শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

পারস্পরিক অনস্তিত্বের গোলকধাঁধা Labyrinths of mutual nothingness



"ভরা বাদর, মাহ ভাদর ,
 শূন্য মন্দির মোর ।"



হারিয়েছে কি ?
হারিয়েছি কি বা !
যখন আমিহীন করার আয়োজন চড়া ,
সেই চূড়ায়  একদিন অবেলায় চূর্ণ বিচূর্ণ হয় ,
আমার স্বতঃস্ফূর্ততা ।
প্রিয় কথাগুলো আজ প্রিয়হীন, নিরুদ্দেশ ;
কথার শবযাত্রায় অনুসারী কেবল , আমার
সযতনে গড়া আখ্যানের প্রতি প্রত্যাখ্যান সমস্ত তোমার ।
দিবারাত্রির কাব্য ওবেলায় ফুরিয়েছে , গোলকধাঁধায়
বিস্তারের প্রদীপও তার সমস্ত সলতে পুড়িয়ে নিভেছে ।
তাই প্রতি আগমনী দিনে আমি খসড়া করি অভিনয়ের ।



খাপছাড়া আয়োজিত আলাপিতা , নিরুদ্দিষ্ট শব্দ হারা,
মুখোশী নাটকের অঙ্ক ; পারস্পরিক অনস্তিত্বের গোলকধাঁধায়
আমি আজ আমিহীন - তুমিহীনা , কুশের পুতুল ।

টুকরো কথা

যেদিন পৃথিবীর সমস্ত সংবিধান আমার কথাকে
ডেড ল্যাংগুয়েজ বলে সাব্যস্ত করবে,
তখন , আমার সমস্ত কথা কাগজ বেচা দরে বেচে দেবে ...
কেবলই বার্ধক্যে ভরা মূল্যহীন নচেৎ আমাকেও
তুলে দেওয়া হত ফেরিওয়ালার কাগজের ঝুড়িতে ...
যদি দাঁড়ি  কমার অভাবই তোমার না বোঝার কারণ
তবে বুঝে নাও যে তুমি কখনই বুঝ নি ...
এমন কি যেটুকু বলে দেওয়া সেটুকুও
মিইয়ে গেছে হাওয়াই মিঠাইয়ের মত তোমার ঠোঁটের ভেতর ...

সংশয়

দিনেরা এখন অনেক অভিযোজিত,
ওরা নিজেরা আর কাটে না ,
উল্টো কাঁচি নিয়ে আমাকে কাটতে বসে ।

কপালের ছোট টিপটিকে সরিয়ে
আমার জীবন ব্যথার মত কেন্দ্রীভূত হয়
আমার দ্বৈত দৃষ্টির কেন্দ্রে ।

গতকালের আর পরশু'র আমি কে বড্ড বোকা ভাবি ,
মহৎ দেখি , আবার নীচ দেখি । আমি আয়নায়
আমার কান্নার অসদ বিম্ব দেখে হাসি ,
আর অনুগত আয়নাও সাথে হাসে ।

আর আমাকে নিয়ে ,
আমার সংশয় জাগে আবার ঘুমিয়ে পড়ে ,
আমার বাহিরে ও ভেতরে ।

শূন্য চাওয়া

আমি চেয়েছি আজ ভীষণ ঝড় হোক , আকাশ মেঘলা হোক ;
যাতে ডুবে যায় রাতের চাঁদ , ঢাকা পড়ে সমস্ত তারা ,
আমি দেখতে চেয়েছি তোমার প্রিয় চাঁদ আর ভেনাসবিহীন রাতে
আমার মতই অন্ধকারকে তুমি কতটা কাছে আসার আহবান জানাও ।

আমি চেয়েছি কাঁটাময় গোলাপের পরিবর্তে ক্যাকটাস হতে ,
দেখতে চেয়েছি সৌন্দর্য আর সৌরভবিহীন হবার দোষে
তোমার বাগান থেকে আমার নির্বাসন হয় কি না !
তবু খরায় গোলাপ মরলেও অসুন্দর ক্যাকটাস
থাকবে তোমার অপেক্ষায় বেঁচে তার জীর্ণ প্রাণ নিয়ে ।

