় ঘেরা
একটা সীমা পর্যন্তই আমি পারি যেতে,
নোংরার ভয়ে তোমার গৃহলক্ষ্মী আমায় দেয় তাড়িয়ে
আমি আক্ষেপ করি না, কারণ এর বেশি
তোমার মত দুর্বলের কাছে আমি কখনই প্রত্যাশা করি না

শুধু মনে কষ্ট জেগেছিল একদিন , তোমার কোলে
সাদা বিলাতি কুকুরটাকে দেখে ,
কিন্তু সেই কষ্ট আমার নিমেষ মাত্র
কারণ আমি দিকপালবিহীন
রাস্তার নেড়ি কুকুর এক !!!
স্নেহের অপব্যয় তোমার হয়ত সয়
কিন্তু আমার মত কাঙ্গালের সয় না
তাই আমার কষ্ট পাওয়াও হয় না
কষ্ট দেওয়াও হয় না.........

অবশেষে আমি মানব অনুভূতি বর্জিত
রাস্তার নেড়ি কুকুর এক.........!!!
বর্তমানের শাইলক..................



প্রহসন



''কেমন আছ ?'' উত্তরে ''ভাল'' বলেছি আমি বরাবর
''এই'' প্রশ্নের ''এই'' উত্তর দেওয়াটাই ভদ্রতা বলে
জানা ছিল আমার

আজ মধ্যরাতে বসে তাই ভাবছি আসলে
''কেমন আছ ?'' এই প্রশ্নটাই তখন করা হয়নি
আমাকে আমার

তারপর একদিন হঠাত করেই এল রথে চড়ার আহবান,
কল্পনা বিলাসী আমি ; দেখলাম সারথি আমার অর্জুন ;
কিন্তু সেই রথ যে আলেয়ার আলোর পিছু পিছু
আমায় নিয়ে গেল নরকের দ্বারেআর
আমার কণ্ঠ তারই বন্দনা গীত গাইল নীল মোহ ভ্রমে
তখন আমি ঐ বিশেষ প্রশ্নটার উত্তরে বলতে শিখলাম
আমি আছি, এইতো, মোট কথা ভাল নয়

কিন্তু ভাগ্য আমার, মর্ত্যের এক সাধারণ
মহীরূহ ভ্রম ভাঙ্গাল আমার
দেখলাম, স্বেচ্ছায় দুঃখ বরণের মত প্রহসন নেই আর
একটা দিনও শিখলাম না গড়তে,
অথচ মহাকারিগরের সৃষ্টিকে ভাঙ্গার
নির্মম প্রহসনে উঠেছিলাম মেতে

তারপর সেই মহীরূহ ? হতে পারে সে রসাল ;
পারে হতে বিষবৃকশ, কিন্তু আমি মাধবীও নই,
পার্বতীও নই............

মুহূর্ত পরেই আবিষ্কার করলাম
পুনরায় নীল মোহ ভ্রম
আমি উল্লসিত হলাম প্রহসনে
অতঃপর পুরোটাই পূর্ণ তীব্র বিষাদে
মনে হচ্ছিল নরকের কীটগুলো জোঁকের মত আমার
সমস্ত রক্ত নিচ্ছে চুষে, অতঃপর পুনরায় আমি আশ্রয়
নিলাম নিঁদে

তারপর এখন আমি আছি ভীষণ ভাল
কিন্তু আমার আমি জানে এই ভীষণ ভাল আছি এই কথাটি
প্রতিষ্ঠিত করবার জিদের চেয়ে বড়
প্রহসন নেই আর !!!




তুমি শোননি (পর্ব ৩)




পৃথিবীতে এদুটো নিত্য সাধারণ লড়াই-
বহু মানউষের আর বহু মানব - মানবীর,
না, জীবন যুদ্ধ নয় ; নয় ইতিহাসখ্যাত বা
কুখ্যাত কোন রণ একটি তোমার আমার
এবং আরো বহু নবীন মানুষের নিকট ভবিষ্যৎ
সোপানে আরোহণের লড়াই- অপরটি আমার
লড়াই- তোমাকে সর্ব বিধ সোপানে উতরে দেবার
কিন্তু একগুঁয়ে তুমি, হেয়ালি তোমার বসন,
তাই আমার তোমাকে ফিরিয়ে আনার
একটি ডাকও তুমি শোননি

এইতো সেইদিন সকালে , ছিল আমাদের
রণশিক্ষার প্রস্তুতির মহরা, ভেবেছিলাম
তুমি হয়ত প্রতুল নিদ্রায়, তাই তোমার
নিদ্রাভঙ্গের সকল প্রস্তুতি নিয়েই গিয়েছিলাম
তোমার দ্বারে কিন্তু দ্বার তোমার খোলেনি -
কারণ তুমি আমার একতরফা মঙ্গল শোভাযাত্রার
আয়োজঙ্কে ধরে নিয়েছিলে আমার বাতুলতা
তাই আম্র উদ্বিগ্ন ডাক
তুমি সেদিন শুনেও শোননি

তারপর যখন দ্বার খুললে তখন ততোধিক বিস্মিত
আমি তোমার অলীক কাননে ঘুরতে যাবার
হঠকারী আয়োজন দেখে ফিরে আসার
আগে সমর মহরার সকল নির্দেশনা দিয়ে
এলাম বজ্রাহতের মত বাড়ির পথে পা বাড়াতে না বাড়আতেই
শুন্তে পেলাম তোমার দ্বার বন্ধের অধীরতা
আর দেখতে পেলাম বদ্ধ দ্বারের পেছনে
তোমার হাঁফ ছেড়ে বাঁচা

