সোমবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৩

মণিহারা



সেদিন নিস্তব্ধ দুপুরের কড়া রোদে গাছের শাখে আগুন ধরেছিল ,
দাবানলের প্রবল হুতাশনে নগরীর তিলোত্তমার চমক ভেঙ্গেছিল ;
ও অগ্নি -- বর্বর এবং উষ্ণ; ওর উষ্ণতায় সুখ, বর্বরতায় সুখের তীব্র পিপাসা ।
ওর জ্বলন্ত আলোয় পতঙ্গের আত্মাহুতির তীব্র নেশা ,
ওর যজ্ঞের অমোঘ ধূমে হৃৎপিণ্ডের নিদাঘ প্রদাহ , সেই প্রদাহে
তিলোত্তমার হৃদয়ে আজ তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্যের মরুভূমি , সেই মরুভূমিতে
পথিক পথ ভোলে , নব্য মরীচিকার পিছে ছোটে আর আকণ্ঠ পান
করে নোনাজল । জলের নেশা আগুন লাগায় উন্মত্ত মস্তিষ্কে ...
আর শিথিল করে আনে প্রতিটি স্নায়ু নমনীয় হ্যালুসিনেশনে ...
তাই প্রতি সকালে ক্যাসেট রিওয়াইন্ড করার
চাকরি নিয়েছে ও অভ্যাসের অফিসে ! আর সেলারি ?
একটি সুষুপ্ত ম্যাচবক্স ...!

সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৩

মূক



বিহ্বলতার শেষ প্রান্তের হাতছানিতে অবশেষে
ধ্যান ভাঙে সহস্র বছরের জটাধারী স্থবির সন্ন্যাসীর ;
মুদিত চক্ষু উন্মীলিত হওয়া মাত্রই কোলের 'পরে
ঝরে পড়ে চোখের উপর জমে থাকা
শতাব্দীর রাশিকৃত ধুলো ;
এখন তার জটাজূটের অধিক জটিল বিষয়েও
''টিকটিক'' করে সায় দেয় তাসের ঘরের
দেয়ালে ঘুরে বেড়ানো টিকটিকির দল ;
তার মেঘমন্দ্র তপস্যাকে দৃষ্টিত্যাজ্য করে
তার আসন সম্মুখে
রাজ্যের ভাগাড় এনে স্তূপীকৃত করে
শহরের সব ছিন্নবস্ত্র আবালবৃদ্ধ টোকাইয়ের দল ।
আর শিকারী মাকড়সাটি সন্ন্যাসীর স্থবির দেহকে
আঁকড়ে ধরে ছড়াতে থাকে তার মোহমন্ত্রের জাল;
কৈলাসে সহস্রাব্দের তপস্যামুগ্ধ অসহনীয় নীরবতা আজ
খানখান হয় ঠুনকো মানবীয় হাতের নিমেশমাত্র কড়াঘাতে
আর তার জটাজূটে আখড়া গড়ে তোলে রাজ্যের
সব ইঁদুর , ছারপোকা, কুকুর আর ভেকের দল ।
ত্রিকালে ত্রিমূর্তির বহুরূপ দর্শন শেষে ধর্ষিত সন্ন্যাসী ভাবে
যদি বিগত অতীতের ন্যায় বিগত হওয়া যেত
আরো একবার; কিন্তু ততদিনে সন্ন্যাসী তার উত্তুংগ সম্ভ্রম হারিয়ে
নেহাতই এক সাদামাটা আত্মসমর্পিত মূক গৃহী ... ।