আমি চেয়েছি হারিয়ে যেয়ে কোথাও আমার
ন্যূন প্রয়োজনটুকু দেখতে । যেদিন সমগ্র পৃথিবী
তোলপাড় করে ঝড় হবে সেদিন আমার দরজায়
তোমার হাতের কড়া নাড়ানো শুনতে চাই
নির্ভরতার আশ্রয়ের খোঁজে ।
যেদিন সমগ্র পৃথিবী খরতাপে পুড়ে পানিশূন্য হবে
সেদিনও আমার কাছেই তোমার তৃষ্ণার সবটুকু
আর্জি আমি দেখে যেতে চাই চিরতরে
অভিমানে হারিয়ে যাবার আগেই ।


বুমেরাং

আজ ৭২ বছর ধরে বাইশে শ্রাবণে বা তার আগে-পরে বৃষ্টি ঠিক ঠিক হল ,
আর সেদিন আমার কাছের বন্ধু ফুল আমার জন্মদিন ভুলল , যেমন আমি
ভুলেছিলাম জলেরটা বা সত্যি করে বলতে জলকে বহির্ভূত আমার বর্তমান জীবনে
এটুকু আদিখ্যেতা না দেখানোকে আমি মেনে নিয়েছিলাম ।

উপদ্রব ভেবে বা কোন বিমুখতায় বা বিষণ্ণতায় যেমন
অনেক নিঃস্বার্থ রৌদ্রে আমার ছায়া পড়তে দিই নি ,
তেমনি অনেক আকুলতায় ,আকাঙ্ক্ষায় আমার
প্রিয় মানুষদের ছায়াও আমার রৌদ্র মাড়ায়নি ...
বুমেরাং - আমার থেকে মুক্তি পাওয়া বুমেরাং,
আবার পথ চিনে ফিরে আসে আমাতে ।

সেদিন আমার মেয়েকে গল্পের বই হাতে দেখে যখন জিজ্ঞেস করলাম,
"কি করছ ? পরীক্ষার পড়াগুলো ঠিক মত করেছ তো !"
তখন সেও যে "উফফ বিরক্তিকর" বলে রাগ দেখাল তাতে
আমার নিজেকে দেখলাম কুড়ি বছর আগে আর সেদিনের
মায়ের বুকে বেঁধা শেলটা আজ বিঁধল আমার বুকে ।
বুমেরাং - আমার থেকে মুক্তি পাওয়া বুমেরাং,
আবার পথ চিনে ফিরে আসে আমাতে ।

ইতিহাস তার পুনরাবৃত্তি ঘটায় , অতীত নয় ;
তোমার-আমার অতীত ইতিহাস নয়, চিরন্তন সত্য !


প্যারাডক্স -১

ভিতরে আজ অভূতপূর্ব অবসর ,
খুব সূক্ষ্ম ভাবে হেরে , স্থূল করে জেতার নয়;
বরং জিতে যাবার হাসি ।
আমার কল্পময়ী তৃতীয় ভুল ,
সাথে কুশলী কুশীলবের কৌশল ।

প্রহসনে প্রবচনে আমার মিথ্যা ,
পাটে পাটে ভাঁজ করা ; নেভা আলোর
অন্ধকারে ভাঙ্গা আয়নায় নিজেকে দেখা ,
অনুতাপে নয়, অহঙ্কারে নয় ,
চপল স্বাভাবিকতায় ।

প্যারাডক্স -২



আজ তোমাকে একটা মিথ্যা কবিতা শোনাই,

আমি বেহিসেবি সংখ্যাপ্রিয় মানুষ এক,
রঙের মাঝে বেগুনী আমার ভীষণ আদরের,
তেমনটা লাল-নীল নয় ।

