বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

''আগুনে সন্ধি ''



-কিছু মনে করবেন না , জ্বালাবো আপনাকে , আপনি আবার রেগে গিয়ে আগুনে কাঠ ছুড়ে দিবেন না যেন ।
-এতই যদি পোড়ার ভয় তবে কেন আমাকে জ্বালাতে আসা ?
-উহু ... পোড়ার ভয় নেই কারণ আমি নিজেও জ্বলছি এক দারুণ আগুনে ।
- তাই নিজের আগুন অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেবার অপচেষ্টা , ভীষণ হিংসুটে তো তুমি ।
-যে আগুন জ্বালিয়েছে তাকেও আগুনে পোড়ার স্বাদ দিতে চাই ।
-আমি তো জানতাম নুন ছাড়া স্বাদ হয় না , তা আগুনে কিঞ্চিত নুন ছড়িয়ে দেওয়া হবে কি ?
-তুমি ....
-কি?
-পারোও বটে ।
-হাহাহা...পারি বলেই তো আগুন জ্বালালাম , আর তুমিও জ্বলেপুড়ে ছুটে এলে আমাকে জ্বালাতে । এখন তোমার ছোঁয়াচে আগুন দিয়েই আজ সকালের চায়ের পানি গরম করব ।
-আমাকে কি তোমার কাজের লোক পেয়েছ নাকি ?
-না, তা হবে কেন, তোমাকে মাইনে দেব সেরকম মাইনেই তো আমি পাই না । কেন আমাকে এককাপ চা খাওয়ালে তোমার আমাকে জ্বালাতে আসা ব্যর্থ হয়ে যাবে নাকি ?
-আচ্ছা ...এবার একটু থামো । আমি চা করে দিচ্ছি । তা তোমার চায়ের সরঞ্জাম কোথায় ?
-নেই। মোড়ের ঐ দোকানের ছোট ছেলেটা দিয়ে যায় বরাবর , ওদের দোকানে বোধহয় ৮০-৮৫টাকার মত বাকি জমেছে । দাঁড়াও আজ তোমার জন্যও এক কাপ আনাই । না, তুমি তো খাবে না বোধহয় , ওদের চায়ের কাপগুলো ভীষণ নোংরা , তাতে রাজ্যের লোকের ঠোঁট আর থুথুর ছোঁয়া , তোমার ঐ নরম ঠোঁট দুটো ময়লা হবে ।
-অত ভণিতা করো না । তুমি জানো , আমি এমনিতেও চা খাই না আর আমাকে খাইয়ে তোমার বাকির অংকটা আর বাড়িয়ো না ।
-কেন তুমি আমার বাকিটা মিটিয়ে দিলেই তো হয় ।
-তুমি নিবে না , আমি জানি ।
-কেন নিব না ? যে মেটাতে জানে তার কাছে নিজের অক্ষমতা ঢাকার ন্যাকামি নাহয় নাই করলাম ।
নাকি করজোড়ে অনুরোধ না করলে তুমি মেটাবে না ?
-আজ তোমার হল কি ? কেবলি পোড়া কথার ফুলঝুড়ী ...
-জ্বালাতে যখন এসেছ তখন পোড়া জিনিসই তো পাবে , তাই নয় কি ?
-আচ্ছা, যাও জ্বালাবো না , আমি চললাম ।
-ওমা, এক্ষুণি চললে ! তাহলে আমার সকালের নাস্তা , দুপুরের খাবারের কি হবে ?
-পানি খাও , পানিগুলোকে তোমার ভিতরে সঞ্চয় কর , তাহলে আমি পোড়ালেও তুমি পুড়বে না ।
-তা ওয়াসার পানির বিলটা কে দিবে শুনি ? নাকি আমাকে রাস্তার কাক আর কুকুরদের মত নর্দমার পানি খেতে হবে ? তবে অগ্নিবর্ণ দেবী কৃপা করলে এই চাতক কে কিছু জল দিতে পারেন ...তাতে ভক্ত অনুরাগী বই বিরাগী হবে না ।
-আর তা আপনার তথাকথিত ''দেবী''কে কোন অর্ঘ্য নিবেদন করবেন?
-বলুন, আপনার কি চাই ?
-একটি ''আগুনে সন্ধি পত্র'' ।
-সন্ধির আগুনে শর্তগুলো একটু শুনি ।
-আপনাকে রোজ জল ঢালতে হবে ?
-কোথায় ? তোমার বাবার বাগানে ?
-উহু ...শিকড়ে ।
-গাছের ?
-উহু ...আমার ''ইন্দ্রিয় মানচিত্রের গভীর শিকড়ে ... '

বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ছয়



পুরনো অন্ধকার ভয়ের বিষাক্ত কৌতূহল ,
আমি ডুব দেই আবারো মজা পুকুরে ।
দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে আমার ভুল হয়
আরও একবার, আজ । আর অনুক্ত রাগে
গরম চায়ে ঝলসে ফেললে তুমি
মুখগহ্বর তোমার । নির্বাক প্রহসনের উত্তাপে
তুমি মরীচিকা দেখেছিলে কিনা জানি না ...
তবে যাকে দেখেছ সে আমি নই
আর আমিও দেখেছি যাদের সে
তুমি বা তোমরা নও ।
কায়ায় কায়ায় মায়ার ফাঁদ ,
আলোও দেখায় কিছু ভুল ;
তাই কেউ হতে চায় পরগাছারও পরগাছা ।
আর ক্ষুব্ধ শূন্য ভূমি খা খা করে চৈত্রের খরতাপে ।
তার অন্তর্গত অভিযোগ ,'' আমি তোমাকে বৃক্ষ
করতে পারি, তবে কেন হতে চাওয়া পরগাছা ! ''
দ্বিতীয় দৃশ্যপটে হাসি আর অব্যক্ত চাওয়ার অভিনয় ,
যা চেয়েছি তা বুঝাই নি,
যা বুঝিয়েছি তা চাইনি ... আমার বেলা বয়ে গেল
আত্মযুক্তির খণ্ডনে ... তবু সে নিস্পৃহতা !
আমার হাত তাই সরে আসে আমার প্রাক-অনুমানে ।
তবু শূন্য থেকে শুরু করে আসা হবে ফিরে আরও একবার ।
তখন আমার আকাশ কে জলে ভিজালে হয়ত আর নীল রং উঠবে না ।
আর শেষ ঘণ্টায় নয় - ছয়ের খেলা থেকে
পড়লামই বা আমি বা তোমাদের কেউ একজন বাদ !

শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

wrong রঙ আর রঙ্গমঞ্চ



জলছবির কালো রং হচ্ছিল ধীরে ধীরে ফিকে
আর তার মৃদু মন্থর শূন্যতা ভরিয়ে দিচ্ছিল
অর্বাচীন ফ্যাকাসে ভাব বা অনিন্দ্য আলোর রং ।
রোজ সকালে স্কেলেটনের ভিতর থেকে ছিটকে আসা
ধুলোর রং সিঁড়িতে গড়াগড়ি খায়
আধোআধো আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ।
মাঝে মাঝে চায়ের কাপে চিনির হেরফের
আর আলাদা করে এখন নজর কাড়ে না ।
প্রতিদিনের চেনা চায়ের কাপে চায়ের রং এখন একটাই
হাতের অভ্যস্ততায় লালিত সেলফোনটির রিংটোনের মতই একঘেয়ে
আর তামাটে ললাট ক্লান্তিতে স্পর্শ করে আকাশের নীল মায়া ...
যা প্রতি গোধূলিবেলায় সাজে রক্তাক্ত হৃদয়ের আগুন রঙে ।

শেষ বিকেলের গল্প



কোন এক বিগত সন্ধ্যায় বেলাভূমিতে লিখেছিলাম আমার প্রথম গল্প
সেদিনের প্রাক-সন্ধ্যার এক সমুদ্র স্রোত ধুইয়ে দিয়ে গেল তা,
আর রেখে গেল একটি অদ্ভুত নীল শঙ্খ !

আমার নিউরনের সমস্ত অনুরণন, আমার প্রথম উপার্জন,বিগত সব সঞ্চয়
একত্র করেও সেই শঙ্খের বিনিময় হল না সমুদ্রের সাথে !

হয়ত আমি বণিক ছিলাম না আড় জন্মে , তাই এজন্মের প্রথম বাজারে
সেই নীল শঙ্খের বিনিময় আর আর আমার সাথে হল না !

তারপর বহুবছর আমি ফিরে যেতে চেয়েছি সমুদ্রে , শঙ্খের সেই নীল ডাক
প্রতিক্ষণ আমার নিউরনে আমার স্নায়ুতে আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে ,
আর অলব্ধ যন্ত্রণায় আমি আমার ভিতরে কাতরেছি !