''অণু'' রক্ত



ভাষাকে হারিয়ে শব্দকে খুঁজতে গিয়ে সে
আবিষ্কার করে শব্দদের শব
আর তার বিপুল নীল তিমি অবয়বধারী সত্ত্বার
মাঝে আটকে পড়া পিপড়েরূপী সত্ত্বা
আর তাই বেরুবার পথ খুঁজে পায় না ।
তাই উট পাখির স্থূলত্বকে বাদ দিয়ে
সে আজ খুঁজে নিতে চায় বুলবুলি যুগলের চপলতা
যেখানে রৌদ্র কণা শিশির জলে রংধনুর সাত রঙ
নিয়ে আছড়ে পড়ে, আজ সেই ক্ষুদ্র দর্পণে
তার অবয়ব ধরা দিতে চায় কোন মানস সরোবরের
স্ফটিকস্বচ্ছ জলকে ত্যাজ্য করে ।
শ্রাবণ মেঘের ঘনঘটা কে পাশে সরিয়ে রেখে
সে আজ খুঁজে নিতে চায় হেমন্তের লঘু কুয়াশা
যেখানে দিনের শেষে পিঙ্গল আকাশ বহুল
প্রতীক্ষিত মিলনের সাঁঝবাতি জ্বালে স্বপ্নের
সোনার কাঠির পরশ বুলিয়ে , আজ সেই প্রিয়মিলনের
আকাঙ্ক্ষায় নববর্ষা নামে তার হৃদয়ের সুতীব্র
কুলীন স্বতন্ত্র বিচ্ছেদের 'পরে ।
বিশ্বপৃথিবীর সমস্ত নক্ষত্ররাজির দুর্লভ মোহ ত্যাগ করে
সে আজ ভালবাসা আর স্বপ্ন-আশার মৃদুমন্দ প্রদীপকে
মেঘমন্দ্র স্বপ্ন চোখের প্রত্যাশায় আঁকড়ে ধরে ...
প্রিয়ের প্রতি অনুরক্ত হৃদয়ের ''অণু'' রক্ত ক্ষরণ
আজ শ্বেত শুভ্র বকুল ফুলগুলোকেও গোধুলির আবীরের
ছটায় রাঙিয়ে তোলে ...
নীলকণ্ঠের সুতীব্র বিষের নীল আবেগ ত্যাগ করে
পাথরের বেদীমূলের উপর বৃন্তচ্যুত রক্তলাল জবাটির
তপ্ত লোহিত বর্ণকে সে আসীন করে সমগ্র
''অণু'' রক্ত স্নাত আত্ম বিচ্ছেদের পরে ...
আর খুঁজে নেয় শুভদৃষ্টিতে তার সমগ্র অমঙ্গলের মঙ্গলকে ।

অমানুষ



যখন স্বভাবসুলভতার স্বাভাবিক রৌদ্র
কাল্পনিক ডাইনোসরের পদতলে
কেঁচোর মতই পিষ্ট হয় ...
আর তার গলিত দেহ থেকে
উগড়ে আসা দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠে নিঃশ্বাস ,
তখন নৃমুণ্ডধারী কাপালিক অতিকল্পবিলাসে
হারিয়ে আয়োজন করে দ্বিতীয় ভৈরবী বধের ;
তানসেনের অপার্থিব সুর যখন আজ অভ্রভেদী হাহাকার
হয়ে সুতীক্ষ্ণ সায়কের মত বিদেহী বাতাসের সুর ভেদ করে ,
তখন যেন প্রতিদিনের বহুমৃত্যুর আগের শেষ গান তার
চাবুকের আঘাতে তীক্ষ্ণ আর্তনাদের বিলাপ তোলে ;
তাই যদি সত্যিকারের ''অমানুষ'' হতে নাই পারা যায়
তবে সেই চিরঅদৄশ্য অকস্মাৎ জাগরূক ডাইনোসর
যেন কোন আরেক বিবর্তনে দৃশ্যমান বাদুড় হয়েই জন্মায় ,
যেই বাদুড় না ছিল পশু , না ছিল পাখি ।
নতুবা চির আদিম সেই ''বুমেরাং'' এর আঘাতে
জন্ম নেবে অজস্র ''অমানুষ'' ।

বুধবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৩

অর্ধেক মানবী , অর্ধেক কল্পনা



আমি সৃজিত হয়েছিলাম মানবী রূপেই
চাঁদের জ্যোৎস্নায় মোড়া ছিল না
আমার ভিতর ও বাহির ...
তবু আমার প্রেমিকের উপমায়
আমি মোহিত হয়েছিলাম চন্দ্রকথায় ...
তারই প্রসন্নতার খাতিরে গড়ে উঠেছিল
আমার চাঁদ হয়ে উঠবার নানা কাল্পনিক
বাহ্যিক আয়োজনের ...!!!
কিন্তু তাতে আমার আত্মা বঞ্চিত হল
দিবাকরের প্রত্যক্ষ কিরণের ...
আর সেই সুবাদেই দ্বিতীয় কোন পুরুষ
সহসাই বলে উঠেছিল ,
'' চাঁদেরও কলঙ্ক আছে '' ...
অতঃপর বোধোদয় হল আমার প্রেমিকের
আমি অভিযুক্ত হলাম প্রতারণার দায়ে ...
আর আমায় শাস্তি দিল আমারই স্বপ্নদৃষ্ট
মোহস্বপ্নের পথিকৃৎ প্রেমিক ও দ্বিতীয় পুরুষ !!!
সেই চাঁদ আজ অম্লের তীক্ষ্মতায় ঝলসানো
সমগ্র মানব-মানবীর চোখে বীভৎস
দ্বিতীয় কোন শ্রাবস্তীর কারুকার্য !!!

আমি সৃজিত হয়েছিলাম মানবী রূপেই
ফুলের সৌরভ ছিল না আমার নিঃশ্বাসে
তবু আমার প্রেমিকের কাছে
ছিলাম আমি জগতের শ্রেষ্ঠ ফুলটি ...
তাই fool আমি ফুল হয়ে
উঠবার অমোঘ চেষ্টায় অস্ত্রোপচারে
আমার কাঁটা সরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম
কোমল পাপড়ির পেলবতা !!!
আর প্রত্যাখ্যাত দ্বিতীয় কোন পুরুষ
সেই আক্রোশে ছিন্ন করে পিষ্ট করল
পদদলিত করল সেই কোমলাবয়বধারী
ফুলটিকে ...!!!

আমি সৃজিত হয়েছিলাম মানবী রূপেই
গঙ্গার মত পবিত্রতা , তার উৎসের শাণিত
ক্ষুরধারা আমার নাই ছিল !!!
তবু আমার প্রেমিক আমার চলায়
খুঁজে পেয়েছিল নির্ঝরিণীর চঞ্চলতা !!!
আর বর্ষায় প্লাবনের অভিযোগে
দ্বিতীয় কোন পুরুষ রুখে দিল
আমার স্রোতস্বিনীর চঞ্চলতা ...
দূষিত হল আমার স্বচ্ছ জল বিষাক্ত দূষণে
চাপা পড়ল আমার কান্না বহু
মানব-মানবীর নিত্য হাসি-কান্নার ঘরকন্নায় !!!

আমি সৃজিত হয়েছিলাম মানবী রূপেই
শান্তি সঞ্চারিণী আমি হয়ত নাই ছিলাম'
বিষবৃক্ষের বীজ হয়ত আমিই বপন করেছিলাম
গন্ধম বৃক্ষের ফল হয়ত আমিই আদমকে খাইয়েছিলাম
তবু আমার প্রেমিক আমার চোখে নিবিড় অরণ্যে
নীড়ের আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল ...
আর সেই ছলনাময়ী , মমতাময়ী আমি
ইট পাথরের নীড়ে দ্বিতীয় পুরুষের
প্রহসনে আমি ছিলাম তার
শক্তি আর পৌরুষ প্রদর্শনের মঞ্চ !!!

আমি সৃজিত হয়েছিলাম মানবী রূপেই
দেবী হয়েও নয় , পশু হয়েও নয় ...
মানবী হয়েই !!!