প্রায় রাতগুলোতে বর্তমান আমি আলোর
বিন্দু খুঁজে অতীত নক্ষত্রদের চিনি ।
প্রবল হতে হতেই তারারা খসে পড়ে ,
আর আমি ওদের কুড়িয়ে রাখি আমার কাঁচ-ব্যাগে ।
যেসব দিনগুলোতে কৃষ্ণপক্ষ বা সূর্যগ্রহণ নেমে আসে,
আমি তখন ঝড়ে পড়া তারা বের করে
হাতের মুঠোয় জ্বালিয়ে দিই ।
আমার হাতে জ্বলে কংকালসার উদ্বাস্তু নক্ষত্র
আর চোখে রাতের আকাশের অতীত তারারা অদেখা ।

চিঠি


মন কে নাম মাত্র গুছিয়ে নিয়ে লেখা
আমার এই চিঠি ,চিঠির পাতায় পাতা
আমার নীল আঁচল আর কথার
ফাঁকে গুঁজে দেওয়া আমার ঘ্রাণ ।
শব্দ আমার , বিম্ব তোমার ;
কাটাকুটি আর রংচটা মাটির
পুতুলের কারবার ।

মিঠে কথাগুলো দিয়েছি তারায় সাজিয়ে,
আর কাঁচাপাকা অভিযোগ গুলো
রূপোর জলে ধুয়ে সোনার কাগজে
দিয়েছি মুড়িয়ে । সেই সাথে আধো
স্বপ্নগুলো বুনে দিয়েছি
তোমার-আমার স্পর্শে ...

এরপর চিঠির পরতে পরতে
দেখতে পাও কাকে ?
শব্দ না আমাকে ?


অনঘ




আমাকে একটা কাঁচি দিও , যাতে আমি
ভবিষ্যৎ ধারার সমস্ত হেলিক্যাল সিঁড়িগুলো
বিচ্ছিন্ন করতে পারি ।
আমার পরিতৃপ্তি , অজস্র ভুলময় পাপের
মধ্য দিয়ে তোমার আমাকে আবিষ্কার
করায় । আর সেদিন যেন আমার ধারণ
দু'হাতে না হয় ।
তারপর সহস্র সেকেন্ড পরও যখন
রূপান্তর শুরু না হয় , আমি দেখতে পাই ,
"কোথাও কেউ নেই ।"
যদি সমস্ত কথা বলা হয়ে যেত তবে
আমাকে কবিতার নামে কথা চালাতে হত না ।
আবার যখন রাত ভোর হবে , ভরদুপুরে
নিজেকে বড্ড বোকা মনে হবে , বিকালে
আমার অভিনয় চলবে আর সন্ধ্যায় সবাইকে
বিদেয় দিয়ে রাতের অন্ধকারে
আমি আমার হব।

মানুষেরা গেছে হারিয়ে


একদিন তুমি নক্ষত্র হবে ,
তখন আর সৌরদিনে বাঁধা পড়বে না তুমি ,
ঠাই নিবে আলোকবর্ষে ।

কালো কী ?
শরীর কী ?
অনুপস্থিতি কী ?
আমি উত্তর খুঁজি না , কারণ,
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে ;
আমার এবং আমার কাছে ।

আমার কুড়িয়ে রাখা সব তারা
গেছে শুকিয়ে ; তাই আর
আমি ভুল ঠিকানায় খোঁজ নেব না ;
মানুষেরা গেছে হারিয়ে ।

সন্দিগ্ধ সন্দিহান



আমার ভোর এসেছে কিন্তু
সকাল আসে নি । এই ,
আধো আধো নিঃসীম ছায়াবৃত্তে
আমার টুকরো টুকরো অন্তহীন
অপেক্ষা , শূন্যতা
অন্তর্বর্তী ।

স্বার্থ খুঁজে পাওয়া আমার সব অবস্থান
নিঃস্বার্থ । তবু অলি থেকে গলিতে তুমি
নিঃশব্দ কালো বেড়ালের টানটান মেজাজে
পিছু নেবেই । গন্ধটা তোমার নিজের ,
উন্মোচনের নেশায় তাকে নতুন কোন মানুষ
দেখতে পাও তুমি ।

আবার পথ শেষ হলে , আমি ফিরে যাই
পুরোনো দরজাতে ; তাতে যেন অন্তত
ফাঁক থাকে ভেতরের আলো আসবার ,
আমাকে ছুঁয়ে দেখার ।