এরপর,
সেই অভূতপূর্ব দুপুর ... আমার চারিধারের সমস্ত সজ্জার আর শয্যার
মাঝেই পেলাম সেই নীল শঙ্খের ডাক,
আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় বলে উঠল সে আসছে
আর,
তুমি এলে !

আমার প্রথম মৃত্যুর আগে তোমাকে নিস্তব্ধ দেখেছিলাম
আর দ্বিতীয় জন্মে তোমাকে দেখলাম মুখর,
তাই আমার ঠোঁটে আর ভাষা ফোটে না ,
তা যেন চৈত্রের দুপুরে চাতক পাখির মতই
অপলক তৃষ্ণায় থাকে একরাশ উত্তাপ নিয়ে বেঁচে !

সংখ্যারেখায় আমরা বাঁচি দুটো বিন্দুর মত অনিয়ত অধ্রুব নিত্যতায়
আমাদের মাঝের দুই সমকোণ শূন্য ছুঁই ছুঁই করেও
একটি ভগ্নাংশের বাধায় যেন শূন্যে নেমেও নামে না
সমাপতনের প্রাক- মুহূর্তেও সব অঙ্ক নামে বিচ্ছিন্ন পতনে !

আমার বিচ্ছিন্ন আবর্তন আজ টুকরো টুকরো করেই তোমায় ঘিরে,
যেখানে সব পৃথিবীর সমস্ত স্নায়বিক কেন্দ্র এসে মিশেছে
কিন্তু আমি প্রায়ই হারাই তোমার স্নায়ুর রেখা
বিচ্ছিন্ন ক্লান্ত অবসাদে !

আমি জানিনা তুমি উজ্জ্বল সূর্যের মত ধ্রুব না কি
ধ্রুবতারার মত উজ্জ্বল !
তবু আমি জানি আমার জগতের নিত্য আলো মেলে কোথায় ...
এটা ''শেষ বিকেলের গল্প'' ছিল না , কারণ এরপরও
রাতের আকাশে ধ্রবতারা জেগে থাকবে ...
থাকবে না কেবল অনির্ণেয় অন্তরক !

শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

বীক্ষণ প্রণালি



চোখ আমার একান্তই ব্যক্তিমালিকানাধীন বীক্ষণ যন্ত্র ...
লবণাক্ত অ্যাকুয়াস হিউমারের আধার , এই খুদে সমুদ্র দিয়েই
আমি মানুষ দেখি, দেখি সম্পর্ক ...
অণুবীক্ষণ তার পূর্ণতা পায় যাবতীয় আণবিক, পারমাণবিক ও
পরমানবিক পর্যবেক্ষণে । এই মানবীর মানবীয় চর্মচক্ষুতে
প্রতিদিন অজস্র অণু অনুরাগ আশ্রয় নেয় মানুষ আর সম্পর্ককে ঘিরে ...
দূরবীক্ষণ অদূর ও সুদূরের সুলভ ও দুর্লভকে কেবলি অকারণ বড় করে ,
তার সামান্য ''সু' ও অসামান্য অপরিমিতি নিয়ে মরীচিকাময় হয়ে উঠে ...
আর নভোবীক্ষণ আমাকে দেখায় মহাশূন্যের চিরায়ত আঁধারের বুকে
চরের মত জেগে থাকা নক্ষত্রের চিরদৃশ্যমান অস্পৃশ্য অধরা নৈকট্য ...
শেষটায় প্রায়ই হাত বাড়িয়ে ঠেকে শূন্য ,তাই মহাশূন্যের শূন্য অংকের
মালিকানা পেতে চেয়েছিলাম ।
অতঃপর বীক্ষণ যন্ত্রে চোখ রেখে দূরে চলে যাওয়া চরিত্রকে
কিছুতেই কাছের করে দেখতে চাই না ,
অনাদি মুহূর্তে দৃষ্টিহীনতা , ক্ষীণদৃষ্টি আর দৃষ্টিভ্রমের সব উপসর্গকে এড়িয়ে
একটি আগুনে পাথরকেই করেছি আমার চোখের মণি ,
তা আমার মানবীয় মনের অন্তর্দৃষ্টি ...যেখানে সতেজ থাকে
মানুষ, সম্পর্ক, সত্য, আলো ,অনুভূতি আর রুদ্র রৌদ্রের তেজোদ্দীপ্ত জ্যোতি ...