বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৩

এইসব বেওয়ারিশ শব্দজট বা জোট


যে বিকেলে সব আলো ধ্বসে পড়েছিল ,
প্রথম বিরামের সূত্রপাত কমা দিয়ে
আর তার পরিণতি উত্তুংগ দাড়িতে ।
মাঝে বিসর্গের দুটো শূন্যতায় ভর করে
যেসব বিসর্গ আর শূন্যভাব চেপে বসেছিল
সেইসব রোদ্দুরের ভেলায় ,
তাকে দেখে বিস্ময়বোধে বিস্ময়সূচকতা জাগে
আলোয় ঝিমিয়ে পড়া এঞ্জেলোপুলিসের সেইসব
 উল্টো হয়ে ঝুলে থাকা মৃত ভেড়ার দলের ।
এইসব দিন শেষে আমি যখন নামতে থাকি
আমার ভেতরের ঘুরানো সিঁড়ি বেয়ে আমার ভেতরের
সমতলে , আর আমার চারপাশে ভেতরের আয়না জুড়ে
পরিবর্তনকারী প্রভাবক আর তীব্র রাসায়নিক পদার্থের
ধাঁচে আমার বদলে যাওয়া প্রতিবিম্ব । আমারই অবয়ব
শত সহস্র  । আমারই প্রশ্বাস ভেজা আর্তনাদ আর কতিপয়
প্রতীক্ষাজনিত স্থবিরতা ; যদিও আমি জীবজ , জৈবিক,
যাবজ্জীবন কোন গতিরই নিরীক্ষক নই ,শিষ্য নই ।
আমার বুঝতে পারা নিজেকে না বুঝার , নিজের সংখ্যালঘু
অস্তিত্বের সাথে সংখ্যাগরিষ্ট অস্তিত্বকে মানিয়ে নেবার ,
তবু দিনশেষে নামহীন ক্ষণিকতায় আমিই আমায়
সর্বোচ্চ গ্রহণকারী , সর্বোচ্চ ত্যাগকারী ।

বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৩

নষ্ট গল্প



যখন আগুন আর রৌদ্র খণ্ডনের গল্প পূবের বাতাসে মিশেছিল ,
আর চকমকি পাথরের ঠোকাঠুকিতে নিমেষেই আগুন জ্বলে উঠেছিল ,
আর্তনাদ ময় চিৎকারে আর পূবের বাতাস তাকে এনে দিয়েছিল
অবাধ প্রশ্রয় ।

যদি নিমেষ মাত্রই হাহাকার তবে অন্য আশ্রয়ের খোঁজ - আবার
সেই পুরনো নষ্ট গল্পের ঝোঁক । আলো আর কালোর মিশেলে
কালোর প্রাখর্য - নষ্ট গল্পের শিরোনাম । আর জারণ শিখায়
বাতাসে এসে মেশে ফুসফুস পোড়া ঘ্রাণ ।

ভেজা বাতাসে নীল গোলা জল, উত্তপ্ত নেশাতুর বিকীর্ণ মেদুর ,
অগণিত রৌদ্র পোড়ার গান , ভেজা বাতাসে বাজে চামড়ার পোড়া ঘ্রাণ ,
আর সমাপ্তি তব আত্মসংঘাতী কল্পনায় , নষ্ট গল্পের খসড়া আর মহড়া
তখন ভাগাড়ের চুলায় ।

" কায়ায় কায়ায় মায়ার ফাঁদ" - মিছে মাংস , চামড়া আর রক্তের পাহাড়
এক শীর্ণ জীর্ণ কে ঘিরে ...

প্রতীক্ষা



আমার নিঃশ্বাসটুকু আটকে ছিল এগারটা বাইশ আর তেইশের মাঝখানে ,
ওর ছোট্ট ''না'' টুকুও ততখানি উপেক্ষিত ৬০ সেকেন্ডে আঘাত হানল
আমার ভিতরে ।
লাকসাম রেইলওয়ে জংশন , আমি বসে আছি আমাকে নিয়ে ,
বসিয়ে রেখেছি তাকে ঘিরে আমার সমস্ত অখণ্ড খণ্ডিত আলাপন আর
কল্পবিলাসিতাকে ।
লাইনম্যানের সবুজ পতাকা আর আমার বুকের ভিতরে ক্ষয়ে যাওয়া
লাল গোলাপের কাঁটার বিদ্ধতায় জমে থাকা কালচে রক্ত ,
আমার বুকের ভেতরের লাল তার শ্বেত ক্যামেলিয়াকে
কি কখনই রাঙ্গায়নি ?
ভোর রাতে শুকতারার আলোয় পৃথিবীর প্রথম দুটি পাখির
আকাশে উড়ে যাওয়া আর ডানা মেলে দেওয়া মুক্তবিহংগের
অবোধ আলাপে আমার প্রতিক্ষণে হারিয়ে যাওয়া,
এসবই কি নিমেষ মাত্র ?
সকাল আটটায় লোকাল বাসে অফিসগামীদের উপচে পড়া ভিড়ে
আমি ক্রমাগত কক্ষচ্যুত হয়ে পড়ি আর হারিয়ে যাই ভিড়ের তলে ,
যদিও কেউ খুঁজে নেয় না , তবু হঠাত করেই সস্তা কাজের ভিড়ে
যখন বেজে উঠে সেলফোনের টুংটাং , আমি আরও একবার হারাই
বিগত হাসি-কান্না , হীরা-পান্নার উপাখ্যানে ।
প্রখর ঝলসানো রৌদ্রে ট্র্যাফিক জ্যামে ঘামের কড়াইতে ভেজে উঠা ,
আমার পিঠে ওদের লাগাম ছাড়া ছুটোছুটি আর মেঝেয় শত
আনন্দিত কলরবের লুটোপুটি ।
বিষণ্ণ নীলচে গোধূলির আঁধার যখন মাথার উপর চাঁদোয়া মেলে ধরে
আর রাত দুপুরের আবদার যখন একে একে হাতছানি দিয়ে উকি দেয়
মনের দৃশ্যপটে তখন আমি আমাকে বিছিয়ে দিই বেলাভূমিতে ,
নুড়িপাথর আর নোনা জলের কলরবে , আবছায়া কালো প্রতীক্ষায় ...