অতঃপর বিষণ্ন আমি , বাড়ির পথে
ছিন্ন পত্রের মত বৃক্ষের পাদদেশে
ধুলায় হায় যাই গড়াগড়ি !!!
আমার সেদিনের দুঃখ বিহ্বল
চিত্তের একটি ডাকও তোমার বদ্ধ দ্বারকে
টলাতে পারেনি

তবুও আমি মিথ্যা প্রতীক্ষায়, স্বপন ও জাগরণে
এই বুঝি তুমি এলে......
এবং তারপর আজ মেঘলা অপরাহ্নে
এলোকেশী আমি, মেঘদূতের অপেক্ষায় ......
কিন্তু হায়! আমার প্রতীক্ষার ডাক মোচনের
আকুল আকুতি
তুমি শোননি
অতঃপর তুমি ''আমাকে '' শোননি




তুমি শোননি (পর্ব ২)




আজ রাতে আমাদের দুজনার মাথার উপর
একই আকাশের ছাদ, সেইসাথে তোমার বিশবৎ উপেক্ষা ;
আমি বিষের নীল থেকে তিলতিল কষ্ট করছি আহরণ
আর সেই মাতাল মুহূর্তে তোমার দ্বারে হয়েছিল আমার পদস্খলন,
জানতাম দ্বার খুলবে না, কারণ তোমার হেয়ালির
দ্বারে আমার কাতর কড়াঘাত
তুমি শোননি

কিন্তু রয়ে গেছে পদচিহ্ন সুস্পষ্ট প্রমাণসহ, হয়ত ভাববে এ
আমার আলুলায়িত ভাবান্তরহীনতার অপব্যয় মাত্র
তোমার ভুল আমি ভাঙ্গাব না কারণ মাতাল রাত্রির পদস্খলনের
পরও আমি হাজির হব তোমার সামনে ;
না শব হয়ে নয়, মানবী হয়ে
ভালবাসার , স্বাধীনতার অনন্ত স্বপ্নগুচ্ছ নিয়ে.........

আমার উপলরূপ প্রতিমার অন্তরালের
মানবীর গান তুমি শোননি
শুনলে হয়ত উপহার দিতে নীল উৎপল
এখনকার মত দেনা পাওনায় আমায় ব্যতিব্যস্ত করতে না
কিন্তু আমার মৃদু কণ্ঠের আপত্তি তুমি শোননি
অতঃপর আমার নির্বাক মনের একটি কথাও
তুমি শোননি

আমায় মুক্তির আলিঙ্গন দেবে কি ?
সেই আলিঙ্গনের উষ্ণ স্পর্শে আমি
স্বাধীন ''আমি'' হব
আমার বহু দিবসের ক্লান্তিকে তোমার
কাঁধের' পরে একটু শান্তি খুঁজে পেতে দেবে কি ?
পৃথিবীর প্ল্যাটফর্মে বহু মুখোশের আড়ালে
তোমার মানব মূর্তি দেখেছিলাম বলেই
ডেকেছিলাম তোমায় ; কিন্তু
তুমি শোননি



তুমি শোননি............




আজ বিকেলে আমার আকাশ ছিল পিংগল,
সহস্র যোজন দূরে যেখানে আকাশ নীল, সেখানে
তোমার পাষাণ বেদীতলের অরণ্যে আমার বিক্ষুব্ধ
সমুদ্রের তরঙ্গমালার সমস্ত রোদন
নির্বাক পরিহাসে পরিণত হল, আমার অন্তরাত্মার আর্ত
ক্রন্দন কেবলি বলছিল, আমায় একটু আড়াল দেবে কি?
.........লুকোব ভিজতে ভিজতে ক্লান্ত দুচোখ
.........শুকোববাঁচব বলেই হাত বাড়িয়েছিলাম, একলা
বলেই তোমায় ডেকেছিলাম............
তুমি শোননি



উপলের উপলব্ধি



পূবের জানালাটা খোলা , তা দিয়ে আলো আসে
আলো যায় ...
সেই বাতায়নপথে রোজই কিছু ক্ষুদ্র জীবনপ্রবাহের
সম্মিলন ঘটে, সুনিশ্চিত বিক্ষিপ্ততায়

যখন নিগূঢ়তার নীল আর প্রকাশের লাল রঙ
এই জানালার ফ্রেমে যুগলে বন্দী হয়
তখন কেউ কেউ ক্ষণকালীন দাঁড়িয়ে অনন্তকালীন
প্রতীক্ষার মোহে......

এই মোহ লুব্ধ মানুষের চোখে মধ্যাহ্ণের প্রখর রৌদ্র
অনাগত ঔজ্বল্যের মৌলী রূপে প্রতিভাত হয়

সে দেখে, তার চোখে উঠে আসে বেদনা, হাসি, আনন্দ,
প্রতীক্ষা, প্রতিজ্ঞা, স্বপ্ন, অশ্রু, অসহায়ত্ব
এবং বিবিধ.....................

এই গবাক্ষপথে দাড়িয়েই একদিন সে গোলাপকে
ঘৃণা করেছিল আর একদিন সে মুগ্ধনেত্রে দেখল গোলাপ ও
এত সুন্দর হয়......

সেই জানালা,
আজো পূবের জানালা, তার অন্দরে-বাহিরে
ক্রমাগত দৃশ্যপটের পরিবরতন; আর সেই
জানালায় দাঁড়ানো আমি আর আমি নেই; কারণ
আজ উপল উপলব্ধির উপঢৌকনে
অনিদ্র...............